জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

উইকেন্ড কোর্সে ক্লাস-পরীক্ষা সময়মতো, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দেরিতে

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কার্যদিবসে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালে শিক্ষকদের উপস্থিতি তেমন দেখা না গেলেও শুক্র ও শনিবার বিভাগগুলোয় শিক্ষকদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক। ছবি: সংগৃহীত

সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে 'উইকেন্ড কোর্স'। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের চাইতে উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের বেশি গুরুত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ বছরের স্নাতক সম্মান ডিগ্রি বিধি, ২০০৩ এর ৩(১) অনুযায়ী, ৪ ক্রেডিট কোর্সের কন্ট্যাক্ট ডিউরেশন হবে ৫০-৬০ ঘণ্টা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে—বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগে ক্লাস বাতিল, ক্লাসে এসে শিক্ষকের অপেক্ষায় বসে থাকা, হাতে গোনা কয়েকটি ক্লাস নিয়ে পরীক্ষা শুরু করা, পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও ফল প্রকাশে দেরি—নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণ চিত্র হলেও একই বিভাগের 'উইকেন্ড প্রোগ্রামে' এই ধরনের সমস্যা নেই বললেই চলে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কার্যদিবসে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস চলাকালে শিক্ষকদের উপস্থিতি তেমন দেখা না গেলেও শুক্র ও শনিবার বিভাগগুলোয় শিক্ষকদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কয়েকজন শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নিলেও অনেকে অনিয়মিত। এটি সব বিভাগেরই সাধারণ চিত্র। তবে যারা নিয়মিত ক্লাস নেন না, তাদেরও 'উইকেন্ড প্রোগ্রাম'র প্রতি যত্নশীল হতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই বিভাগে শিক্ষকদের ক্লাস বাতিলের ঘটনা নিয়মিত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হাতে গোনা কয়েকটি ক্লাস নিয়ে, কোনোমতে পরীক্ষা শুরু করে দেন। কখনো ক্লাস বাতিল ও বাতিল হওয়া ক্লাস কবে হবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক নোটিশ আমাদের দেওয়া হয় না। যদিও উইকেন্ড কোর্সের ক্লাস কোনো কারণে বাতিল হলে তা নোটিশ দিয়ে জানানো হয়। এমনকি পরবর্তীতে তাদের মেকআপ ক্লাসও নেওয়া হয়।'

একইরকম চিত্র দেখা গেছে আরও কয়েকটি বিভাগে।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের এক শিক্ষার্থী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ফল পেতে অনেক অনেক দেরি হয়। ১৮ মে আমাদের অষ্টম সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হয়৷ আমরা সপ্তম সেমিস্টারের রেজাল্ট জানতে পারি ১৬ মে। মাত্র ২ দিন আগে।'

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্স ব্যাচের লিখিত পরীক্ষা গত বছরের ৭ ডিসেম্বর শেষ হলেও এখনো ফল প্রকাশ হয়নি। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল প্রকাশে এ ধরনের দেরি অনেকটা সাধারণ চিত্র হলেও উইকেন্ড প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশে তেমনটা দেখা যায় না।

পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেরির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান তাসমিয়া পারসূব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাস্টার্সের ফল প্রকাশের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ১ মাসের মতো লাগতে পারে।'

কোনো চিঠির মাধ্যমে পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে ফল প্রকাশের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'লিখিত চিঠির মাধ্যমে ফলাফলের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়নি।'

উইকেন্ড প্রোগ্রামের ফল প্রকাশে এ ধরনের দেরি হয় কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'উইকেন্ড প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশে খুব একটা দেরি হয় না।'

শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদের তুলনায় উইকেন্ড শিক্ষার্থীদের বেশি প্রাধান্য দেন কি না—জানতে চাইলে ওই বিভাগের সভাপতি জানান, তিনি এ বিষয়ে একমত নন। শিক্ষকরা শুক্র-শনিবারে বেশি তৎপর হন এমনটা তিনি মনে করেন না।

এ দিকে, উইকেন্ড শিক্ষার্থীদের নোটিশ দিয়ে মেকআপ ক্লাসের ঘোষণা দেওয়া হলেও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সেটি হয় না কেন—জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাবেরা সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কোনো শিক্ষক যদি ক্লাসে না আসেন তাহলে সেই ক্লাসে যা পড়ানোর কথা সেটি তিনি পরবর্তী ক্লাসে পড়াবেন নাকি মেকআপ ক্লাস নেবেন এটা তো তার বিষয়। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে মেকআপ ক্লাসের ব্যবস্থা হয় কি না সেটি আমি জানি না। শিক্ষকরা তো আমাকে জানিয়ে ক্লাসে যান না।'

উইকেন্ড প্রোগ্রাম বন্ধের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবায়ন নেই

২০১১ সালে একটি ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এই কোর্স চালু হলেও এখন ১৮টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু আছে।

ইংরেজি বিভাগে উইকেন্ড প্রোগ্রামে একজন শিক্ষার্থীকে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টিউশন ফি দিতে হয়। অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রেও টিউশন ফি লাখ টাকার বেশি।

পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে জানান, কয়েকটি বিভাগ তাদের উইকেন্ড প্রোগ্রাম থেকে আয়ের যে অংশটুকু বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ার কথা তা সময় মতো দেয় না।

পড়াশোনার মানোন্নয়নের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের 'প্রাইভেটাইজেশন' দ্রুত বন্ধ করতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ ও লেখক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিভাগগুলোয় ক্লাস যেন নিয়মিত হয়, বিভাগের শিক্ষকরা যেন উইকেন্ড বা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বেশি ব্যস্ত না থাকেন, সেগুলো তদারকি করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মৌলিক কাজ ও দায়িত্ব। পরীক্ষার আগে যেন শিক্ষার্থীরা টিউটোরিয়াল নম্বর পান, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যথাসময়ে পরীক্ষার ফল পেতে শিক্ষকদের জবাবদিহিতা, মোটিভেশন ও চাপের দরকার আছে। এসব জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কাজ করতে হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষা নেওয়া, ঠিক সময়ে ফল প্রকাশ করা এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিভাগগুলোকে অবশ্যই জবাবদিহিতা করতে হবে। আমাদের উইকেন্ড প্রোগ্রাম চালু হয়েছিল এই শর্তে যে বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। যদি হয় তাহলে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মো. আবু তাহের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ধরনের প্রোগ্রাম বন্ধ করতে নির্দেশনা আছে৷ আমরা অনেকবার বলেছি যে এই ধরনের প্রোগ্রাম বন্ধ হওয়া উচিত। এসব প্রোগ্রামের ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয় তা অনেক পুরনো কথা।'

কেন উইকেন্ড প্রোগ্রাম বন্ধ করা হচ্ছে না—জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার সময়ে আমি নতুন কোনো বিভাগকে উইকেন্ড প্রোগ্রাম খোলার অনুমতি দেইনি৷ ইউজিসি থেকে এটি বন্ধ করার কোনো চিঠিও পাইনি। যেসব বিভাগে এটি চালু আছে তা বন্ধ করা কঠিন ব্যাপার।'

Comments

The Daily Star  | English

Shorna seals Tigresses’ historic first T20I win in South Africa

Bangladesh scripted their first-ever T20I win against South Africa women’s team on their home soil with a 13-run win at Benoni today. Leg-spinner Shorna Akter was the protagonist of the match for the Tigers, bagging five wickets in a tight match to get Bangladesh the win.

1h ago