সেমিস্টার ব্রেকে আনন্দে আনন্দে শেখা
সেমিস্টার ব্রেক মানেই পড়ালেখা থেকে কিছুদিনের জন্য ছুটি। ক্লাস-পরীক্ষার ব্যস্ততা থেকে যেন ফুরসত মেলে। তাই বলে শুধু বিশ্রাম নিয়ে ছুটি কাটানো কি উচিত?
একটু ভিন্নভাবে কাজে লাগালে যদি উপকারে আসে তবে তার পরিকল্পনা করলে মন্দ হয় না। এবার জেনে নিন সেমিস্টার ব্রেক কাটানোর পরিকল্পনা করবেন যেভাবে।
সবকিছু গুছিয়ে রাখুন
অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজ, প্রেজেন্টেশন, পরীক্ষার ক্লান্তিকর দিনগুলো থেকে ছুটি মিলেছে, তবে কোথাও যেন সেই চাপ রয়েই গেছে? আপনার ঘর, পড়ার টেবিল, বুক শেলফের দিকে তাকান। বই-খাতা, কলম, ম্যাটারিয়ালের একগাদা শিট এখানে-সেখানে পড়ে থাকলে মানসিক প্রশান্তি মিলবে? ছুটির শুরুতেই কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সেগুলো গুছিয়ে ফেলুন সবার আগে। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এক জায়গায় রেখে বাকিসব ঠিক জায়গায় রাখুন। পরীক্ষার রুটিন, পুরোনো সিলেবাস, ফ্ল্যাশকার্ড আর কাজে না লাগলে সরিয়ে ফেলুন। আগের চেয়ে চাপ কম লাগবে।
কাছে বা দূরে ঘুরতে যান
পরীক্ষা শেষের আনন্দ কয়েকগুণ বেড়ে যেতে পারে পছন্দের জায়গায় ঘুরতে গেলে। সেমিস্টার শেষ হতেই বাড়ি না গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা দেওয়া, বাইরে খেতে যাওয়া বা আশপাশের কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। ঢাকার ভেতর কোন জায়গাগুলো বাজেট ফ্রেন্ডলি সেগুলোর তালিকা করে ফেলুন। বন্ধুদের পরামর্শ নিয়ে কোন জায়গায় ডে ট্যুর দেওয়া যায় তার পরিকল্পনা করুন। বাজেট বেশি হলে চা বাগান, পাহাড়ি এলাকা, সমুদ্রেও ঘুরে আসতে পারেন। সেখান থেকে সুন্দর মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করে আত্নীয়-স্বজনের বাড়িতেও যেতে পারেন।
শরীর ও মনের যত্ন নিন
পড়ালেখার চাপে সবসময় নিজের যত্ন নেওয়া সম্ভব হয় না। অনেকে ব্যায়াম করা তো দূর, ঠিকঠাক খাবারও খেতে পারে না। ছুটিতে সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ করার চেষ্টা করলে মন্দ হয় না। সারাদিন ঘরে শুয়ে-বসে না থেকে হাঁটাহাঁটি করা যেতে পারে। মেডিটেশনের অভ্যাস না থাকলে তা-ও শুরু করতে পারেন এ সুযোগে। জিমে যেতে না পারলেও ইউটিউব ভিডিও, অ্যাপের নির্দেশনা মেনে ব্যায়াম করলে উপকার হবে। সেই অনুযায়ী সকালে কিছুক্ষণ জগিং করতে পারেন নিরিবিলি পরিবেশে। সাইকেল চালিয়ে কিছুদূর ঘুরেও আসতে পারেন বন্ধুদের নিয়ে। এতে মনও প্রফুল্ল থাকবে।
নতুন কিছু শিখুন
ভবিষ্যতে নিজেকে আরও যোগ্য করে তুলতে ছুটির দিনগুলো কাজে লাগানো যেতে পারে। দিনের কয়েক ঘণ্টা নিজের জন্য ব্যয় করলে নিজেরই উপকার হবে, আবার আনন্দে সময়ও কাটবে। সেমিস্টার ব্রেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কিছু শিখতে পারেন। সেটি হতে পারে গাড়ি চালানো, রান্না করা, সফটওয়্যার শেখা, নতুন ভাষা জানাসহ নানা কিছু। অনেক সময় ছোটোখাটো বিষয় থেকে আগ্রহ পেলে নতুন পরিকল্পনার দ্বারও উন্মুক্ত হয়। এ ছাড়া, নিজস্ব বিভাগের নানা কোর্সের বিস্তারিত ধারণা পেতে পারেন বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন কোর্সে অংশগ্রহণ করে। সেখান থেকে পাওয়া ম্যাটারিয়াল পড়ে সামনের পরীক্ষাগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী কাজ করুন
ছুটিতে নিজের সিভিতে যোগ করা যায় এমন কাজ করার পরামর্শ দেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে ছুটি বেশিদিন হলে ইন্টার্নশিপ অথবা পার্টটাইম চাকরি করা যেতে পারে। এজন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খোঁজখবর রাখুন। সিনিয়রদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আর ছুটি কয়েক দিনের জন্য হলে নিজের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, দলীয় কাজের অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা বিকাশের সুযোগ সন্ধান করাই যুক্তিসঙ্গত। এ ক্ষেত্রে অনেক সংস্থা রয়েছে যারা দিনব্যাপী স্বেচ্ছাসেবী প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করে। সেগুলোতে সম্পৃক্ত হতে পারলে ভবিষ্যতে ভালো সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তা ছাড়া, নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি সার্টিফিকেট, সুপারিশও পেতে পারেন সেমিস্টার ব্রেকে।
নতুন সেমিস্টারের প্রস্তুতি নিন
ভবিষ্যতের দিনগুলোর জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিলে ভালো হবে পড়ালেখা শুরু হয়ে গেলে ভাবা হয়ে ওঠে না সেভাবে। এজন্য সেমিস্টার ব্রেকে বাস্তব পরিকল্পনার জন্য নিজের সামর্থ্য, ঘাটতি নিয়ে ভাবুন। কী করলে ভালো ফলাফল হবে সিনিয়রদের কাছ থেকে পরামর্শ নিন। চাকরির জগতে আপনার পঠিত কোন বিষয়গুলো কাজে লাগবে তা জানার চেষ্টা করুন। যারা ভালো জায়গায় কাজ করছেন তাদের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা থেকে ধারণা নিয়ে নিজের জন্য প্রয়োজন পড়বে এমন স্বল্প ও মেয়াদী পরিকল্পনা করুন। আসন্ন সেমিস্টারের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলোর চার্ট বানান। আগে শেখা বিষয়গুলো প্রয়োজন পড়লে গুছিয়ে রাখুন। আগের করা ভুলগুলো থেকে কী শিখেছেন সেগুলো মনে রাখুন। প্রতিবারের মতো 'আগামী সেমিস্টারে ভালো করে পড়ব' বলে মিথ্যা প্রতিজ্ঞা না করে সত্যিই তা করে দেখান।
Comments