ক্যাম্পাস

কথায় কথায় মারধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ‘অত্যাচারের’ বর্ণনা দিলেন শিক্ষার্থীরা

সবাইকে দিয়ে হাত-পা টিপিয়ে নিতেন সজল। খাওয়ার পর হাত ধুইয়ে দিতে হতো। ব্রাশ করে দিত ছেলেরা।
কথায় কথায় মারধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ‘অত্যাচারের’ বর্ণনা দিলেন শিক্ষার্থীরা
সজল ঘোষ | ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র না হয়েও থাকতেন কলেজের হোস্টেলে, নিয়ন্ত্রণ করতেন কলেজের অনেক কিছু। পান থেকে চুন খসলেই শিক্ষার্থীদের মারধর করতেন। ছুরি-চাকু দেখিয়ে ভয় দেখানোসহ আরও অনেক অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।

রাজনৈতিক পরিচয়ে বগুড়ায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) ঘাঁটি গাড়া এই সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নাম সজল ঘোষ। তিনি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে সজল আইএইচটি হোস্টেলের মিল ম্যানেজার ও এক শিক্ষার্থীকে মারধর করলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

কথায় কথায় মারধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ‘অত্যাচারের’ বর্ণনা দিলেন শিক্ষার্থীরা
বগুড়ায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) সামনে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা | ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল লাগোয়া আইএইচটি ক্যাম্পাসের সামনে জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ করেন। এ সময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পরে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে চলে যান।

তাদের অভিযোগ, কোনো পদ না থাকলেও রাজনৈতিক পরিচয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যাচার করে আসছেন সজল।

আইএইচটি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে ক্যাম্পাস ছেড়ে যান সজল ঘোষ। এর পরে ঘটনাস্থলে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সে সময় সজলের বিচার দাবিতে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন।

কথায় কথায় মারধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ‘অত্যাচারের’ বর্ণনা দিলেন শিক্ষার্থীরা
বগুড়ায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) সামনে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা | ছবি: সংগৃহীত

আইএইচটির তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নদী শিকদার বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠানের ছেলেদের সবার গায়ে হাত তুলেছেন এই সজল। খুব সামান্য কারণেই অত্যাচার করেন এই ছাত্রলীগ নেতা।'

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফিরোজ আহমেদ বলেন, 'সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে পা টিপিয়ে নিতেন এই নেতা। শিক্ষার্থী না হয়েও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে থাকতেন হোস্টেলের ২১৮ নম্বর রুমে।'

মুশফিকুর রহিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'সবাইকে দিয়ে হাত-পা টিপিয়ে নিতেন সজল, আমিও টিপেছি। খাওয়ার পর হাত ধুইয়ে দিতে হতো। ব্রাশ করে দিত ছেলেরা। কলেজ অধ্যক্ষ সব কিছু জানেন কিন্তু তিনি সজল ঘোষকে প্রশ্রয় দিতেন।'

একাধিক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, কেউ প্রতিবাদ করলে মারধর করতেন সজল। এমনকি চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকিও দিতেন তিনি।

কথায় কথায় মারধর, সাবেক ছাত্রলীগ নেতার ‘অত্যাচারের’ বর্ণনা দিলেন শিক্ষার্থীরা
বগুড়ায় ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) সামনে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা | ছবি: সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জাফর সিদ্দিক। তিনি বলেন, 'আমাদের খাবার খরচ বাবদ হোস্টেল প্রতি মাসে ২ হাজার ২০০ টাকা নেয় আর গ্যাস বিল দিতে হয় ১৫০ টাকা। অথচ ওরা আলু ঘাঁটি ছাড়া আর কিছু খাওয়ায় না। এসব টাকা থাকে সজলের কাছে। সে এই টাকা দিয়ে জুয়া খেলে, মদ খায়। তার রুমে গেলে এখনো মদের বোতল পাওয়া যাবে।'

সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল মাহিদুল ইসলাম জয়। সজলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আল মাহিদুল ইসলাম জয় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সজল জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। বর্তমানে সে ছাত্রলীগের কেউ না। সজল যদি অন্যায় করে থাকে তাহলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকব। সে যেন আর এখানে ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবে জেলা ছাত্রলীগ।'

আইএইচটি সূত্র অনুসারে, ১৯৭৮ সালে শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য দুটি আবাসিক হল চালু হয়। এর মধ্যে একটি ছাত্রদের, অন্যটি ছাত্রীদের। প্রথমে এটি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতো। সে সময় ম্যাটসের কার্যক্রমের জন্য এখানে কিছু ভবন নির্মাণ করা হয়।

১৯৯২ সালে থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরে মেডিকেল কলেজ নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হলে আইএসটির কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এখানে প্রায় ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, সজলের বন্ধু-বান্ধব ছাড়া ক্যাম্পাসের মাঠে কেউ খেলাধুলা করতে পারে না। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বনভোজনের কথা বলে চাঁদা নেন সজল। হলের ডাইনিং নিয়ন্ত্রণও তার হাতে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আমায়াত-উল-হাসিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সজল হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে আমি জানি না। বনভোজনের নামে টাকা নিয়েছে এটাও আমি জানি না। শিক্ষার্থীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমি ব্যবস্থা নিতাম।'

এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ব্যক্তির কাছে জিম্মি হবে এটা কখনই কাম্য না। আইএইচটির শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন; এখানে আসার পর তাদের বেশ কিছু সমস্যার কথা জানতে পেরেছি। তারা প্রিন্সিপালকে এসব সমস্যার কথা জানিয়েছেন। প্রিন্সিপাল আমাদের জানিয়েছেন, তারা এসব সমস্যার সমাধান করবেন। আমরাও আমাদের দিক থেকে সহায়তা করব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সজলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

National polls: EC orders withdrawal of two police commissioners

The Election Commission (EC) has ordered to withdraw commissioners of two metropolitan units of police, one deputy commissioner, and five superintendents of police.

1h ago