রাবি

‘গুলি চালানো বেআইনি, পুলিশের ভূমিকার তদন্ত দরকার’

সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বিনোদপুর এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হন অন্তত ২০ জন রাবি শিক্ষার্থী। ছবি: স্টার

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ২০ জনসহ প্রায় ৫০ জন রাবি শিক্ষার্থী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনকে ভর্তি করা হয়েছে আইসিইউতে।

গতকালের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়ে পুলিশ। এতে ২০ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন।

গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মো. রাকিবের মাথায় ও গলায় গুলি লেগে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে।

রামেক হাসপাতাল কর্মীরা জানান, গতকালের এই সহিংসতার ঘটনায় আহত প্রায় ৮৬ জনকে তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জন রাবি শিক্ষার্থী, ২ জন পুলিশ এবং বাকিদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারী রয়েছেন।

রামেক হাসপাতালে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সারা শরীরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখা গেছে।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মশিউর রহমান মিহাদের (২৩) শরীরে অন্তত ৩০টি গুলি লেগেছে।

মিহাদ বলেন, 'বাকি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিনোদপুর গেটের ভেতরে জড়ো হওয়ার সময় কোনো ঘোষণা ছাড়াই পুলিশ গুলি চালায়।'

গুলিবিদ্ধ হয়ে মিহাদ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ আশিক মাহমুদ রয়েছেন মিহাদের পাশের শয্যাতেই।

তিনি বলেন, 'পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর আগে কোনো ধরনের হুশিয়ারি দেয়নি।'

আইন বিভাগের ৩ শিক্ষার্থীর চোখেও গুলি লেগেছে।

তাদের মধ্যে একজন বলেন, 'কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ গুলি চালায়।'

হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম জানান, তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং কারো অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয়। আহতরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

রাবি ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, 'ক্যাম্পাসের নিয়ম অনুযায়ী ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এখানে পুলিশের ভূমিকা তদন্ত করা দরকার।'

আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোকে 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন ছাড়া ও বেআইনি' বলে আখ্যা দিয়েছে রাবি কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে রাবির প্রো-ভিসি অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম জানান, সহিংসতার বিষয়ে তারা সব পক্ষের সঙ্গে বসবেন।

তিনি বলেন, 'একটি তুচ্ছ বিষয় এত গুরুতর কেন হলো তা আমরা খুঁজে বের করব।'

আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তারা প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা দেন। স্থানীয় লোকজনের হামলা ও পুলিশের রাবার বুলেট নিক্ষেপের প্রতিবাদে এ সময় প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করছেন। মিছিলে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান জানান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো হয়নি।

তিনি বলেন, 'পুলিশ শুধুমাত্র টিয়ারশেল ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কিন্তু কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ দোকানে আগুন ধরিয়ে দিলে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে বাধ্য হয়।'

তিনি বলেন, 'পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে সহিংসতার মোকাবিলা করেছে। তা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারতো।'

গতকাল রাতে তিনি বলেছিলেন, 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কিছু টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। তাই সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে।'

গতকাল বিকেলে ভাড়া কম দেওয়াকে কেন্দ্র করে একটি বাসের চালক ও হেলপারকে পেটান শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিনোদপুর বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘর্ষে বেশ কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এরমধ্যে বিনোদপুর পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে কারা এই আগুন দিয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক স্থানীয় এলাকাবাসী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে ১৫০ থেকে ২০০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম।

ঘটনাস্থল থেকে দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Admin in favour BNP in many areas, polls not possible in this situation: Nahid

For a level playing field, a neutral administration, bureaucracy, and police must be ensured

6m ago