শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে আলোচনা হলেই যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় সেটা হলো, প্রযুক্তির এই উন্নতির কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন এবং আরও অনেকেই চাকরি হারাবেন।

কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে আমরা ভালো কিছু পাব না বা এটাকে আমাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারব না।

অনেক শিক্ষার্থীই চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে তাদের বিনামূল্যে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে পেরে আনন্দিত—যদিও এর নৈতিকতা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সাধারণ কাজ সম্পন্ন করতে বাধা থাকা উচিত না।

শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বহুমাত্রিক ব্যবহারের অর্থ হবে এর সম্পূর্ণ কাঠামো পরিবর্তন করা। কিন্তু সঠিকভাবে যদি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা যায় এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি এর দক্ষতার উন্নতি করতে পারে, তাহলে সেটা একইভাবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য বাড়তি সহায়ক হতে পারে।

মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের (এমসিকিউ) সঠিক উত্তর বেছে নেওয়ার মতো কিছু কাজে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যেতেই পারে। এতে শুধু সময়ই বাঁচবে না, শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ে তাদের ফলাফল পেয়ে যাবেন।

এর ব্যবহার হতে পারে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে কোর্স সাজাতে, তাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে এবং সেই অনুযায়ী তাদেরকে মতামত জানাতে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি যথাযথ সুপারিশসহ বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে এবং শিক্ষকের কাছে পাঠাতে পারে। এমনকি শিক্ষার্থীরাও একইভাবে নিজেদের দুর্বলতা খুঁজে নিয়ে তা কাটিয়ে উঠতে পারে।

চ্যাটবট ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেক শিক্ষার্থী গুগলের বিকল্প হিসেবে এটি ব্যবহার করছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গাইড হিসেবে চ্যাটবট ব্যবহার করছে, যা শিক্ষার্থীদের ইনস্টিটিউটের বিস্তারিত তথ্য জানতে সহায়তা করছে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্যও বাড়তি সহায়ক হতে পারে। যেহেতু এর অ্যালগরিদম শিক্ষার্থীর দক্ষতা বিশ্লেষণ করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী তাদের পরামর্শ দিতে পারে, তাই এটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদেরকে নিজস্ব গতিতে এগিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে।

শিক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহারে অন্যতম অবদান রেখে চলেছেন খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সালমান খান। তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্প্রতি 'খানমিগো' নামে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত শিক্ষা সহায়ক চালু করেছে। শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, এটি শিক্ষকদের পাঠ পরিকল্পনা পর্যন্ত তৈরি করে দিতে সহায়ক।

এই ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে।

সিঙ্গাপুরের এআই সেন্টার ফর এডুকেশনাল টেকনোলজিস 'কোডভেরি' নামে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, যা শিক্ষার্থীদের কোডিং অ্যাসাইনমেন্টের ভুল শনাক্ত করে এবং সেই অনুযায়ী মন্তব্য দেয়। দক্ষিণ কোরিয়া ২০২৫ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে কাস্টমাইজড ডিজিটাল পাঠ্যপুস্তক তৈরির পরিকল্পনা করছে। শিক্ষায় ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে থাকা দেশ ফিনল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক স্কুল 'ভিআইএলএলই' ব্যবহার করে। এটি একটি শিক্ষামূলক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষার্থীদের শেখার বিষয়বস্তু ছাড়াও রয়েছে একটি উন্নত এআই ইঞ্জিন, যা শিক্ষকদের সাহায্য করে শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা টাস্ক দিতে।

শিক্ষকদের উদ্বেগ রয়েছে যে শিক্ষার্থীরা অসৎ উপায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে পারে। তবে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা যেমন চলছে, তেমনি টার্নিটিনের মতো অ্যাপও চলে এসেছে এগুলোকে শনাক্ত করতে। কাজেই, অসততার চেষ্টা যেমন হতেই পারে, একইভাবে সেগুলো প্রতিরোধের সক্ষমতাও তৈরি হয়ে যাবে।

শিক্ষায় অন্যান্য প্রযুক্তির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার রোধে নিয়ন্ত্রক কাঠামোর প্রয়োজন হবে। ইউনেস্কো ইতোমধ্যেই শিক্ষায় জেনারেটিভ এআই ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যা শিক্ষা নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি সম্ভাব্য সূচনা হতে পারে।

যাইহোক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সত্যিকার অর্থে শিক্ষায় বিপ্লব ঘটাতে এবং প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ ও উদ্ভাবনে আরও অনেক দূর যেতে হবে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

জিবা মাহদী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী

অনুবাদ করেছেন জান্নাতুল ফেরদৌস

Comments

The Daily Star  | English

Trump calls for Iran's 'unconditional surrender' as Israel-Iran air war rages on

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

6h ago