ঢাবি শিক্ষার্থীকে মারধর, ‘প্রলয় গ্যাং’ সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সামনে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার মা সাদিয়া আফরোজ খান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সামনে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তার মা সাদিয়া আফরোজ খান।

আজ রোববার সন্ধ্যায় ১৯ শিক্ষার্থীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দেন তিনি।

অভিযোগে নাম আসা শিক্ষার্থীরা হলেন, শাস্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের তবারক মিয়া, আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের ফয়সাল আহম্মেদ সাকিব ও ফারহান লাবিব, দর্শন বিভাগের অর্ণব খান, মার্কেটিং বিভাগের মো. শোভন, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের নাঈমুর রহমান দুর্জয়, রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সাদ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের সিফরাত সাহিল, সমাজকল্যাণ বিভাগের হেদায়েত নূর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাহিন মনোয়ার, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের সাদমান তাওহিদ বর্ষণ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ সাইদ, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের আবু রায়হান, লোক প্রশাসন বিভাগের প্রত্যয় সাহা, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আব্দুল্লাহ আল আরিফ, কবি জসিম উদ্দিন হলের রহমান জিয়া, চাইনিজ ল্যাংগুয়েজ বিভাগের ফেরদৌস আলম ইমন, ফ্যাইন্যান্স বিভাগের মোশারফ হোসেন এবং জগন্নাথ হলের জয় বিশ্বাস। এরা সবাই ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযোগে সাদিয়া আফরোজ খান জানান, গতকাল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে তার ছেলে জোবায়েরসহ তার ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা ইফতার করছিলেন। হঠাৎ একটি প্রাইভেটকার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের গায়ে কাঁদা ছেটায়। সেসময় গাড়ির ভেতর উচ্চস্বরে গান বাজছিল এবং ডাক দেওয়ার পরও গাড়িটি থামেনি। পরে জোবায়ের তার ৪ বন্ধুকে নিয়ে কার্জন হলের দিকে যাওয়ার সময় ৩ নেতার মাজারের সামনে ওই গাড়িটি দেখে চিনতে পারে এবং জিজ্ঞেস করে যে, এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিল কেন। সেসময় গাড়ি থেকে ৫ জন নামলে জোবায়ের ও তার বন্ধুরা দেখে যে, তারা ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী। সেসময় জোবায়ের ও তার বন্ধুদের সঙ্গে ওই ৫ জনের কাটাকাটি হয়। পরে জোবায়ের জসিমউদ্দিন হলের সামনে চলে এলে অপরিচিত মোবাইল নম্বর থেকে সাহিল নামের একজন কল দিয়ে তার অবস্থান জানতে চায়। জোবায়ের তার অবস্থান জানালে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে অভিযুক্তরা তাকে স্ট্যাম্প, লোহার রড, চামড়ার বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। তারা স্ট্যাম্প দিয়ে জোবায়েরের মাথায় আঘাত করে, যার ফলে তার মাথার বাম পাশে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়। তারা বাঁশের লাঠি দিয়ে সজোরে জোবায়েরের বাম চোখে আঘাত করে, যার ফলে তার বাম চোখ রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়। এ ছাড়াও, তারা অতর্কিতভাবে জোবায়েরকে মারধর করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে থেঁতলানো জখম করে এবং মারধরে জোবায়েরের ডান পায়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে যায়, পিঠে আঘাত পায়, চোয়ালে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সেসময় ২ বন্ধু জোবায়েরকে বাঁচাতে গেলে তাদেরও এলোপাতাড়ি মারধর এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। এসময় জোবায়ের জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে বন্ধুরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায়। 

এই অভিযোগ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাবির এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় তার মায়ের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তদন্তের পর অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেব কি না ভেবে দেখব।'

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তরা সবাই 'প্রলয়' নামে একটি গ্যাংয়ের সদস্য। জোবায়েরকে মারধরের পর প্রলয় গ্যাংয়ের কর্মকাণ্ড নিয়ে কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাত যত গভীর হয়, প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যরা ততই সক্রিয় হন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশুপার্কসংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত মাদক সেবন করেন এই গ্যাংয়ের সদস্যরা। ক্যাম্পাসে তারা সংঘবদ্ধভাবে চলাফেরা করেন। একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে তারা ঐক্যবদ্ধ। প্রতি রাতে ঢাবির শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তারা আড্ডায় মিলিত হন। সেখানে তোলা ছবিও তারা ফেসবুকে পোস্ট করেন।

এ গ্যাং বেশ কিছুদিন ধরেই গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাস ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরে বেড়ায়। রাতের ক্যাম্পাসে বহিরাগত ব্যক্তিদের ছিনতাই-চাঁদাবাজি, হেনস্তাসহ নানা অপকর্ম করে বেড়ান সংঘবদ্ধ এ গ্যাংয়ের সদস্যরা। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন তাদের কেউ কেউ।

জোবায়েরকে এই গ্যাং সদস্যদের মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Chief Adviser Muhammad Yunus

Chief Adviser Yunus's UNGA trip a critical turning point

Now is the best chance for Bangladesh to strengthen international cooperation.

10h ago