বরিশাল মেডিকেলে ছাত্রী নির্যাতন, হামলার শিকার সাংবাদিকেরা

ছবি: সংগৃহীত

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের হলে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে হলের দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। ওই ছাত্রীকে গভীর রাতে দুদফায় ডেকে হলের একটি কক্ষে  নিয়ে দীর্ঘ সময়  দাঁড় করিয়ে রেখে, গালাগাল, হুমকি এবং মোবাইল ফোন নিয়ে তল্লাশি করার পর তিনি আতঙ্কে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

গত বুধবার মেডিকেল কলেজের ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের সূত্র জানায়, ডেন্টাল সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন প্রভা ও নীলিমা হোসেন জুঁইয়ের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটে। তারা দুজনই ছাত্রলীগের নেতা বলে দাবি করেন।

র‍্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্রী আজ শনিবার অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই ছাত্রলীগের নেতা পরিচয়ে হলের নেতৃত্ব দেওয়া ওই ছাত্রীরা তাকে এবং তার রুমমেটকে নানাভাবে গালাগাল দিয়ে মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। এতে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে যাতে এ ধরনের আচরণ না করা হয় সে জন্য ওই ছাত্রীদের ঘনিষ্ঠ সহপাঠী সামিয়া সুলতানাকে অনুরোধ করেছিলেন তারা। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। ওই নেতারা খেপে যান। এর জের ধরে গত বুধবার রাত ১১ টার দিকে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী ও তার রুমমেটকে হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে  ডেকে নেওয়া হয়। এরপর তাদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে সামিয়া সুলতানার কাছে কেন  নালিশ করা হয়েছে এ জন্য  কৈফিয়ত চান এবং  গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তাদের মুঠোফোন নিয়ে তা তল্লাশি করার জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আধা ঘন্টা পর  নানাভাবে শাসিয়ে দুই ছাত্রীকে তাদের কক্ষে  পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কক্ষে ফিরে ভীতসন্ত্রস্ত এক ছাত্রী বিষয়টি সামিয়া সুলতানাকে জানান। সামিয়া সুলতানা বিষয়টি শোনার পর ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে ফোন করে উষ্মা প্রকাশ করলে ছাত্রলীগের নেতারা ক্ষিপ্ত হন এবং  পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়া ওই ছাত্রীকে ডেকে নেন।

ওই ছাত্রী জানান, রাত ১২টার দিকে  দ্বিতীয় দফায় ডেকে নিয়ে  দুই ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখে আবারও গালাগাল ও ভয়ভীতি দেখানো হয় তাকে। এসময় ওই ছাত্রী কান্নাকাটি করেন এবং তিনি অসুস্থতার কথা জানান। দুই ঘণ্টা মানসিক  নির্যাতনে তিনি অসুস্থবোধ করলে আরেক ছাত্রীর মাধমে ওই ছাত্রীকে তার কক্ষে পাঠানো হয়। কক্ষে ফেরার পর পরই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে তাকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এদিকে আজ দুপুরে বিষয়টি  নিয়ে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রীদের বক্তব্য নেন। এসময় বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকরা সেখানে সংবাদ সংগ্রহে গেলে কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রথমে উচ্চবাচ্য এবং পরে লাঞ্ছিত করেন বলে ওই সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেন। এসময় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা স্ট্যান্ড ভাঙচুর করা হয়। 

ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া দুই ছাত্রী ফাহমিদা রওশন প্রভা ও নীলিমা হোসেন জুঁইয়ের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকবার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তারা ধরেননি।

এ ঘটনা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ নাজিমুল হক। তিনি জানান, সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। সমাধানের চেষ্টা করছি। ছাত্রীদের নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি  খুব সামান্য ঘটনা। বড় কিছু না। তবে আমরা বিষয়টি দেখছি।

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

8h ago