জাবির ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায়ও টাকার ‘ভাগ-বাঁটোয়ারা’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয় সেখানে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকেও বড় অংকের সম্মানি নিয়েছেন শিক্ষকেরা।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। তবে দ্য ডেইলি স্টারে এ বছরের মার্চে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

যদিও এই বছর তহবিলে ৪০ শতাংশ টাকা জমা হয়েছে কি না সে বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি।

নথিতে দেখা যায়, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম পেয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা।

এছাড়া কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে উপাচার্য পেয়েছেন আরও ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।

সব মিলিয়ে উপাচার্য পেয়েছেন ২ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে ১ লাখ ৩৮ হাজার ও ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে আরও ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা পেয়েছেন।

সব মিলিয়ে অধ্যাপক নুরুল আলম পেয়েছেন ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) শেখ মো. মনজুরুল হকও সমপরিমাণ অর্থ ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে নিয়েছেন। তিনি ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী হিসেবে ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা পেয়েছেন।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে দুই জনকে দেখিয়ে অতিরিক্ত ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেনকে দেওয়া হয়েছে 'সম্মান রক্ষার্থে'।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষও নথি অনুযায়ী ২ লাখ ৮১ হাজার টাকা নিয়েছেন ওই শিক্ষাবর্ষে।

এছাড়া নথি অনুসারে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের (উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয় ও কোষাধ্যক্ষ) ৩ হাজার টাকা করে ৪৬ শিফটের জন্য সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা করে এবং জাহাঙ্গীরনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকদের ১ হাজার ৫০০ টাকা হারে ৪৬ শিফটের জন্য সর্বোচ্চ ৬৯ হাজার টাকা করে প্রদান করার আদেশ আছে।

অর্থাৎ ভর্তিপরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত ও নিরাপত্তা শাখায় কাজ করা শিক্ষকরা ওই শিক্ষাবর্ষে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা করে পেয়েছেন।

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'আমরা অতিরিক্ত কাজ করলে তো কোনো সম্মানী নিই না। সে বিষয়ে তো কেউ কখনো জানতে চায় না। আর একই পদবীর দুই জনের ভেতর টাকা ভাগ-বাটোয়ারার এই নিয়ম আগে থেকেই চলে আসছে। সাবেক উপ-উপাচার্য কয়েকটি সভায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাকে টাকা ভাগ করে দেওয়া অসম্মানজনক হয়ে যায়।'

এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ বলেন, 'ইউজিসি তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তবে শুধু ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের না হয়ে সামগ্রিকভাবে সকল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। ভর্তি ফরমের দাম কমিয়ে এনে ভর্তি পরীক্ষার টাকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে এই টাকা ব্যয় করা উচিত।'

২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ নিয়ে তদন্তের বিষয়ে ইউজিসি সদস্য আবু তাহের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা শুধুমাত্র ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে নিয়ে তদন্ত করেছি কারণ আমাদের শুধু এটার জন্যই বলা হয়েছে। আগে বা পরের বিষয়ে নির্দেশনা না থাকায় তদন্ত করতে পারিনি।'

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago