হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়: ৭ বছর আগে খোলা বিভাগে নেই স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ-ল্যাব

হাজি-দানেশ-বিশ্ববিদ্যালয়
স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবরেটরির দাবিতে আন্দোলন করছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাবরেটরি সুবিধার অভাবে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে।

এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ। এ বিভাগে অন্তত ২৫০ শিক্ষার্থী থাকলেও, নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু করে। সে বছর ৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।

তবে শুরু থেকেই বিভাগটির কোনো শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব ছিল না এবং এখনো নেই।

বিভাগের জন্য স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ ও ল্যাব সুবিধার দাবিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ৭ দিনের আল্টিমেটামও দেন।

হাজি-দানেশ-বিশ্ববিদ্যালয়
দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

কিন্তু, এতে সমাধান তো হয়নি, হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, এর আগেও আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানালেও, গত ৭ বছরে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

শিক্ষার্থীরা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, ২০১৬ সালের প্রথম ব্যাচটি কোর্স সম্পন্ন করেছে স্থায়ী শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষাগার সুবিধা ছাড়াই।

 ২০১৯ সালের শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের ক্লাস একাডেমিক ভবনের একটি কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। ওই শ্রেণিকক্ষটি অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা দখল করে রাখে প্রায়ই। তাদের ক্লাস শেষ হওয়ার ওপর নির্ভর করে যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ক্লাস।

এক শিক্ষার্থী বলেন, 'শ্রেণিকক্ষের সংকটের কারণে ক্লাসের সময়সূচি ঠিক রাখা কঠিন। ক্লাসরুম খালি পেতে আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। খালি পেলে শিক্ষককে জানাই। তখন তিনি এসে ক্লাস নেন।'

ভবনে কক্ষ খালি পেলে যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ক্লাস হয়, আর না পাওয়া গেলে সেদিন ক্লাস হয় না বলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন।

অপর শিক্ষার্থী জানান, অনেক সময় টিএসসির মাঠে তাদের ক্লাস হয়। জায়গাটি ক্লাসের অনুকূল নয়।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অনেক সময় যদিও ৫ তলায় ক্লাসরুম ফাঁকা পাওয়া যায়, কিন্তু অনেক শিক্ষক তাদের শারীরিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে ৫ তলায় যেতে চান না।

আরেকটি অভিযোগ, ল্যাব না থাকায় ২০১৬ সালে যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত এখানে কোনো ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি। যন্ত্রপাতি কেনা হলেও, এখন পর্যন্ত সেগুলোর ব্যবহার হয়নি।

'এমন অবস্থা জানলে আমি এখানে ভর্তি হতাম না,' যোগ করেন এক শিক্ষার্থী।

সংশ্লিষ্টরা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, এই বিভাগে অন্তত ১৫ শিক্ষকের প্রয়োজন হলেও, শিক্ষক আছেন ৭ জন। তাদের মধ্যে ২ জন পিএইচডির জন্য বিদেশে আছেন।

'বছর দুয়েক আগে পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল' উল্লেখ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, '৫টি ব্যাচের ২৫০ শিক্ষার্থীকে পাঠদানের জন্য বিভাগে শিক্ষক ছিলেন মাত্র ২ জন।'

এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিকটস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব সুবিধা ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এতে খরচ বেশি হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।'

'আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ক্যাম্পাসে নবনির্মিত ১০ তলা ভবনে একটি কক্ষ আমাদের বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। এখনো এ বিষয়ে কেউ আশ্বস্ত করেনি,' বলেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদার ভিত্তিতে ২০১৬ সালে বিভাগটি খোলা হয়েছিল। নানান কারণে সমস্যাটি রয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট আন্তরিক।'

'যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের জন্য ক্লাসরুম ও ল্যাব সুবিধা শিগগির দেওয়া হবে,' যোগ করেন তিনি।

প্রক্টর আরও বলেন, 'ল্যাবের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। বাকিগুলো শিগগির কেনা হবে।'

উপাচার্য অধ্যাপক ডা. এম কামরুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই সংকট গত ৭ বছর ধরে চলছে। খুব শিগগির এর সমাধান করা হবে। শিক্ষক সংকটেরও সমাধান হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Smaller in size, larger in intent

Finance Adviser Salehuddin Ahmed has offered both empathy and arithmetic in his budget speech, laying out a vision that puts people, not just projects, at the heart of economic policy.

10h ago