একই ভুল বারবার হলে তা দুর্ঘটনা নয়

কথায় আছে, কোনো ভুল বারবার ঘটতে থাকলে সেটি আর ভুলের পর্যায়ে থাকে না। ভুলের পুনরাবৃত্তি মানে ভুলটিকে গ্রহণ করে নেওয়া। এমন ভুলের ফলে ঘটা যে কোনো ‘দুর্ঘটনাকে’ পূর্বপরিকল্পিত বলাই শ্রেয়। বিএম ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
গত ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের পর আগুন। ছবি: মো. সুমন/স্টার ফাইল ফটো

কথায় আছে, কোনো ভুল বারবার ঘটতে থাকলে সেটি আর ভুলের পর্যায়ে থাকে না। ভুলের পুনরাবৃত্তি মানে ভুলটিকে গ্রহণ করে নেওয়া। এমন ভুলের ফলে ঘটা যে কোনো 'দুর্ঘটনাকে' পূর্বপরিকল্পিত বলাই শ্রেয়। বিএম ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো বিস্ফোরণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

কিছু কনটেইনারে থাকা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদন অনুসারে, স্মার্ট গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আল-রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের কেমিক্যালে ঘটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এটিই প্রথম নয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণের আগে কম্বোডিয়াগামী একটি জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়েছিল আল-রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সকে। তাদের পাঠানো হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের চালানে অননুমোদিত প্লাস্টিকের জেরিক্যান (ছোট কনটেইনার) ব্যবহার করার কারণেই আগুন লেগেছে জানিয়ে তাদের সতর্কও করা হয়।

আগুনে জাহাজের মেঝে সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনার তদন্তকারীরা পরে উল্লেখ করেছেন, জেরিক্যানগুলো কেমিক্যালের চাপ ধরে রাখতে না পেরে বিস্ফোরিত হয়েছিল।

সীতাকুণ্ড বিস্ফোরণ ওই দুর্ঘটনারই আরও বড় এবং আরও ভয়ঙ্কর পুনরাবৃত্তি, যা চাইলেই এড়ানো যেত। ডিপোয় অনিরাপদ ও অননুমোদিত হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড তো ছিলই, তার ওপর যথাযথ অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় এবং তথ্য গোপন করার কারণে এটি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। কম্বোডিয়ার ঘটনার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ নিলে হয়তো এত প্রাণহানি হত না।

এখানে আরও বিষয় আছে। আমাদের প্রায় অর্ধেক পণ্য বিদেশে রপ্তানির কাজে ব্যবহৃত হয় সিঙ্গাপুর বন্দর। এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞায় শুধু হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের রপ্তানি সম্ভাবনাই প্রভাবিত হবে—তা নয়। ক্রেতা ও বন্দর কর্তৃপক্ষ আস্থা হারালে পুরো রপ্তানি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, তাতে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ডের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবকাঠামো- প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির অভাবে আমাদের শিল্প সুরক্ষা রেকর্ড ইতোমধ্যেই তলানিতে ঠেকেছে।

আমরা সরকার ও সব দায়িত্বশীল অংশীদারদের সাম্প্রতিক বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নেওয়ার এবং সুরক্ষা প্রটোকল সবসময় যথাযথভাবে অনুসরণ নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি, যেন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা অন্য সবার ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায় বা এই ধরনের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে না নিয়ে যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago