নন-ক্যাডার নিয়োগে নতুন নিয়ম, শঙ্কায় ৪০তম বিসিএসের প্রার্থীরা

বিসিএসের মাধ্যমে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নতুন নিয়মের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরা। ৪০তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগে নতুন নিয়ম চালু হলে ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় কম সংখ্যক পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

বিসিএসের মাধ্যমে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) নতুন নিয়মের বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরা। ৪০তম বিসিএস থেকে নন-ক্যাডার নিয়োগে নতুন নিয়ম চালু হলে ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় কম সংখ্যক পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

এ বিষয়ে '৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রার্থীবৃন্দ' নামের একটি প্ল্যাটফর্মের চাকরিপ্রার্থীরা জানান, আগের নিয়ম অনুযায়ী ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর থেকে ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রেডে যতগুলো পদ খালি হতো, সেটা ৪০তম বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়া হতো। সেই হিসাবে, গত বছরের নভেম্বরে ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা হয়েছে, সব মিলিয়ে চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হতে আরও এক বছরের মতো সময় বাকি। এ সময়ের মধ্যে যতগুলো পদ খালি হবে, সেটা ৪০তম বিসিএস থেকে নেওয়ার কথা। কিন্তু পিএসসির নতুন নিয়মের ফলে ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে (২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর) যে পদগুলো শূন্য ছিল, শুধু সেগুলোই নিয়োগ দেওয়া হবে।

নন-ক্যাডারপ্রার্থীদের দাবি, ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য যে সময়ের শূন্য পদের কথা বলা হচ্ছে, ওই সময়ের অধিকাংশ শূন্যপদ ৩৭তম ও ৩৮তম বিসিএস থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগের দিন অর্থাৎ ২০২২ সালের ২৯ মার্চ ৩৮তম বিসিএসের প্রার্থীদের জন্য ৩৩৭টি পদে সুপারিশ করা হয়েছে। এ অবস্থায় নতুন নিয়মে শূন্যপদের জন্য সুপারিশ করতে চাইলে আমাদের জন্য পদ নেই বললেই চলে।

নতুন নিয়মে নন-ক্যাডারে নিয়োগের বিষয়ে গত ২৩ আগস্ট পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিসিএসে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের আগে যত শূন্য পদই আসুক, তা একটি বিসিএসে নিয়োগ দিয়ে শেষ না করে কোন শূন্য পদ কোন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় এসেছে, তা বিবেচনায় আনতে হবে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু পদ স্বল্পতার কারণে ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত নন, এমন প্রার্থীদের মধ্য থেকে নন-ক্যাডার পদে সুপারিশের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৯ম গ্রেডের ৭৭ ক্যাটাগরির ১ হাজার ১৮২, দশম গ্রেডের ৪ ক্যাটাগরির ৬টি এবং ১১তম গ্রেডের একটি ক্যাটাগরির ১৯টি শূন্য পদের চাহিদা কমিশনে পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে মোট শূন্য পদের সংখ্যা ১ হাজার ২০৭টি।

কয়েকটি বিসিএসের তথ্য থেকে দেখা গেছে, ৩৪তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে নবম থেকে ১২তম গ্রেডে বিভিন্ন চাকরিতে পিএসসি থেকে সুপারিশ পেয়েছেন ১ হাজার ৮০২ জন; ৩৫তম বিসিএসে ২ হাজার ১৪৪ জন; ৩৬তম বিসিএসে ১ হাজার ২৬১ জন; ৩৭তম বিসিএসে ১ হাজার ৭২৪ জন এবং ৩৮তম বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন ৩ হাজার ৩০২ জন।

চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারের জন্য যে পদগুলো থাকার কথা ছিল, তার বেশিরভাগই ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাই নতুন নিয়ম কার্যকর হলে দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকা ৮ হাজার ১৬৬ জন নন-ক্যাডার প্রার্থীর বেশিরভাগই চাকরি পাবেন না।

সৈকত রহমান নামের আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, 'করোনা মহামারির কারণে ৪০তম বিসিএসের প্রার্থীরা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশা করি ৩৫তম, ৩৬তম, ৩৭তম ও ৩৮তম বিসিএসের মতো ৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারে সুপারিশপ্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ ৪১তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত পিএসসি ৪০তম বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশ কার্যক্রম চালাবে।'

এ বিষয়ে নন-ক্যাডার প্রার্থী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, 'নতুন নিয়মে যে নন-ক্যাডার নিয়োগে সুপারিশ করা হবে, সেটা বিজ্ঞপ্তির সময় উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি রেজাল্টের পরেও আগের নিয়মেই শূন্যপদ চেয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়। এখন রেজাল্ট হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করে বিসিএসে নতুন নিয়ম প্রয়োগ করা অযৌক্তিক এবং একইসঙ্গে অমানবিক। তাই নতুন নিয়ম নতুন বিসিএস থেকে চালু করাই যৌক্তিক বলে মনে করি।'

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীদের শঙ্কা ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সচিব মু. আব্দুল হামিদ জমাদ্দার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৪০তম বিসিএসের আগে থেকে যে বিজ্ঞপ্তিগুলো হয়েছে, বিধি অনুযায়ী নন-ক্যাডারে কত পোস্ট খালি থাকবে সেটা সেখানে উল্লেখ করা উচিত ছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিটা পিএসসি এতদিন করেনি। তখন আমিও সচিবের দায়িত্বে ছিলাম না, বর্তমান চেয়ারম্যানও ছিলেন না। কিন্তু ৪৫তম বিসিএস থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিজ্ঞপ্তির সময় বলে দেবো কোন পোস্টে কতগুলো পদ খালি। এতদিন সেটা উল্লেখ না করার কারণে যেটা করা হতো, আগে যতগুলো শূন্য পদ থাকতো, সেই শূন্যপদে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করা হতো।'

'আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, বিধি অনুযায়ী যখন ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তখন যত পোস্ট খালি ছিল সেগুলোর নিয়োগের সুপারিশ ৪০তম থেকে দেবো। ৪১তম বিসিএসের যখন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তখন যত পোস্ট খালি ছিল তা ৪১তম থেকে দেবো। ৪৩তম যখন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে, তখন যতগুলো পোস্ট খালি ছিল সেগুলো সেখান থেকে সুপারিশ করব, ৪৪তম থেকেও আমরা সেই পোস্টগুলোতে দেবো।'

পিএসসি সচিব আরও বলেন, 'পাবলিক সার্ভিস কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এখানকার সব সদস্য বসে সিদ্ধান্ত নেন। তারা কখনোই কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেন না। তারা দল-মত, বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এই সিদ্ধান্তগুলো নেন। তারা কখনো চাইবেন না, একটা ব্যাচকে লাভবান করে আরেকটা ব্যাচকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে। আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোনো পক্ষপাতিত্ব করব না। কোনো ব্যাচের প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়েও কিছু করব না। কোনো ব্যাচকে আমরা অতিরিক্ত সুবিধা দেবো না, আবার কোনো ব্যাচকে বঞ্চিতও করব না। সবাই বাংলাদেশের নাগরিকই। এটা পিএসসির দেখার দায়িত্ব।'

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীদের দাবির বিষয়ে পিএসসি সচিব বলেন, '৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডার প্রার্থীরা কী বলছে! তারা বলছে সব পোস্ট তাদের দিয়ে দিতে। এখন ৪০তম বিসিএসের শিক্ষার্থীরাও আমাদের সন্তান, ঠিক তেমনি ৪১, ৪২, ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের শিক্ষার্থীরাও আমাদের দেশের ছেলে। আমরা তো কাউকে বঞ্চিত করব না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিধি অনুযায়ী চলবে। কেউ যদি বলে আমাকে সব দিয়ে দাও, তা তো হবে না।'

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ১ হাজার ৯০৩টি পদের জন্য ৪০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দীর্ঘ ৪ বছর পর ২০২২ সালের ৩০ মার্চ ১ হাজার ৯৬৩ জন প্রার্থীকে ক্যাডার পদে সুপারিশ করা হয় এবং পদ স্বল্পতার কারণে ৮ হাজার ১৬৬ জন প্রার্থীকে নন-ক্যাডার পদের জন্য অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়।

উল্লেখ্য, ৩৯ ও ৪২তম স্পেশাল বিসিএসে শুধু চিকিৎসকদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

Comments