শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনা এখন ধানখেত

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙিনা এখন চাষ করা হয় ধান। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর স্মৃতি রক্ষার্থে তার গ্রামের বাড়ী নোয়াখালীর চাটখিলে ১৯৭২ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল এলাকাবাসী। পরে বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বর্তমানে স্কুলের জমিতে সবজি ও আঙিনায় ধান চাষ হচ্ছে।

বন্ধ হয়ে যাওয়া বিদ্যালয়টি চালু করে মুনীর চৌধুরীর স্মৃতি ধরে রাখতে বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর তন্ময় ও এলাকাবাসী। 

আসিফ মুনীর তন্ময় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্কুলটি স্থানীয়দের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হওয়ার অনেক দিন পর বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। গত ৩ বছর আগে আমি আমাদের গ্রামের বাড়ি চাটখিলের গোপাইরবাগ গ্রামে যাই। সেখানে গিয়ে বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভিটা ও স্কুলের কয়েকটি খুঁটি লতা-পাতায় ঢাকা দেখি। বিদ্যালয়ের ভিটা ও আঙিনায় ধান-সবজি চাষ হচ্ছে।'

বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগের আহ্বান জানান তিনি।

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুঁটি দেখাচ্ছেন তার স্বজনরা। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি চাটখিল উপজেলার ১নং সাহাপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের গোপাইরবাগ গ্রামে। গত শনিবার ওই গ্রামে তার নামে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় সাহাপুরের ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হায়দার কাজলসহ কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে।

তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গ্রামবাসী ১৯৭২ সালে মুনীর চৌধুরীর নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করলেও, গত ৫০ বছরে বিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। সরকারি স্বীকৃতিও পায়নি স্কুলটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চিহ্ন হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে যে কয়েকটি খুঁটি ছিল, সেগুলোও লুটপাট হয়ে যায়। স্কুলের ভিটা লতাপাতা ও আগাছায় ঢেকে গেছে। ভিটায় সবজি বাগান ও বিদ্যালয়ের মাঠে ধান চাষ হচ্ছে।

ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম হায়দার কাজল ডেইলি স্টারকে জানান, মুনীর চৌধুরী শহীদ হওয়ার পর কাজলের বাবা শামসুদ্দিন চেয়ারম্যান তাদের বাড়ির পাশে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এর নাম দেওয়া হয় শহীদ মুনীর চৌধুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিভিন্ন কারণে বিদ্যালয়টি একাধিকবার স্থানান্তরিত হয়। পরে গোপাইরবাগ গ্রামের প্রয়াত সেকান্দর আলী মাস্টারের স্ত্রী করিমুন নেছা ৫৪ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের নামে দান করেন এবং সেখানে বিদ্যালয়টি গড়ে ওঠে।

১৯৮৮ সালের মাঠ জরিপে জমিটি বিদ্যালয়ের নামে খতিয়ানভুক্ত হয় বলেও জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতিষ্ঠার পর এলাকার শিক্ষিত যুবকরা বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে প্রায় ২০-২৫ বছর শিক্ষকতা করেন। পরে তারা বিদ্যালয় ছেড়ে যান।

তিনি আরও জানান, এর আগে ২ বার বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেলেও, জমি নিয়ে মামলা থাকায় নির্মাণকাজ হয়নি। জমিদাতা করিমুন নেছার জামাতা ও জমির ওয়ারিশসূত্রে অংশীদার আনোয়ার হোসেন ইরান সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি করেছেন।

প্রতিবেশী তপন মালাকার ও জাহিদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ২২ বছর আগে ঝড়ে বিদ্যালয়টির ক্ষতি হয়। এরপর তা আর মেরামত করা হয়নি। ভিটায় যে কয়েকটি খুঁটি দাড়িয়ে ছিল তাও লুটপাট হয়ে গেছে।'

জানতে চাইলে চাটখিল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ টি এম এহসানুল হক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ নামে কোনো বিদ্যালয় চাটখিলে আছে বলে আমার জানা নেই।'

বিদ্যালয়টির বিষয়ে জানতে চাটখিলের বর্তমান ইউএনও মোহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, এ নামে চাটখিলে কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে বলে তার জানা নেই।

তবে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবেন বলে জানান ইউএনও।

এ দিকে মামলার বাদী আনোয়ার হোসেন ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখানে ১৪৬ জন ওয়ারিশ আছে। ওয়ারিশ বেশি হওয়ায় মামলা তোলা যাচ্ছে না। বণ্টক মামলা নিষ্পত্তি হতে সময় বেশি লাগে। তবে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হোক সেটা আমরাও চাই।'

বিদ্যালয়টির বিষয়ে শহীদ মুনীর চৌধুরীর ভাতিজা সোমপাড়া কলেজের প্রভাষক মো. মামুন হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বুদ্ধিজীবী শহীদ মুনির চৌধুরীর স্মৃতি ধরে রাখতে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে পরামর্শ করে বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে জমি খোঁজা হচ্ছে।'

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য শিগগিরই উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউএনওর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

যোগাযোগ করা হলে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর নামে বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব। বিদ্যালয়টি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কেউ এগিয়ে এলে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

4h ago