কাঙ্ক্ষিত আইইএলটিএস স্কোর: ভয়, কৌশল ও ইংরেজির দক্ষতা

অভিজ্ঞতা বলে, বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই নিজেদের যোগ্যতার তুলনায় কম স্কোর পায়। তা মূলত আইইএলটিএস পরীক্ষা সামলানোর দক্ষতার অভাবে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে না পারার ব্যর্থতায়। আর পরীক্ষা সামলানোর দক্ষতা অর্জনে, প্রধানতম বাধার নাম হচ্ছে ভয়।
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষতা যাচাইয়ের যেকোনো পরীক্ষায় ভালো করার জন্য যে বিষয়ের দক্ষতা নির্ণয় করা হচ্ছে তাতে শুধু দক্ষ হলেই চলে না, তারই সঙ্গে পরীক্ষা মোকাবিলার নৈপুণ্য আয়ত্বে থাকতে হয়। এই ২ যোগ্যতার যথার্থ সংযোগ হলেই সেই পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া যায়। 

একই কথা আইইএলটিএস পরীক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু বাংলাদেশের আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণকারীদের পরীক্ষা মোকাবিলার নৈপুণ্য আয়ত্বে আনতে খুব একটা মনযোগ দিতে দেখা যায় না। এর একটি কারণ হতে পারে, ইংরেজির দক্ষতা অর্জনের প্রচেষ্টাতেই বেশিরভাগ প্রস্তুতি গ্রহণকারীর গলদঘর্ম অবস্থার মুখোমুখি হওয়া। তাদের কাছে সম্ভবত মনে হয়, আগে ইংরেজি ঠিক হোক, তাহলে এমনিতেই পরীক্ষায় ভালো করা যাবে। 

অভিজ্ঞতা বলে, বেশিরভাগ পরীক্ষার্থীই নিজেদের যোগ্যতার তুলনায় কম স্কোর পায়। তা মূলত আইইএলটিএস পরীক্ষা সামলানোর দক্ষতার অভাবে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে না পারার ব্যর্থতায়। আর পরীক্ষা সামলানোর দক্ষতা অর্জনে, প্রধানতম বাধার নাম হচ্ছে ভয়।

পরীক্ষাকেন্দ্রিক সার্বজনীন মনস্তাত্ত্বিক ভয়ের সঙ্গে আইইএলটিএস পরীক্ষায় যুক্ত হয়ে থাকে দীর্ঘমেয়াদী ইংরেজি কেন্দ্রিক ভয়। এই ভয় একদিকে যেমন ইংরেজির দক্ষতা অর্জনে প্রতিবন্ধকতার কাজ করে, অন্যদিকে যতটুকু যোগ্যতা অর্জিত হয় ততটুকুও পরীক্ষার দিন ভয়ের বাতাসে এদিক-ওদিক উড়ে চলে যায়, রেজাল্টে তার চিহ্ন থাকে না। 

ইংরেজি-কেন্দ্রিক এই ভয়ের পেছেন ঔপনিবেশিক প্রভাব থেকে শুরু করে ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা কিংবা পর্যাপ্ত সুযোগের অভাব অথবা ব্যক্তিগত গাফলতিসহ বহু কিছুকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়, কিন্তু সেই আলোচনা এখানটায় করা অপ্রয়োজনীয়। 

গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ইংরেজি কেন্দ্রিক ভয়, ভালো আইইএলটিএস স্কোর তোলার পথে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করে। তাই কাঙ্ক্ষিত স্কোর তুলে নিজেদের স্বপ্ন এবং লক্ষ্য পূরণ করতে চাইলে আইইএলটিএস প্রস্তুতি গ্রহণকারীদের এই ভয় কাটাতে হবে। 

এরই সঙ্গে, পরীক্ষা মোকাবিলার কৌশলগত যোগ্যতা অর্জনও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর মানে এই না, কৌশলগত যোগ্যতা, ইংরেজি দক্ষতার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বরং কৌশলগত যোগ্যতা এবং ইংরেজি দক্ষতা এই দুইয়ের ঠিকঠাক সংযোগ ঘটলেই আইইএলটিএস পরীক্ষায় ভালো স্কোর পাওয়া সম্ভব। 

কৌশলগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় কয়েকটি বিষয়ের একটি হচ্ছে প্রত্যেকটি মডিউলের প্রশ্নের ধরন বোঝা এবং কোন ধরনের প্রশ্ন কীভাবে সমাধান করতে হয় তা পূঙ্খানুপুঙ্খভাবে দখলে আনা। 

ধরন বোঝা এবং সমাধান আয়ত্ব করার বিষয়টি বোঝানোর জন্য পরীক্ষার্থীরা প্রায়শই যেই জিজ্ঞাসার উত্থাপন করে তার সাহায্য নেওয়া যাক- অনেকের মাঝে যেই জিজ্ঞাসা আছে, তা হলো, 'সবাই শুধু পরামর্শ দেয় চর্চা করতে, কিন্তু কী চর্চা করতে হবে আর কীভাবেই বা চর্চা করতে হবে?' 

চর্চা করতে গিয়ে অনেককেই দেখা যায় একের পর এক আসল পরীক্ষার আদলে তৈরি করা পরীক্ষা (মক) দিতে। যা আদতে খুব একটা কাজে দেয় না, যখন দেখা যায় প্রস্তুতি গ্রহণকারীদের প্রথম পরীক্ষা আর অষ্টম কিংবা নবম পরীক্ষার ফলাফলে উন্নতি সূচক আশানুরূপ কোন পার্থক্য নাই।  

প্রশ্নের ধরন বোঝা, সমাধান আয়ত্বে আনার কৌশল ও চর্চার বিষয়টি একত্রে মিলিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে আইইএলটিএস পরীক্ষার লিসেনিং মডিউলকে নেওয়া যাক। 

লিসেনিং পরীক্ষায় যেসব ধরনের প্রশ্ন আছে তার ভেতর একটি হলো এমসিকিউ বা নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন। বেশিরভাগ প্রস্তুতি গ্রহণকারীদের নিকট এই ধরনটি বেশ কঠিন মনে হয়। 

কেউ এই ধরনটিতে ভালো করার লক্ষ্যে চর্চার অংশ হিসেবে একের পর এক এমসিকিউ শুনে যেতে পারে। সমাধান মিলিয়ে তারপর দেখতে পারে কয়টা ভুল-ঠিক হলো। ভুলের কারণ না বুঝে কেউ যদি এভাবে শুনে শুনে একটা সময় সব বুঝতে পারবে এবং তখন সব উত্তর ঠিক হবে যাবে সেটা ভাবে, সেই ভাবনায় খুব একটা উন্নতি সম্ভব না। 

যা কিছুটা উন্নতি হয় সেটা বারংবার শুনতে শুনতে ব্রেনের এক প্রকারের অভ্যস্ততার দরুন। উক্ত প্রক্রিয়াতেও কার্যকরী উন্নতি যে সম্ভব না, তা না; নিশ্চিতভাবেই সম্ভব। তবে উক্ত প্রক্রিয়ায় উন্নতি অতি দীর্ঘ সময়ের দাবি রাখে। কিংবা যার দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে তার জন্য এমন চর্চা কার্যকরী হতে পারে। 

অল্প সময়ের ভেতর (তার মানে 'চটকদার' ৭ দিনে না) লিসেনিং মডিউলের এমসিকিউ ধরনে ভালো করার জন্য কৌশলগত যেই চর্চা করা দরকার তার অন্যতম একটি হচ্ছে, উত্তর হিসেবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সবগুলো অপশন যে বলে যাচ্ছে, সেখানে কোন অপশন কী বলছে, আর সেই বলার কোনটি প্রশ্নের সঙ্গে মিলছে সেটা বোঝার চেষ্টা করা। 

কৌশলগত দিকের সঙ্গে এখানেই প্রয়োজন পড়ছে প্রশ্ন আর অপশনে কী লেখা আছে এবং ভাষ্যকার যা বলছে তা বোঝার ইংরেজির দক্ষতা। 

উক্ত কৌশলের সঙ্গে আছে উত্তরের সম্ভাবনা থেকে অপশন বাতিল করার পদ্ধতি, নোট নেওয়াসহ আরও কিছু কৌশলের সমন্বয়। এই সমন্বয় নিয়ে সামনে কখনো আলোচনা করা যেতে পারে। 

এ ক্ষেত্রে প্রধানতম চর্চা হওয়া উচিত, কোনো উত্তর ভুল হলে সেটা কেন ভুল হলো তা বোঝার চেষ্টা করা এবং একই রকম ভুলের পুনরাবৃত্তি না করে ক্রমান্বয়ে অধিকতর ভালো করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা।  

ভয় কাটিয়ে কৌশলগত এবং ইংরেজি কেন্দ্রিক দক্ষতার দখল অর্জন এবং সেই দখলের প্রতিফলন আইইএলটিএস পরীক্ষার প্রত্যেকটি মডিউলে যদি ঘটানো সম্ভব হয়, তবেই দেখা মেলে ভালো স্কোরের। 

আখিউজ্জামান মেনন: আইইএলটিএস প্রশিক্ষক

Comments