বন্যার ঝুঁকি কমানোর উপায় বের করতে হবে

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এবার এ সংকট আরও বড় পরিসরে দেখা গেছে।
ছবি: মাইনুল ইসলাম শাওন

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এবার এ সংকট আরও বড় পরিসরে দেখা গেছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অধিকাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। নতুন নতুন এলাকা এত দ্রুতগতিতে প্লাবিত হওয়ার বিষয়টি মানুষকে হতবাক করছে। বর্তমানে ১৭টির মতো জেলা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

গত বুধবার ভারি বৃষ্টিপাত এবং ভারতের মেঘালয় ও আসাম থেকে প্রবাহিত পানির কারণে এ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ কয়েকদিনে ভারতের সেসব স্থানে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি ভয়াবহ। সেসব জেলায় ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি বলে জানা গেছে। জেলার সব উপকেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সময় যত গড়াচ্ছে, উদ্ধার ও ত্রাণের আর্তি ততই বাড়ছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী উদ্ধার অভিযানে নামলেও পানির কারণে বন্যা কবলিত অনেক এলাকায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। সেসব এলাকার মানুষের সংগ্রাম ও বিধ্বস্ত অবস্থার চিত্র দৃশ্য বেদনাদায়ক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনামগঞ্জে বন্যা-রক্ষা বাঁধের অনুপস্থিতি, হাওর ও অন্যান্য জলাশয়ের মাটি ভরাট, পাহাড় ধ্বংস, বন উজাড় ও ভারতের উজানে খননসহ বেশ কিছু কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

জলাশয় দখল করে নির্মিত অনেক স্থাপনার কারণে পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। পানিও কমছে না। এটি আমাদের জন্য আরেকটি সতর্কবার্তা। কারণ বন্যা এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ঘটতে থাকা জলবায়ু ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের বন্যার ঝুঁকি কমাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?

এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার হচ্ছে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করা এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ ও ওষুধ সরবরাহ করা। আমাদের জানানো হয়েছে, ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার আশঙ্কা থাকায় শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি না-ও হতে পারে। এটি খারাপ খবর।

স্থানীয় প্রশাসনের উচিত আরও কঠিন সময়ের জন্য প্রস্তুত হওয়া এবং নিজেদের সেই প্রস্তুতি মূল্যায়ন করে দেখা।

খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাসহ উঁচু জায়গায় থাকা সব স্কুল-কলেজকে বন্যাদুর্গতদের আশ্রয়ের জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রস্তুত করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দিতে হবে। জেলাগুলোয় যাতে খাদ্য সংকট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর সব সরকারি সংস্থাকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টিকে নিয়ে আরও বড় পরিসরে চিন্তা করা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের বন্যার ঝুঁকি যতটা সম্ভব কমানোর উপায় খুঁজে বের করা।

Comments