রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা, থাকবেন ‘সতর্ক পাহারায়’

রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা, মঙ্গলবার অবস্থান
ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনার পর রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

আজ সোমবার দিবাগত রাত ১১টার পরে বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন।

সেখানে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

তিনি বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধকে কটাক্ষ করা, রাজাকারদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার প্রতিবাদে আজ দুপুরে ছাত্রলীগের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো পূর্বঘাষিত কর্মসূচি ছিল না, ভোরে তারা কর্মসূচি ঘোষণা করে।'

সাদ্দাম বলেন, 'গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চলছে। শাহবাগ অবরুদ্ধ করা হয়েছে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। দাবি পূরণ হওয়ার পরও; ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন যখন পুনর্বহাল করা হলো, তারপরও আন্দোলনকারীরা মাঠে থেকে গেছে।

'বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। দিনের পর দিন অতিবাহিত হয়েছে, ছাত্রলীগ কোটার যৌক্তিক সংস্কারের জন্য কাজ করেছে। শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়েছে। আমরা ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইনে গেছি, সংস্কারের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত কী জানতে চেয়েছি,' বলেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল মন্তব্য করে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, 'ছাত্রলীগ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। দুপুর ২টা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ সেই অর্থে ছিল না। দুপুর ২টার পরে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা এসেছে।

'তারা জানতো বিকেল ৩টায় ছাত্রলীগের কর্মসূচি কিন্তু ৩টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ ছাড়েনি। যখন তারা দেখেছে, তাদের কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নেই, তখন তারা এক ধরনের কৃত্রিম পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে। যখন ছাত্রলীগের কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা, তখন তারা রাজু ভাস্কর্য থেকে বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হলে গেছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জোর করে তাদের মিছিলে নেওয়ার চেষ্টা করেছে,' যোগ করেন সাদ্দাম।

তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা যখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসছিল, সেখানে তারা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর নির্মমভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্রলীগের অনেকের রুমের আসবাবপত্র ব্যাপকভাবে ভাঙচুর করেছে। এটার কিন্তু কোনো কারণ ছিল না। তাদের কর্মসূচি শেষ করে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার কথা। বিজয় একাত্তর, জসিম উদ্দিন হলে কিংবা মুক্তিযোদ্ধা হলে যখন তারা গেছে, তখন তারা কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

'ছাত্রলীগ তারপরও চেষ্টা করেছে কর্মসূচি পালন করতে কিন্তু তাদের আক্রমণ, কৃত্রিম পরিস্থিতি তৈরি করা, গুজব ছাড়ানো এবং হামলার নাটক তৈরি করে তাদের আন্দোলন যে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছে সেটাকে তারা পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছে,' যোগ করেন সাদ্দাম।

তিনি আরও বলেন, 'ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক সুরাহা যেমন করবে, একইসঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রেতাত্মা, যারা রাজাকারদের পুনর্বাসন করার কথা বলছে এবং যারা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের প্রত্যেককে জবাব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রস্তুত রয়েছে।'

ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, 'আজ সন্ত্রাসীদের হামলার কারণে আমাদের যে কর্মসূচিতে ভণ্ডুল হয়েছে, আগামী দুপুরে দেড়টার দিকে আমাদের সেই কর্মসূচি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত হবে।'

ছাত্রলীগের পাঁচ শতাধিক নেতা আহত হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, 'ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ-দায়িত্বশীল ছাত্ররাজনীতি নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে। আমাদের কর্মসূচি ভণ্ডুল হয়েছে, তারপরও ছাত্রলীগ কিন্তু শান্তিপূর্ণ অবস্থান অব্যাহত রেখেছে। শহীদুল্লাহ হল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হলের অভ্যন্তরে বহিরাগতরা বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধীদের এজেন্ট ছাত্র শিবির এবং স্বাধীনতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষক ছাত্রদলের ক্যাডারদের তারা এখানে নিয়ে এসেছে। তাদের মাধ্যমে উসকানিমূলক প্রক্রিয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর গুলি করা, এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটেছে।'

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কতক্ষণ অবস্থান করবেন জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, '২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন পুনর্বহাল হওয়ার পর বর্তমানে কোনো কোটা নেই। একটি যৌক্তিক আন্দোলনের পরিণতি শেষ হওয়ার পরও যারা এই আন্দোলনকে টেনে-হিঁচড়ে লম্বা করতে চায় এবং যারা এই কোটা ইস্যুকে কেন্দ্র করে আবার রাজাকারের প্রেতাত্মাদের রাজনীতি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য, শান্তিপূর্ণ নিরাপদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সতর্ক পাহারায় থাকবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করা, রাজাকারদের পক্ষে সাফাই গাওয়া, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর তাণ্ডব চালানো এবং একটি যৌক্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক উপকরণ প্রবেশ করিয়ে, বিশেষ করে রাজাকারদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার মতো রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা নিয়ে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকার জন্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত করার জন্য, সাধারণ শিক্ষার্থীর আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতি সুনিশ্চিত করার জন্য ছাত্রলীগ অবস্থান করছে।

'যারা আজকে এই হিম্মত দেখিয়েছে, যারা এই ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে, আমি রাজাকার বলার মতো রাজনৈতিক পরিসর যারা তৈরি করেছে তাদের শেষ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেখেই ছাড়বে। এর রাজনৈতিক জবাব সুনিশ্চিত করার জন্য ছাত্রলীগ দায়বদ্ধ থাকবে,' যোগ করেন তিনি।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, দুপুর থেকে কোটা নিয়ে আন্দোলন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনায় সোমবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। কাউকে আটক করা হয়নি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন, এদিন দুপুর ৩টার পর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ২৯৭ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তিনি বলেন, 'অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মাথায় ইট কিংবা লাঠির আঘাত রয়েছে। কেউ কেউ পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।'

এদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে ছয়জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক।

Comments

The Daily Star  | English

Govt at it again, plans to promote retirees

"A list of around 400 retired officials is currently under review though it remains unclear how many of them will eventually be promoted"

7h ago