এক স্কুলে এক শিক্ষক

গলাচিপা স্কুল
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর কাজল ইউনিয়নে উত্তর ছোট চর কাজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষক দিয়ে পাঠ কার্যক্রম চলছে। ছবি: স্টার

মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চর কাজল ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের গ্রাম ছোট চর কাজল। গ্রামের স্কুলটির নাম উত্তর ছোট চর কাজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১২০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক একজন।

পাঠদান ও দাপ্তরিক কাজের সঙ্গে মাসিক সভায় যোগ দিতে হচ্ছে সেই শিক্ষককে। এসব কারণ গুণগত শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। এভাবেই এই স্কুলে পাঠদান চলছে দিনের পর দিন।

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যালয়হীন গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই স্কুলটি নির্মাণ করে।

দ্বিতল ভবনের স্কুলটি পরিপাটি করে সাজানো। বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। বৈদ্যুতিক পাখা ও আলোর ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারছে।

গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় স্কুলটির একমাত্র শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ শীল ঘণ্টা বাজিয়ে শ্রেণিকক্ষে আসেন। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরাই এক কক্ষে বসে।

প্রথম শিফটের প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ৪০ শিক্ষার্থীদের ৩ সারিতে বসিয়ে পাঠদান করেন তিনি।

লেখাপড়া কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিহাদ খলিফা ডেইলি স্টারকে বলে, 'সবাই এক সঙ্গে বসালে পড়া বুঝতে কষ্ট হয়।'

দুপুর ১২টায় প্রথম শিফটের ছুটির পর দ্বিতীয় শিফটে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৮০ শিক্ষার্থী নিয়ে আবার ক্লাস শুরু করেন ইন্দ্রজিৎ শীল।

স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির প্রথম শিক্ষার্থী শাকিল হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলে, 'ক্লাসে বেশি হৈচৈ হয়। লেখাপড়া ভালো হয় না।'

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সানজিদা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলে, 'পড়া বুঝতে যেমন কষ্ট হয়, তেমনি লেখাপড়ায়ও আমরা পিছিয়ে পড়ছি।'

বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক শিল্পী বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ছেলে ওমর ফারুক তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। স্কুলে শিক্ষক ঘাটতি থাকায় ছেলের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।'

'এই এলাকায় আর স্কুল না থাকায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে বিপাকে পড়েছি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এক বছর ধরে শুনছি নতুন শিক্ষক আসবেন। কিন্তু, আসছেন না। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।'

শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ শীল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ১৫ মার্চ ইউনিয়নের উত্তর বড় চর কাজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এই স্কুলে যোগ দিই। ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল অবসরে যাবো।'

তিনি আরও বলেন, 'এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ ৪ শিক্ষকের পদ থাকার কথা। কিন্তু, এখনো পদ সৃষ্টি হয়নি।'

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্যদের সভাপতি সাব্বির আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্গম এলাকার কারণে এখানে শিক্ষক আসতে চান না। শিক্ষক সংকটের বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু সংকটের সমাধান হচ্ছে না।'

গলাচিপা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারী করা হয়। কিন্তু, বিদ্যালয়ের কর্মরত ৪ শিক্ষকে সরকারীকরণ করা হয়নি। সেই থেকে শিক্ষক সংকট চলছে। অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক এনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদ্যালয়টিতে পদ তৈরির প্রস্তাব অনেকদিন ধরে অধিদপ্তরে আটকে আছে। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় নতুন শিক্ষক নেওয়া হবে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে পদসৃষ্টিসহ বিদ্যালয়টিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করবো।'

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago