জবিতে খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের উদ্যোগ ‘রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন। ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ১৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ম্যুরাল স্থাপনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

এর ভেতর মঙ্গলবার রাতে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিলও করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের ভাষ্য, এই ম্যুরাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য নষ্ট করবে। পতিত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সময়ে যেমন জায়গায় জায়গায় ম্যুরাল, ভাস্কর্য স্থাপনের ভেতর দিয়ে ব্যক্তিপূজার রীতি চালু হয়েছিল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও সেই একই পথে হাঁটছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে।

১৯৯৫ সালের ২ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ঘোষণা দিয়ে ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবনের সামনে ঘোষণা ফলক উন্মোচন করেন। ওই ঘোষণার আলোকে ২০০৫ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসন ভবনের সামনে খালেদা জিয়ার নাম সম্বলিত ফলকটি কয়েক দফা ভাঙচুর করেন সরকার সমর্থকরা। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এটি ভাঙচুরের পর সেটি আর মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ম্যুরালের নকশা। ছবি: রাকিবুল হাসান রাকিব/স্টার

এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন খালেদা জিয়ার স্মৃতিরক্ষায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে আট ফুট বাই ১১ ফুটের একটি ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুসারে গত মঙ্গলবার এর ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করা হয়।  

বিষয়টি নিয়ে বিশ্বিবদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব বলেন, 'জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তরের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অবদান আমরাও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। আমরা চাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই তার কোনো স্মৃতি থাকুক। সেক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদী আমলে তার নামের যে ফলকটি ভেঙে ফেলা হয়েছে সেটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা যেত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই পথে না হেঁটে স্বৈরাচার হাসিনার দেখানো পথে হাঁটছে।'

এই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুনরায় ব্যক্তিপূজার রীতি শুরু করে তাদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। আমরা মনে করি বর্তমান প্রশাসন ২৪ এর আন্দোলনের স্পিরিটকে ধারণ করে না।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মুজাহিদ বাপ্পির বক্তব্য, 'মূলত এ ধরনের ব্যক্তিপূজার মাধ্যমে‌ই ফ্যাসিবাদের শিকড় প্রোথিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে খালেদা জিয়ার নামফলক থাকার বিষয়টি যৌক্তিক। কিন্তু এখানে দলীয় স্বার্থে পতিত ফ্যাসিস্টের মতো বিশাল আয়োজন করে ম্যুরালের রাজনীতি দেখতে চাই না।'

মঙ্গলবার শুরু হওয়া ম্যুরাল স্থাপনের কাজ এখন বন্ধ আছে। ছবি: রাকিবুল হাসান রাকিব/স্টার

এক্ষেত্রে এমন প্রাণক্ষয়ী গণ‌অভ্যুত্থানের চেতনাকে পদদলিত করে দলীয় বাতাবরণের বাইরে বের হতে না পারাটা হতাশাজনক বলেও মন্তব্য করেন মুজাহিদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রথমে আমরা ৮ ফুট বাই ১১ ফুটের একটি ম্যুরাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। এখন আমরা এখানে একটা নামফলক তৈরির জন্য নকশা করছি।'

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ম্যুরাল হবে না। পূর্বে খালেদা জিয়ার যে নামফলক ছিল সেটা দুষ্কৃতকারীরা ভেঙে ফেলেছিল। এখন আমরা ওই নামফলকটি পুনঃস্থাপন করব।'

Comments

The Daily Star  | English
pakistan-india-karachi-drone

Pakistan and India accuse each other of waves of drone attacks

Pakistan's army said it shot down 25 Indian drones, while New Delhi accused Islamabad of launching overnight raids with "drones and missiles", and claimed it destroyed an air defence system in Lahore

31m ago