ছাত্র রাজনীতি ও অন্যান্য

মারধরে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের ক্ষমা করল রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষ

ছাত্রলীগ নেতা রাশিক দত্ত মারধরের অভিযোগ স্বীকার করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চান। ছাত্রলীগ নেতারা মারধরে জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
রাজশাহী কলেজ
রাজশাহী কলেজ। ছবি: আনোয়ার আলী/স্টার

মিছিলে না যাওয়ায় রাজশাহী কলেজ হোস্টেলে অন্তত ২৫ শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের ক্ষমা করে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। 

আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় কলেজের মহানগর ছাত্রলীগের ২ কর্মী কলেজের মুসলিম হোস্টেলে ঢুকে শিক্ষার্থীদের মারধর করে। এসময় তাদের সঙ্গে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের অন্তত ১০ কর্মী ছিলেন বলে জানা গেছে। মিছিলে না যাওয়ায় হোস্টেলের অন্তত ২৫ শিক্ষার্থীকে মারধর করে তারা। এ সময় অনলাইন পোর্টালের ২ জন সাংবাদিকও মারধরের শিকার হন।

এর আগে, গত সপ্তাহেও কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

আজ সকালে ছাত্রলীগের মারধরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি ঘোষণা করলে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের ডেকে নিয়ে বৈঠকে বসে। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে কলেজ শাখার ছাত্রলীগ নেতা, মহানগর ছাত্রলীগ নেতা, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

মারধরে জড়িতদের মধ্যে শাহরুখ ও রিফাত মহানগর ছাত্রলীগ কর্মী। এ ছাড়া কলেজ শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান ও আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। তারা সবাই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী।

বৈঠকে ছাত্রলীগ নেতা রাশিক দত্ত মারধরের অভিযোগ স্বীকার করে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চান। বৈঠকে তিনি ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের চড় মারেন এবং তাদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে কর্তৃপক্ষ তাদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল খালেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ ঘটনায় জড়িত দুজন কলেজের শিক্ষার্থী নন। তাই ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতিশ্রুতিতে তাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে।'

হোস্টেলে ঢুকে মারধরের ঘটনায় কলেজ শাখার ছাত্রলীগের কোনো কর্মী জড়িত নন বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে এক সপ্তাহ আগেও ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় একইভাবে শিক্ষার্থীদের মারধরের একটি অভিযোগ পেয়েছিলেন অধ্যক্ষ। সেই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমরা তাদেরকেও ক্ষমা করে দিয়েছি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এরকম আর কখনো করবে না।'

এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজকে টর্চার সেলে পরিণত করেছে। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত না হলে তাকে মারধর করা এখন একটি নিয়মিত ঘটনা। এমনকি রিপোর্টার্স ইউনিটি, রোভার স্কাউট সদস্যরাও এ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না।

কলেজ কর্তৃপক্ষ নিপীড়নের বিরুদ্ধে বারবার কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিলেও নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছেন শিক্ষার্থীরা।

কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আব্দুল হাকিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে আমাদের কিছুই করার ছিল না।'

 

Comments