বিদেশে কেন পড়তে যাবেন

শুধু একাডেমিক সাফল্য বা উচ্চপদস্থ চাকরি নয়, নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার উপায় করে দিতে পারে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার একটি সুযোগ।
ইলাস্ট্রেশন: শাহ আলম সৌরভ

বিসিএস বা সরকারি চাকরি যখন সোনার হরিণ পাওয়ার মতো কঠিন মনে হয়, ক্যারিয়ারে মোড় ঘোরাতে তখন অনেকে স্বপ্ন দেখে দেশের গণ্ডি পেরোনোর। শুধু একাডেমিক সাফল্য বা উচ্চপদস্থ চাকরি নয়, নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার উপায় করে দিতে পারে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার একটি সুযোগ। ভিন্ন স্থানে, ভিন্ন লোকালয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার আনন্দ উপলব্ধি করাতে পারে আরও নানা কিছু।

নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গঠন

দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে শিক্ষার্থীরা যেখানে পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, সেখানে বিদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্মোচন করে রেখেছে অবারিত সু্যোগ। বিশ্বসেরা শিক্ষকদের ভিন্ন শিক্ষণ কৌশলের সুবাদে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়, খুঁজে পাওয়া যায় ক্যারিয়ারের নতুন দিশা। বিদেশে অধ্যয়নের আরেকটি সুবিধা হলো অত্যাধুনিক রিসোর্সের পর্যাপ্ততা। বিশাল লাইব্রেরি, গবেষণাগার, ক্যারিয়ার সেন্টার সবকিছু দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ে আলাদা এবং উন্নতমানের। ফলে একজন শিক্ষার্থীর চিন্তন দক্ষতা ও সৃজনশীলতা নতুন ছাঁচে গড়ে উঠতে পারে অনায়াসে। 

ব্যক্তিক গুণাবলীর বহিঃপ্রকাশ  

অপরিচিত পরিবেশ, অপরিচিত মানুষের ভিড়ে পড়াশোনা করাটা একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, তেমনি উপভোগ্য হতে পারে। সহজভাবে বলতে গেলে, অপরিচিত শব্দটিই যদি নতুনত্বের মোড়কে সাজানো যায় তাহলে দ্রুতগতিতে ভয়-ভীতি কাটিয়ে ওঠা যায়। বিদেশে পড়ার সিদ্ধান্ত তখনই যৌক্তিক মনে হবে, যখন নিজের স্বাধীনতাকে উপভোগ করা যাবে। এটি শিক্ষার্থীর আত্নসচেতনতা, আত্নবিশ্বাসের মতো ব্যক্তিক গুণাবলীকে আরও মজবুত করে তুলবে। ভিন্ন পরিবেশের সঙ্গে নিজস্ব সত্ত্বার মেলবন্ধনে আত্ননির্ভরতাও ডানা মেলার সুযোগ পাবে। 

নিজ চোখে বিশ্বকে জানা

বইপত্রের পাতায় বিশ্বকে যতটা না জানা যায়, তার চেয়ে বেশি পরখ করা যায় নিজ চোখের দেখায়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বৈশ্বিক ঘটনা, যুক্তিতর্ক যাচাই করার সুযোগ পাওয়া যায় বিদেশে অধ্যয়ন যাত্রায়। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন কৃষ্টি, সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে সরাসরি মিথস্ক্রিয়ায় জানাশোনার পরিধি বিস্তৃত হয়। নিজ দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অঙ্গনের ভিত্তির মজবুত করার উপায়ও পাওয়া যায়। তাই তো প্রবাদে বলে, জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীন দেশ যেতে হলেও যাও।

ভ্রমণের সুযোগ 

নিজ দেশের বাইরে অন্য দেশ ভ্রমণের সুযোগ মেলে বিদেশে অধ্যয়নের মাধ্যমে। কিছু স্কলারশিপে ২/৩টি দেশে পড়ারও সুযোগ দেওয়া হয়। এছাড়া অধ্যয়নরত দেশ থেকেও অন্যত্র ভ্রমণ করা যায় ইচ্ছা হলেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও উইকেন্ড ট্রিপ বা শিক্ষাসফরে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য শহরে কিংবা ভিন্ন দেশে। এতে করে সেসব দেশের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, স্মৃতিস্তম্ভ, ধর্মীয় স্থান, জাদুঘর পরিদর্শন করা যায়। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আত্নীয়তাও তৈরি হয়ে যায় এ সুযোগে। 

অভিযোজন ক্ষমতা 

বিদেশে পড়ার সময় প্রায় প্রত্যেকেই অপরিচিত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। সেটা হতে পারে ভাষাগত, সংস্কৃতিগত কিংবা বাসস্থানের। এই বিষয়গুলো মানিয়ে নেয়ার মাধ্যমে নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ভিন্ন দেশের ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে আন্তঃসাংস্কৃতিক যোগাযোগে দক্ষ হওয়া যায়। এক দেশের ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গি অন্য দেশের ক্ষেত্রে কতটা যৌক্তিক তা জানার সুযোগ মেলে এটির মাধ্যমে। অর্থাৎ, বিদেশে অধ্যয়নের অভিজ্ঞতা অপরিচিত পরিবেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে যোগাযোগ দক্ষতা ছাড়াও ব্যক্তিক ও পেশাগত ক্ষেত্রে সহযোগী ভূমিকা রাখবে। 

ভাষা শেখা ও চর্চা করা

বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষা বা আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক শর্ত দেওয়া হয়, যাতে ইংরেজি ভাষায় অনর্গল যোগাযোগ করার দক্ষতা অর্জন করা যায়। বেশিরভাগ দেশে আঞ্চলিক ভাষায় যোগাযোগ করতে দেখা যায়, যেমন বাংলাদেশে বাংলা, ফ্রান্সে ফেঞ্চ, কোরিয়ায় কোরিয়ান ভাষা। ভিন্ন দেশের ভাষাভাষী মানুষের যোগাযোগ সহজতর করতে ইংরেজিকে আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ না হলেও ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থী বিদেশে পড়ার স্বপ্নের দেখা পেতে আইইএলটিএস পরীক্ষার বাঁধা পেরোয়। তাই বিদেশে পড়তে পারলে নতুন ভাষা শেখা যেমন হবে তেমনি ভাষার চর্চাও হবে। এ ছাড়া অধ্যয়নরত দেশের আঞ্চলিক ভাষা অনুশীলনের সুযোগও মিলবে। 

জানতে চাইলে ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন মিসিসিপিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মনিরা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে চাইলে প্রথমেই নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে এবং দেশে পড়াশোনা করার সময় থেকেই কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করার লক্ষ্যে চেষ্টা করতে হবে। ভিন্ন দেশে পড়তে চাইলে আগে থেকেই সে দেশের পরিবেশ, সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে এবং খাপ খাইয়ে নিতে পারবে কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'বাইরের দেশের পড়াশোনা নিঃসন্দেহে দেশের শিক্ষার ধরণ থেকে সবদিক থেকে উন্নত। আর এই উন্নত শিক্ষা অর্জনের জন্য কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতেই হবে। তবেই নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করা যাবে, লক্ষ্য পূরণের স্বপ্ন ছোঁয়া যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Khagrachhari violence: 3 dead, 4 sent to CMCH 'with bullet wounds'

Three indigenous people died of their injuries at a hospital in Khagrachhari yesterday and early today, hours after arson attacks and violence in the district

1h ago