ক্যারিয়ার

ক্যারিয়ারের উন্নতি চাইলে যেসব ভুল নয়

আপনি হয়তো আপনার পেশায় ভালো করছেন। কিন্তু এই অভ্যাসগুলোর কোনোটি যদি আপনার থাকে, তাহলে হয়তো অজান্তেই নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষতি করছেন।
ছবি: ফ্রিপিক

আপনি হয়তো আপনার পেশায় ভালো করছেন। কিন্তু এই অভ্যাসগুলোর কোনোটি যদি আপনার থাকে, তাহলে হয়তো অজান্তেই নিজের ক্যারিয়ারের ক্ষতি করছেন। 

কাজ ও জীবনকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা

আমরা যে চাকরিই করি না কেন, তার মূল লক্ষ্য বেশিরভাগ সময়ই কারও না কারও কোনো সমস্যার সমাধান করা। তাই অফিসেও সমস্যা সমাধান করার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। কারণে-অকারণে অভিযোগ না করে নিজেই সমস্যাটি সমাধান করুন। আপনি যদি বেশি অভিযোগ করেন, তাহলে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব দিতে চাইবেন না। 

পরিচ্ছন্ন না থাকা

সকালে সবারই অফিসে আসার তাড়া থাকে। তার মানে এই নয় যে আপনি দাঁত ব্রাশ বা গোসল করা ছাড়াই অফিসে চলে আসবেন। অসুস্থতা, ঠাণ্ডাসহ নানা কারণে অনেকেরই হয়তো প্রতিদিন গোসল করা সম্ভব হয় না, তবে আপনার শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে কি না, তা খুব ভালোভাবে লক্ষ্য রাখুন। মুখ বা শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালে সহকর্মীরা আপনার কাছে আসতে চাইবেন না। 

জবাবদিহিতার অভাব

নার্সিসিস্টদের অন্যতম প্রধান অভ্যাস হচ্ছে তারা নিজেদের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়। সহকর্মীরা হয়তো এরকম আচরণ দুই-একবার সহ্য করতে পারে, কিন্তু তারা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে যাবে যে আপনি কাজের না। ভুল হলে সেটি স্বীকার করুন, সেখান থেকে শিক্ষা নিন।  

দৃষ্টিকটু পোশাক পরা

অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন কর্মীদের পছন্দমতো পোশাক পরার সুযোগ দেয়। তবে তার মানে এই নয় যে, আপনি ফ্যাশনের নামে কাটা, ফাটা ও রঙিন জিন্স পরে অফিসে হাজির হবেন কিংবা এমন কোনো পোশাক পরবেন, যা অফিসের পরিবেশের সঙ্গে বেমানান। কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত পোশাক পরিধান করুন। এক জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৮০ ভাগ কর্মকর্তা মনে করেন কর্মীর পোশাক নির্বাচন তার পদোন্নতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। 

অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা

খাবার হোক কিংবা সুগন্ধি- অতিরিক্ত গন্ধ সহকর্মীদের বিরক্তির উদ্রেক করতে পারে। বেশি সুগন্ধি ব্যবহার করলে সহকর্মীরা হয়তো তীব্র গন্ধের কারণে আপনার কাছাকাছি আসতে অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন। তাই অফিসে তীব্র গন্ধযুক্ত সুগন্ধি পরিহার করুন। 

বেশি জনতুষ্টিমূলক আচরণ করা

সবাই আপনাকে দিয়ে যা করাতে চায়, তা বাদ দিয়ে আপনার ও আপনার পারফরম্যান্সের জন্য যা করা গুরুত্বপূর্ণ, সেটি করুন। মনে রাখবেন, আপনার দায়িত্বের জন্য বসের কাছে আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে। তখন কিন্তু দায়িত্বের বাইরে কি কি করেছেন, তা সবক্ষেত্রে হয়তো বিবেচনায় নেওয়া হবে না। তবে নিজের কাজের পাশাপাশি যথাসম্ভব অন্যদেরও সহায়তা করার মানসিকতা রাখুন। এটিও চরিত্রের একটি ইতিবাচক দিক। 

খুঁটিনাটি বিষয়ের দিকে মনোযোগ না দেওয়া

অলসতা কিংবা বড় বিষয়ের ওপর বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে আমরা অনেক সময় ছোটখাটো বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করি না। এটি আসলে ক্যারিয়ারে দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ধরুন- আপনি একটি লেখা পড়ছেন। লেখার মূলভাব ও শব্দচয়নের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে গ্রামারের দিকে খেয়াল দিলেন না। এতে পুরো লেখার মানটাই কমে যাবে। খুঁটিনাটি ভুল বা সমস্যা ধরতে পারাটা একটা বড় গুণ। 

সময়নিষ্ঠা না থাকা

আপনি যদি নিয়মিত অফিসে দেরি করে যান, তাহলে আপনার সম্পর্কে সহকর্মীদের একটি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। অফিসে নিয়মিত দেরি করে গেলে এটাই প্রমাণ হয় যে, আপনি কাজের প্রতি ততটা দায়বদ্ধ নন। কর্তৃপক্ষ তাদেরকেই প্রথমে ছাঁটাই করে, যাদের মধ্যে দায়বদ্ধতার অভাব দেখতে পায়।

বেশি বেশি 'দুঃখিত' বলা

বেশি বেশি 'আমি দুঃখিত' বলা থেকে বিরত থাকুন। যেখানে প্রয়োজন শুধু সেখানেই 'দুঃখিত' বলুন। অপ্রয়োজনে 'দুঃখিত' বললে মনে হবে আপনি আপনার মতামত বা কাজ সম্পর্কে দ্বিধায় ভুগছেন।  

শব্দচয়নে সতর্ক না থাকা

বলা হয় বুলেট আর মুখের কথা, একবার বের হলে আর ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার সময় শব্দচয়নে খুব সতর্ক থাকা উচিত। আপনি কীভাবে কথা বলছেন, তার ওপর আপনার ভাবমূর্তি নির্ভর করে। যা বলবেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলুন। এমন কোনো কথা বা শব্দ উচ্চারণ করবেন না, যা আপনার এবং অফিসের সঙ্গে বেমানান এবং আপনার ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। 

আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি 

যাদের আত্মবিশ্বাস আছে, মানুষ তাদেরকেই অনুসরণ করে। আপনার চলাফেরা ও আচরণেও আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলতে পারেন। দৃঢ়ভাবে হাত মেলান, পিঠ সোজা রেখে বসুন, কারও সঙ্গে কথা বলার সময় তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন, প্রাণচাঞ্চল্যের সঙ্গে কথা বলুন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চলুন। চকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নিয়োগদাতারা এসব গুণ খুঁজেন।  

দলবদ্ধভাবে কাজে অনীহা

এখন সারা দুনিয়া দলবদ্ধ কাজকে উৎসাহিত করছে। একা কাজ করে যা অর্জন করা যায়, দলবদ্ধভাবে তার চেয়ে অনেক বেশি অর্জন করা যায়। বসরাও দেখেন, কর্মীদের মধ্যে দলগত কাজ করার মানসিকতা আছে কি না এবং দলের সবার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব আছে কি না। কাজের বাইরেও দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তাদের সঙ্গে আড্ডা দিন। দলের সবার মধ্যে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক থাকলে কাজের সময়ও ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। 

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments