ত্রাণ কার্যক্রমে সমন্বয় আনার এখনই সময়

নতুন করে বন্যাকবলিত কিছু এলাকায় পানি থাকলেও, সিলেট ও এর আশপাশের জেলাগুলোয় তা কমতে শুরু করেছে। এখন ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগের আরও স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠছে। এটি স্পষ্ট যে, এই বন্যার জন্য প্রকৃতির দায় যতটা, মানুষের দায়ও ঠিক ততোটাই।
ছাতকের আলমনগরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া খাবার নিয়ে যেতে সেনাবাহিনীর স্পিডবোটের সহায়তা। ছবি: শেখ নাসির/স্টার ফাইল ফটো

নতুন করে বন্যাকবলিত কিছু এলাকায় পানি থাকলেও, সিলেট ও এর আশপাশের জেলাগুলোয় তা কমতে শুরু করেছে। এখন ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্ভোগের আরও স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠছে। এটি স্পষ্ট যে, এই বন্যার জন্য প্রকৃতির দায় যতটা, মানুষের দায়ও ঠিক ততোটাই।

অপরিকল্পিত ত্রাণ কার্যক্রম ও ওই অঞ্চলের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম কীভাবে এই বন্যা দীর্ঘায়িত করেছে, তা আমাদের সাম্প্রতিক ২ প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে।

অপরিকল্পিত ত্রাণ কার্যক্রম এই মুহূর্তে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপর্যাপ্ত সরকারি ত্রাণ নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনা চলছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কেন্দ্রীয় তদারকি ছাড়াই বেসরকারি উদ্যোগে এলোমেলোভাবে খাবার ও ওষুধ বিতরণ কার্যক্রম।

আমাদের জানানো হয়েছে, বন্যার প্রায় ২ সপ্তাহ পার হওয়ার পর কর্তৃপক্ষ এখন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও কমিউনিটি নেতাদের নিয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি সব ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এটি অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু, সরকারের প্রস্তুতির অভাবে ওই অঞ্চলের মানুষ এতদিন যে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গেছেন, সেদিকে তাকালে এখন এই উদ্যোগ কারো মনে আনন্দ জাগানোর কথা না।

এ ছাড়া, এ ধরনের ত্রাণ বিতরণ প্রচেষ্টায় অতীতে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে সুযোগের অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাতে শিগগির দুর্ভোগ অবসানের কোনো নিশ্চয়তাও নিয়ে আসে না এই উদ্যোগ।

আমরা ইতোমধ্যে এই বন্যার বেদনাদায়ক পরিণতি দেখেছি। মানুষ যার যার পরিবার ও গবাদি পশুর জন্য ত্রাণ পেতে মরিয়া হয়ে আছেন। সংবাদপত্রের প্রতিবেদনগুলোয় তাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার হৃদয়বিদারক ঘটনার চিত্র দিয়ে ভরা।

এ ছাড়া, বন্যার কারণে গত ১৭ মে থেকে ২৩ জুনের মধ্যে অন্তত ৭৩ জন মারা গেছেন বলে জানা গেছে। এ সবই প্রমাণ করে, এই কমিটি ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে অবশ্যই সৎ হতে হবে ও দ্রুত কাজ করতে হবে।

সরকারকেও নিজের ফান্ড থেকে আরও ব্যয় করে তাদের সমর্থন দিতে হবে।

গত ২ সপ্তাহে এই অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য ও গবাদি পশু পালন খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা চালানো প্রয়োজন।

সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত ৩২ বছরে হাওরের প্রায় ৮৬ শতাংশ ভরাট হয়েছে। বিপজ্জনকভাবে হাওরের পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং বন্যা দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

যে কোনো পুনর্গঠনকে দীর্ঘমেয়াদী করার জন্য আমাদের অবশ্যই আরও বৃহৎ পরিসরে চিন্তা করতে হবে। সেজন্য উন্নয়ন কাজ ও হাওর সংরক্ষণের অগ্রাধিকারগুলোর নিরবচ্ছিন্ন একীকরণের সুযোগ তৈরি করতে হবে।

আমরা সরকারকে ভবিষ্যতের দিকে নজর রেখে ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানাই। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এসব উদ্যোগ ত্বরান্বিত করতে হবে। একইসঙ্গে এগুলোর আওতা বাড়াতে হবে, যেন সব ক্ষতিগ্রস্তরা উপকৃত হন।

Comments