রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরবেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা

‘যদি কারো শিবিরের কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা সেক্ষেত্রে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
বুয়েট
ব্রিফিংয়ে আন্দোলরনরত শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার

ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত থাকলে, অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত থাকলে এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে শিক্ষার্থীরা অনতিবিলম্বে একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরত যাবেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।   

আজ রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে বুয়েটের শহীদ মিনারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তারা।

মধ্যরাতে বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের প্রবেশের ঘটনায় দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ছয় দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

আজ ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, ইতোমধ্যে পরীক্ষা রিশিডিউল করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

এ সময় তারা বলেন, 'ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ নিরাপত্তাজনিত শঙ্কার কারণে সমাগম করেনি। ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় গতকাল রাত থেকে ক্রমাগত মাইকিং করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ফোন কলে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা রকম গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের মিথ্যা ট্যাগ দেওয়া হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ছবি-নাম-পরিচয় পোস্ট করে তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা গুরুতরভাবে বিঘ্নিত করে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এ অবস্থায় বুয়েট ক্যাম্পাস এবং আশপাশের এলাকা বুয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এমনকি বুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরেও শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।'

তারা আরও বলেন, 'নিরাপত্তাজনিত কারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের আজ ক্যাম্পাসে অবস্থান না নেওয়া মানে এই নয় যে, তারা তাদের দাবি থেকে সরে এসেছেন। আজ বুয়েটের ২০ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ১ জন বাদে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত ছিলেন। ১২১৫ জন ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২১৪ জনই পরীক্ষায় অংশ নেননি। এ থেকেই শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত নৈতিক অবস্থান ক্যাম্পাসে আবারও ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কতটুকু সুদৃঢ়, তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।'

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, 'সম্প্রতি মিডিয়ায় বুয়েটে আন্দোলনরত বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। আমরা আবারও সাফ জানিয়ে দিতে চাই যে আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের বিরুদ্ধে নয়, বুয়েট ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের সব ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে।'

'বুয়েট শিক্ষার্থীরা বরাবরই একটি নিরাপদ এবং সুস্থ ক্যাম্পাস চেয়ে এসেছেন, যেখানে ক্ষমতাচর্চার শেকলে আবারও জিম্মি হয়ে যাবে না নিরাপত্তা, শিক্ষাঙ্গনের উপযুক্ত পরিবেশ। সুস্থ নেতৃত্ব এবং নৈতিকতা বিকাশের সব উপাদান ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির উপস্থিতি ছাড়াও গত কয়েক বছরে উপস্থিত ছিল এবং এতে সুস্থ নেতৃত্বের চর্চায় শিক্ষার্থীরা তাদের উপযুক্ত পরিবেশ পেয়েছেন। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসে গত ৫ বছর এত সফলতার পরও ক্যাম্পাসকে নিয়ে নানা অপবাদ দেওয়া কখনোই যৌক্তিক বলে মনে করেন না বুয়েটের শিক্ষার্থীরা', যোগ করেন তারা।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, 'ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না চাওয়া মানেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মতাদর্শ থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়। আমরা শুধু চাই যে ক্ষমতার লোভ এবং অপচর্চা আবারও এসে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে না ফেলুক।'

'বর্তমানে হিজবুত তাহরীর নিয়ে কথা উঠেছে। এটি কোনো রাজনৈতিক দল না, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন। তাদের কর্মকাণ্ড আমরা ক্যাম্পাসে দেখতে পাই বহিরাগতদের লাগানো পোস্টার, মেইল বা প্রচারপত্র ইত্যাদির ভিত্তিতে। আমাদের ইন্সটিটিউশনাল মেইলে হিজবুত তাহরীর সংক্রান্ত মেইল দেখার পর অনতিবিলম্বে ডিএসডাব্লিউ স্যারকে জানানো হয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই। এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ চাওয়া হয়। পরে ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করে অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে স্যার জানান, বুয়েট এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর আগেও বিগত ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তাদের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবহিত করার রেকর্ড আছে। আমরা নিঃসন্দেহে হিজবুত তাহরীরের সম্পূর্ণ বিপক্ষে এবং এ জাতীয় অপশক্তির উত্থান যেন বুয়েটে না হয় সেজন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ', বলেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলেন, 'যে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিবিরের কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগ আসছে তাদের ঘটনাটি বুয়েটের বাইরে হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এই ঘটনার বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তাদের সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত আহ্বান জানাই। এটি আমাদের আগের একটি আন্দোলনের অন্যতম দাবি হিসেবে ছিল। আদালতে বর্তমানে এই মামলাটি বিচারাধীন এবং এই বিচার প্রক্রিয়ার রায় সাপেক্ষে যদি এ রকম কোনো শিক্ষার্থীর শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা তাৎক্ষণিক তাদের বহিষ্কারের দাবি জানাব।'

'গণমাধ্যমে ছাত্রশিবিরের সাবেক প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, তাদের বুয়েটে কার্যক্রম আছে। কোনো প্রমাণ ব্যতীত এই ধরনের বক্তব্যের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং একইসঙ্গে যদি কারো শিবিরের কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়, আমরা সেক্ষেত্রে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই', যোগ করেন তারা।

তারা আরও বলেন, 'দফায় দফায় প্রতিবাদ জানানোর পরও ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টরা বুয়েট শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের ইচ্ছাকে সম্মান না করে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার নানা রকম উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্রমাগত অসন্তোষ এখন তীব্র আন্দোলনে রূপ নিয়েছে শুধু একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চাওয়ার দাবি থেকেই। তাই আমরা সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি ভুল প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য। আমরা শপথ করছি সব রাজনৈতিক ও নিষিদ্ধ সংগঠন থেকে বুয়েটকে মুক্ত রাখার। আমরা আবরার ফাহাদ ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না।'

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। বুধবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে এর প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাত দেড়টায় বুয়েটের মূল ফটক দিয়ে মোটরসাইকেল ও গাড়ি নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকেন ছাত্রলীগের অন্তত ৭০-৮০ জন নেতাকর্মী। সাদ্দাম হোসেনও সেখানে ছিলেন। তারা ক্যাফেটেরিয়ার সেমিনার কক্ষে বৈঠক করেন, সেখানে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন ছিল। মোটরসাইকেল, গাড়ি নিয়ে দীর্ঘসময় ধরে ক্যাম্পাসে 'শোডাউন' করেছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

 

Comments

The Daily Star  | English

Driest April in 43 years

Average rainfall in Bangladesh was one millimetre in April, which is the record lowest in the country since 1981

12h ago