ডাকসু নির্বাচন

আবাসন-খাবার সংকট দূর ও গণরুম সংস্কৃতি যাতে না ফেরে নিশ্চিত করব: আবদুল কাদের

‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবদুল কাদের। ছবি: স্টার

জয়ী হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন ও খাবারের সংকট দূর এবং গণরুম সংস্কৃতি যাতে না ফেরে তা নিশ্চিত করবেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে 'বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ' প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবদুল কাদের।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত নতুন ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেলের এই প্রার্থী ভিপি পদে দাঁড়ানোর বিষয়ে বলেন, '২০১৯ সালে আমি ক্যাম্পাসে আসি। দেশের আনাচে-কানাচে থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসেন নানা স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। কিন্তু দিনশেষে আমরা দেখেছি- এই শিক্ষার্থীরাই এখানে উপেক্ষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত। আমার মনে হয়েছে এই শিক্ষার্থীদের অধিকার-ন্যায্যাতার জন্য অনেক কিছু করার আছে। সেই জায়গা থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি, যাতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলতে পারি, তাদের জন্য কাজ করতে পারি।'

বলেন, 'আমি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছি। জীবনবোধের জায়গা থেকে বরাবরই আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, এখনো বলছি, ভবিষ্যতেও বলব। শিক্ষার্থীরা সেটা দেখেছেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাকে হল থেকেও বের করে দেওয়া হয়। নানা সময়ে আমাকে নানা ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ৫ আগস্টের আগেই আমাকে জেলেও যেতে হয়েছে। কিন্তু এরপরও থেমে যাইনি। অব্যাহতভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য প্রতিবাদ করে গেছি।'

আবদুল কাদের বলেন, 'নতুন বাংলাদেশে আমরা পরিবর্তনের যে স্বপ্ন দেখি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেই এর সূচনা হতে পারে। এখানে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না। সবাই সমান থাকবে। এই ক্যাম্পাস হবে শিক্ষার্থীবান্ধব। শিক্ষার্থীদের জন্য সেরকম একটা ক্যাম্পাস আমরা করব। আমি যে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করি না, বিনা দ্বিধায় সম্মুখসারিতে থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, সেটা জুলাই আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরা দেখেছেন। এর আগেও তারা দেখেছেন। জুলাই আন্দোলনের আগেও শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই তাদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস নির্মাণ করব।'

নির্বাচিত হলে কী করবেন, জানতে চাইলে কাদের বলেন, 'একজন ভিপির সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হতে হবে শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, খাবারের মান পরিবর্তন করব। হলে গণরুম সংস্কৃতি যাতে না ফেরে তা নিশ্চিত করব।
পাশাপাশি রেজিস্ট্রার ভবনের বিড়ম্বনা ও ক্লাসরুমসহ যত রকমের সংকট আছে, সেগুলো সমাধানে কাজ করব। তা ছাড়া, শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একটা দূরত্ব আছে, সেই দূরত্ব ঘোচাতে হবে। একইসঙ্গে প্রক্টর-ভিসিসহ শিক্ষক নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন আছে। দলীয় পছন্দ বা বিবেচনায় কোনোভাবেই যাতে তাদের নিয়োগ না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষকদেরও জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হবে, যাতে তারা তাদের দায়বদ্ধতার জায়গায় যথাযথভাবে কাজ করেন।'

তিনি বলেন, 'আমরা দেখেছি করোনা মহামারির মধ্যেও শিক্ষকদের নির্বাচন হয়েছে, কর্মচারীদের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন হয়নি। কেন হয়নি? কারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা নিশ্চিত করব যাতে প্রতি বছর ডাকসু নির্বাচন হয়। কারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি না থাকলে তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ থাকে না।'

নারী শিক্ষার্থীদের বিষয়ে এই ভিপি প্রার্থী বলেন, 'ক্যাম্পাসে প্রায় অর্ধেক নারী শিক্ষার্থী হলেও তাদের জন্য মাত্র পাঁচটি হল। তাদের আবাসন সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে কাজ করব। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের নানা রকমের হেনস্তা, মোরাল পুলিশিংয়ের শিকার হতে হয়। অনলাইন কিংবা অফলাইনে তাদের হেনস্তার শিকার হতে হয়। আমরা নিশ্চিত করব, আমাদের প্রত্যেকটি বোনের নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত হয়। তাদের মনে যেন কোনো ধরনের শঙ্কা বা নিরাপত্তাহীনতা কাজ না করে।'

নির্বাচনের পরিবেশ সম্পর্কে আবদুল কাদের বলেন, '২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচনের সময় দেখেছি একটা ভয়ের সংস্কৃতি ছিল। এবার সেই ভয়ের পরিস্থিতিটা নেই। অফলাইনে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। তবে কেউ কেউ নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আরও নিরপেক্ষ হতে হবে। কাউকে আলাদাভাবে না দেখে সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে, সবার জন্য সমান পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তবে অনলাইন কাউকে কাউকে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হচ্ছে।'

সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, 'বিষয়টি মশা মারতে কামান দাগানোর মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, যেখানে সেনা মোতায়েন করতে হবে। আমার মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মনে একটা ভয় ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে এর পেছনে একটি দুরভিসন্ধি আছে। কারণ শিক্ষার্থী বা কোনো ছাত্রসংগঠন বা কোনো প্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগ না করে হুট করেই সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Students’ unions: Legal bars, admin delays stall polls in many universities

Of 56 public universities across the country, only seven have the legal provision for a central students' union

2h ago