ওসমানী মেডিকেলে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি, ভোগান্তিতে রোগীরা

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে হয়রানির প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ও কর্মবিরতি আজও অব্যাহত আছে।
ওসমানী মেডেকেলের বাইরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। ছবি: শেখ নাসির

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসককে হয়রানির প্রতিবাদে গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ও কর্মবিরতি আজও অব্যাহত আছে।

আজ বুধবার শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বয়কট করেছেন।

শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা, ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। জরুরি বিভাগ ছাড়া শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা কোন ওয়ার্ডেই দায়িত্ব পালন করছেন না।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং মিড-লেভেল চিকিৎসকদের ওপর অনেক চাপ বাড়ছে।

গত রোববার হাসপাতালের নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে এক রোগীর দুই স্বজনকে পুলিশে দেওয়া হয়। এ ঘটনার জেরে সোমবার রাত ৮টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ২ শিক্ষার্থী রুদ্র নাথ ও নাইমুর রহমান ইমন আহত হন।

গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন ও কর্মবিরতি আজও অব্যাহত আছে। ছবি: শেখ নাসির

হামলার প্রতিবাদে সোমবার রাত ১০টা থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরাও কর্মবিরতি ঘোষণা করে আন্দোলনে যোগ দেন। সেদিন রাত ১টার দিকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা রাত ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করে। তবে পরদিন বিকেল পর্যন্ত তাদের দাবি অনুযায়ী হামলা ও হয়রানির ঘটনায় জড়িত মূল ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার না করায় মঙ্গলবার বিকেল ৫টা থেকে আবারও বিক্ষোভ কর্মসূচি ও কর্মবিরতি শুরু করেন তারা।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, 'শিক্ষার্থী ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের সাথে আলোচনা করেও আন্দোলন থেকে সরানো যাচ্ছে না। মূলত তারা ‍মূল আসামির গ্রেপ্তার দাবি করছেন। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছেন স্বাস্থ্যবিভাগের ঊর্ধ্বতনরা। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।'

অন্যতম আসামি আওয়ামী লীগ নেতার ভাতিজা

মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হয়রানির ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার অন্যতম আসামি মো. আব্দুল্লাহ সিলেট মহানগর আ. লীগের সহ-সভাপতি ও ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল খালিকের ভাতিজা।

শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বয়কট করেছেন। ছবি: শেখ নাসির

শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হয়রানির ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় আব্দুল্লাহকে নাম উল্লেখ করা একমাত্র আসামি এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় আব্দুল্লাহ দ্বিতীয় আসামি।

তবে এ বিষয়ে জানতে মহানগর আ. লীগের সহ-সভাপতি ও ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুল খালিকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফের দায়ের করা মামলায় আব্দুল্লাহ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও ৩/৪ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রশীদের দায়ের করা মামলায় আব্দুল্লাহ ছাড়াও আরও ৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিক সোমবার রাতে পুলিশ মোহিদ হাসান রাব্বি ও এহসান আহমেদ নামে ২ জনকে আটক করে। পরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, 'এ ‍দুটি মামলায় আসামি গ্রেপ্তারে এখনো কোন অগ্রগতি নেই। পুলিশ চেষ্টা করছে।'

Comments