আখাউড়া স্থলবন্দরে ৬ বছরে ৭৭ শতাংশ রপ্তানি কমেছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গত ৬ বছরে রপ্তানির পরিমাণ ৭৭ শতাংশ কমেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং দেশটির অন্যান্য অংশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।
আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে তোলা। ছবি: মাসুক হৃদয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গত ৬ বছরে রপ্তানির পরিমাণ ৭৭ শতাংশ কমেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য এবং দেশটির অন্যান্য অংশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি কমেছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

এ ছাড়াও, উভয় দেশ পরিবহন খরচ কমাতে এবং আরও সুবিধার জন্য অন্যান্য বন্দরের মাধ্যমে বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে আগ্রহী।

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরে প্রক্রিয়াজাত পাথর, রড, টাইলস, সিমেন্ট, গ্লাস, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল এবং মাছ

পাঠানোর জন্য একসময়ের সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী এই বন্দর ব্যবহার করা হতো। এসব পণ্য ভারতীয়দের পক্ষে তাদের নিজ দেশের মধ্যে সরবরাহ করা তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ ছিল বলে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো আগে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করত। তবে, এখন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে উন্নত রেল যোগাযোগের কারণে দৃশ্যপটের পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৫.৬৮ লাখ টন পণ্য ভারতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৭৭ শতাংশ কমে ১.৩২ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।

১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বন্দর দিয়ে রপ্তানির পরিমাণ চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) আরও কমেছে। চলতি অর্থবছরের গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৬৪ হাজার ৩৬৩ টন পণ্য ভারতে পাঠানো হয়।

আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ত্রিপুরায় প্রচুর পরিমাণে পাথর পাঠাতেন। কিন্তু পাথর রপ্তানি এখন প্রায় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ, ভারতীয় ক্রেতারা এখন আখাউড়া থেকে পাথর আমদানি করা বন্ধ করছে। এছাড়া তারা আসাম থেকে পাথর সংগ্রহ করে, কারণ এই কয়েক বছরের মধ্যে তাদের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। তবে, এই বন্দর দিয়ে মাছ, প্লাস্টিক ও কৃষি যন্ত্রপাতি রপ্তানি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রিমিয়ার সিমেন্ট কারখানার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক জানান, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় তারা অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে সিমেন্ট রপ্তানি করেন।

তিনি বলেন, 'একটি স্থলবন্দর বেছে নেওয়ার সময় সবাই বৈচিত্র্যময় রপ্তানি সুবিধা খোঁজেন। আমরা আখাউড়া স্থলবন্দর ব্যবহার করতাম, যখন এটি দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী বন্দর ছিল।'

একই মন্তব্য করেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন বিভাগের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, 'বন্দরে পণ্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সব দিক বিবেচনা করা হয়। ভারতে প্রাণ-আরএফএল-এর পণ্য রপ্তানির একটি বড় অংশ সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের তামাবিল স্থলবন্দরের মাধ্যমে মেঘালয়ে পাঠানো হয়। ফলে, এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরের দূরত্ব এবং পরিবহন খরচের বিষয় তাদের চিন্তা করতে হয়।'

আখাউড়া স্থলবন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহমেদ খলিফা বলেন, 'আগে বাংলাদেশ এই বন্দর দিয়ে সরাসরি ভারতে পণ্য রপ্তানি করত। কিন্তু, এখন ভারত তার উন্নত রেল পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে কলকাতা থেকে সরাসরি ত্রিপুরা রাজ্যে পণ্য পরিবহন করছে। ফলে, রপ্তানি কয়েক বছর ধরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।'

খলিফা আরও বলেন, 'রপ্তানি কমার আরেকটি কারণ হল- আমাদের দেশে সয়াবিন এবং পাম তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়া।'

যোগাযোগ করা হলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহকারী মহাব্যবস্থাপক তসলিম শাহরিয়ার বলেন, 'ভারতে এখন কোনো ভোজ্য তেল যাচ্ছে না। বাজার প্রতিযোগিতা, শুল্ক সমস্যা এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা- ভোজ্যতেল রপ্তানি কমে যাওয়ার পিছনে প্রধান কারণ।'

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী মো. আক্তার হোসেন বলেন, 'অনেক পণ্যের দাম বাংলাদেশে বেশি থাকার কারণে অর্থাৎ বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা রপ্তানি কমে যাওয়ার একটি বড় কারণ।'

তিনি বলেন, 'গত বছর আমি ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করার পর ভারতে কয়লা রপ্তানি করেছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম বাড়ায় আমি এ বছর তা রপ্তানি করতে পারছি না।'

তিনি জানান, অন্তত ৫ থেকে ৭ বছর ধরে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে পাথর রপ্তানি বন্ধ আছে। এ ছাড়া, এখন ভোজ্যতেল রপ্তানিও বন্ধ আছে। আগে বন্দরে রপ্তানি ট্রাকের বিশাল সারি দেখা যেত কিন্তু, বর্তমানে দৃশ্যপট ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

6h ago