প্রক্টরিয়াল আদেশ অমান্য করে ঢাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে শিবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
অভিযোগ আছে, প্রক্টরিয়াল আদেশ অমান্য করেই তারা তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
'৩৬ জুলাই: আমরা থামব না' শীর্ষক তিন দিনের এই আয়োজনে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের ছবি প্রদর্শিত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রদর্শনটিকে 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অবমাননা' বলে উল্লেখ করেন।
পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে গতকাল সন্ধ্যার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিমকে সেসব ছবি সরিয়ে নিতে দেখা যায়। সেসময় শিক্ষার্থীরা 'যুদ্ধাপরাধীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না'-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
টিএসসি প্রাঙ্গণে স্বীকৃত রাজাকারদের ছবি প্রদর্শন এবং তাদের সঙ্গে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি প্রদর্শন করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় ঢাবি শাখা ছাত্রদল।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র পরিষদসহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি জোট গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চার দফা দাবি পেশ করে। তাদের দাবির মধ্যে ছিল অবিলম্বে ছাত্রশিবিরের এই কর্মসূচি বন্ধ করা এবং প্রদর্শিত ছবি স্থায়ীভাবে অপসারণ করা।
এ বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ জানান, অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ অনুমতি নিয়েই আয়োজন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'ঢাবি কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের আয়োজন বন্ধ করতে চায়, তাহলে তাদের যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করতে হবে। অন্যথায় কর্মসূচি চলবে।'
এই অনুষ্ঠানকে বাধা দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে বলেও জানান এই শিবির নেতা।
দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের ছবি প্রদর্শনের বিষয়ে এস এম ফরহাদ বলেন, 'ছবিগুলো নিয়ে অভিযোগ আসলে আমরা সেগুলো সরিয়ে নিই। হাসিনার শাসনামলে বিচারবিভাগীয় হত্যাকাণ্ড তুলে ধরার জন্য ছবিগুলো প্রদর্শন করা হয়েছিল। এতে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটা আমাদের বিরুদ্ধে একটি ইচ্ছাকৃত রাজনৈতিক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছুই নয়।'
গতকাল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ ফেসবুকে এক পোস্টে জানান, প্রক্টরের সঙ্গে তাদের দীর্ঘ মিটিং হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুটি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই রাজাকারি কারবার ডিজওন করে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে বিবৃতি দেওয়া এবং এই কর্মসূচির পারমিট ক্যান্সেল করা।
তিনি আরও লিখেছেন, প্রক্টর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে উত্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন এবং নিশ্চিত করেছেন যে, শিবিরকে ইতোমধ্যে কর্মসূচি বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
এ নিয়ে গতরাত ১০টা পর্যন্ত আন্দোলনরত ছাত্র সংগঠন ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে উত্তেজনা চলে। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে টিএসসি এলাকা।
এরপরও ছাত্রশিবিরের 'বিতর্কিত' এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতরাত থেকে এস এম ফরহাদ ও সাদিক কায়েমসহ শিবির নেতাদের সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছি। আমি তাদের কর্মসূচি বন্ধের জন্য জোর দাবি জানিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'আমরা আজকেও তাদের অনুমতি দিচ্ছি না এবং আগামীকালও চলতে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।'
তবে শিবির নেতারা জানিয়েছেন, তাদের আজকের কর্মসূচি শুধু একাডেমিক ও সেমিনার-ভিত্তিক, যেখানে অনেক অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাই আজ প্রোগ্রামটি বন্ধ করে দিলে তারা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়বে', যোগ করেন তিনি।
প্রক্টর বলেন, 'জোর করে তো আর তাদের উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়, তারা হয়তো আজকের মতো কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।'
Comments