‘লাঞ্চের পর আসুন’ এমন আচরণ বন্ধ করুন

হাসনাত আবদুল্লাহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহর প্রতিবাদ। ছবি: স্টার

দাপ্তরিক কাজের অব্যবস্থাপনা দ্রুত সমাধান ও সব সেবার আধুনিকায়নসহ ৮ দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হাসনাত আবদুল্লাহ।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন। তা বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে।

দাবিগুলো নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন স্মারকলিপি জমা দেন ওই শিক্ষার্থী।

হাসনাত আবদুল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য। তিনি একমত পোষণ করেছেন। এগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন।'

তার মতে, উপাচার্য ওই শিক্ষার্থীকে আরও জানিয়েছেন, প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক কাজগুলো ক্রমান্বয়ে আধুনিকায়নের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি দপ্তরের কাজ আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

হাসনাত আবদুল্লাহর ৮ দফা দাবি:

* শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধে এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে শিক্ষক-ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

* সব প্রশাসনিক কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটালাইজড করতে হবে।

* নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসগুলোর ভেতরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।

* প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিস সমূহের নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে দেওয়া সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেখাতে হবে।

* কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে।

* কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক-বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারগুলোর সহায়তা নিতে হবে।

* অফিস চলাকালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই জড়িত থাকতে পারবেন না। সে জন্য প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবগুলোয় স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে।

* কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালে প্রচারণা পরিবেশবান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যহানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার, লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।

উপাচার্যের হাতে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গতবছরই তার গৌরবময় শতবর্ষ পূর্ণ করেছে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় আজ ১০১তম বছরে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক জটিলতাজনিত হয়রানি কমেনি। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, হল অফিস ও বিভাগীয় অফিসের মধ্যে কাজের সমন্বয়হীনতার প্রবল অভিযোগ রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে এবং কর্মকর্তাদের গাফলতিতে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র হারানোর খবর শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই শোনা যায়। এটি ডিজিটাল যুগে সনাতনী নির্যাতনের নামান্তর।'

এতে আরও বলা হয়েছে, 'এছাড়াও রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও নিয়মানুবর্তিতায়ও ঘাটতি রয়েছে। তাদের কাজে দীর্ঘসূত্রিতাও আছে। কাজের ব্যাপারে তাদের অলসতা ও দায়মুক্তির খবর বিশ্ববিদ্যালয়ে "লাঞ্চের পর আসুন সুলভ" আচরণ হিসেবে সর্বজনবিদিত। এ ছাড়াও, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস টাইমে নির্বাচনী প্রচারণাসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। অনেকে অফিস টাইমে নিজস্ব ব্যবসায়ও সময় দেন। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে তাদের আচরণ মনিব-গোলাম পর্যায়ের।'

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

5h ago