পরীক্ষার আগের রাতে প্রস্তুতি

পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাসায় বা হলে এমন স্থান বেছে নিতে হবে যেখানে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে। খেয়াল রাখতে হবে সেই স্থান যেন আবার খুব বেশি আরামদায়ক না হয়।
ছবি: সংগৃহীত

সারাবছর পড়ব পড়ব বলে সময় নষ্ট করে, পরীক্ষার আগের রাতে টনক নড়ে। তখন পরীক্ষায় ভালো করা তো দূরে থাক, পাশ করাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় উপায়? 

আফসোস না করে এক্ষুণি পড়তে বসে যান। পড়তে বসার আগে এক রাতে কীভাবে ভালো প্রস্তুতি নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে জেনে নিন। 

নিরিবিলি জায়গায় পড়তে বসুন 

পরীক্ষার আগে বাসায় মেহমানের উপস্থিতি কিংবা হলে অনুষ্ঠানের আয়োজনে পড়ার ব্যাঘাত ঘটা অস্বাভাবিক নয় বটে। তবে এ নিয়ে মাথা ঘামালে কেবল সময় অপচয়ই হবে, কাজের কাজ নয়। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বাসায় বা হলে এমন স্থান বেছে নিতে হবে যেখানে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে। খেয়াল রাখতে হবে সেই স্থান যেন আবার আরামদায়ক না হয়। নয়তো পড়ার চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমের সাগরে ডুবে গেছেন তা টেরই পারবেন না। এজন্য পড়ার স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা চাই। 

স্মার্ট ডিভাইস থেকে দূরে থাকুন

পুরো সিমেস্টার হেলায় নষ্ট করার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান যার, তার থেকে নিজেকে এক রাতের জন্য ছুটি না নিতে পারলে পরীক্ষায় পাশ করার আশা ছাড়তে হবে। জ্বি, ঠিক ধরেছেন। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবসহ সব ধরনের স্মার্ট ডিভাইস থেকে দূরে থাকতে হবে। পরীক্ষার উপকরণের সফট কপি পড়ার ছুতোয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারার ধান্দা করলে ক্ষতি হবে কিন্তু আপনারই। তাই আগে থেকে ম্যাটারিয়ালের হার্ড কপি বের করে রাখুন। 

স্বাস্থ্যকর খাবার খান 

পড়ার সময় মন শান্ত রাখতে কিছুক্ষণ পরপর চকলেট, সফট ড্রিংক খেতে ভালোবাসেন অনেকে। সারারাত জেগে থাকার জন্য ঘন ঘন চা, কফিও পান করেন কেউ কেউ। এতে সাময়িক এনার্জি পেলেও পরে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে, তা জানেন কি? ভেবে দেখুন, রাত জেগে যে পড়াশোনা করলেন পরের দিন তা যদি শারীরিক দুর্বলতার জন্য খাতায় লিখতেই না পারেন তাহলে লাভ কী হবে? এর চেয়ে পুষ্টিকর শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিছু ভিটামিন সমৃদ্ধ ফলমূল পরীক্ষার প্রস্তুতিতে বেশ উপকারীও বটে। যেমন, আপেল মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং ক্যাফেইনের কাজও করে। 

অ্যালার্ম সেট করুন

পড়তে বসার সময় ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস থাকলে সামনে একটি এলার্ম ঘড়ি রাখুন। নির্দিষ্ট সময় পরপর এলার্ম সেট করে নিন। এ ছাড়া কোনো টপিকে কতক্ষণ সময় দেওয়া প্রয়োজন তা ভাগ করে নিতেও সহজ হবে। মনোযোগ ধরে রাখতে পোমোডোরো কৌশলের মতো ৫ মিনিটের ব্রেক নিয়ে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া, মোবাইল ফোন থেকে দূরে রাখতে কিছু অ্যালার্ম অ্যাপও বেশ ভালো কাজ করে। 

প্রস্তুতি শুরু করুন 

পড়তে বসার আগে সব বইখাতা, ম্যাটারিয়াল, কলম, হাইলাইটার এবং ফ্ল্যাশকার্ড সব গুছিয়ে নিন। যেসব প্রশ্ন পূর্ববর্তী পরীক্ষায় একাধিকবার এসেছে সেগুলো আলাদা করে ফেলুন। সেসব বিষয়ে ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন আসতে পারে তা ভাবুন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হাইলাইট করুন। একসঙ্গে সব মুখস্ত করতে যাবেন না। সময় কম থাকায় কি-ওয়ার্ড দিয়ে পয়েন্ট মনে রাখার চেষ্টা করুন।

মূল ধারণায় ফোকাস করুন এবং প্রয়োজনীয় সূত্র মুখস্ত করুন। আপাতত বিশদ বিবরণ পড়া থেকে বিরত থাকুন। সব বিষয়ে ধারণা নেওয়ার পর সময় পেলে বিস্তারিত পড়ুন। এক রাতে সব পড়ার বৃথা চেষ্টা করবেন না। ক্লাসে শিক্ষক যেসব বিষয়ে জোর দিয়েছেন সেগুলো আগে পড়ুন। তারপর বিকল্প বিষয়গুলোতে চোখ বুলান। 

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফ্ল্যাশকার্ডে নোট করুন। বিভিন্ন অধ্যায় ও বিষয়ের জন্য আলাদা রঙের ব্যবহারে সহজ ও জটিল বিষয়গুলো মনে রাখা সহজ হবে। লেখা শেষে জোরে জোরে পড়ুন। অধ্যায়ের শেষে প্রশ্ন থাকলে তা সমাধান করতে ভুলবেন না যেন। 

বিশ্রাম নিন

পড়া শেষে পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় কলম, প্রবেশপত্র, স্কেল, পানির বোতল সবকিছু গুছিয়ে রাখতে হবে। মনে রাখবেন, পরীক্ষায় ভালো করার জন্য তথ্য মনে রাখা ভীষণ জরুরি। এজন্য মানসিক চাপ কমাতে বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটার পর ঘুমাতে গেলে উপকার হবে। একেবারে না ঘুমিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া উচিত নয়। ঘুমানোর আগে নির্দিষ্ট সময়ে উঠতে এলার্ম সেট করতে হবে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে অল্প হলেও খেয়ে যেতে হবে।

পরীক্ষা দিতে যান

হলে যাওয়ার আগে ফ্ল্যাশকার্ড, নোট আবার পড়ুন। কোনো ক্ষেত্রে দ্বিধা থাকলে বন্ধুদের জিজ্ঞেস করুন। পরীক্ষা শুরুর আগে সব চিন্তা ভুলে যান। মাথা ঠান্ডা রেখে সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। প্রস্তুতি ভালো হলে পরীক্ষাও ভালো হবে। 

মনে রাখবেন, এক রাতে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কখনো সেরা ফলাফল করা সম্ভব হয় না। তাই যারা এ নিয়ে উৎসাহ দেবেন তারা আপনার ভালোর অংশীদার হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। তাই আগে থেকে পড়া শুরু করুন, মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকুন। 

 

Comments