গরুর মাংসের ঘরোয়া রান্না

১৯৭৫ থেকে ৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত শবেবরাতের দিন এলেই আমাদের আসাদগেট নিউকলোনিতে সকাল থেকে একটা হুল্লোড় পড়ে যেত। হালুয়া, রুটির জন্য এই হুল্লোড় নয়, এটা ছিল গরুর মাংস ভাগাভাগি করার একটা আয়োজন। সেদিন খুব ভোরে গরুর মাংসের ভাগ বিক্রি হতো কলোনির বড় মাঠে। কলোনির ছেলেরাই আয়োজন করত। সেই ভাগ কিনে নিয়ে শবেবরাতে প্রায় সব বাড়িতে রান্না হতো। চালের আটার রুটির সঙ্গে সেই পাঁচমিশালি ভুনা মাংসের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।
ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ/স্টার

১৯৭৫ থেকে ৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত শবেবরাতের দিন এলেই আমাদের আসাদগেট নিউকলোনিতে সকাল থেকে একটা হুল্লোড় পড়ে যেত। হালুয়া, রুটির জন্য এই হুল্লোড় নয়, এটা ছিল গরুর মাংস ভাগাভাগি করার একটা আয়োজন। সেদিন খুব ভোরে গরুর মাংসের ভাগ বিক্রি হতো কলোনির বড় মাঠে। কলোনির ছেলেরাই আয়োজন করত। সেই ভাগ কিনে নিয়ে শবেবরাতে প্রায় সব বাড়িতে রান্না হতো। চালের আটার রুটির সঙ্গে সেই পাঁচমিশালি ভুনা মাংসের স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে।

আব্বা সেই মাংস এনেই বলতেন, 'বেশ ঝালে-ঝসে দিয়ে রান্না কর'। অর্থাৎ লাল ঝোলে আর তেলে রান্না। আসলে গরুর মাংসের সব অংশ মিলিয়ে যখন রান্না করা হয়, যেমন: কলিজা, মাথা, রান, শিনা বা কুঁজের মাংস, তখন এক অন্যরকমের স্বাদ হতো। এখনো ছুটির দিনে এরকম একটা উদ্যোগ নিলে কেমন হবে সেটাই ভাবছি।

গরুর কিছুই বাদ যায় না

গরুর মাংস যারা খান, তারা কিন্তু শুধু গরুর মাংস খেয়েই তৃপ্ত হন না। গরুর ভুঁড়ি বা বট, কলিজা, লেজ, খিড়ি বা ওলান, মগজ, মাথা সবকিছু আলাদাভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙালি মুসলমানের কাছে তাই গরু সবচেয়ে প্রিয়।

তিল্লিখান পোড়া দেওয়ার নাগেছে

একবার কোরবানি ঈদে গ্রামের বাড়িতে গেলাম। সেখানে দেখলাম কোরবানির মাংস ভাগ করার পর আমার কাজিন হাতে করে একটা অদ্ভুত জিনিস নিয়ে এসে বলতে লাগল, 'তিল্লিখান পোড়া দেওয়ার নাগেছে।' (তিল্লিটা পোড়া দিতে হবে)। আমিতো শুনে অবাক হয়ে গেলাম, এটা আবার কী খাবার? 
দেখলাম দাদি তিল্লিটা (স্পিন) হাত থেকে নিয়ে ধুয়ে মাটির চুলায় পুড়তে দিলেন। সঙ্গে কিছু কাঁচামরিচ ও রশুন দিয়ে দিলেন চুলায় একপাশে। এরপর পোড়ানো হয়ে গেলে, সেখান থেকে তুলে সবকিছু পুদিনাপাতা দিয়ে শিলপাটায় বেটে নিলেন। বাটা তিল্লি পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে আমাদের খেতে দিলেন। বুঝলাম তিল্লি পুড়িয়ে এভাবে মজাদার ভর্তা বানানো যায়। এরপর থেকে আমি মাটির চুলার পরিবর্তে তাওয়ায় তিল্লি পুড়িয়ে ভর্তা করে খাই।

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ/স্টার

শুধু কি ভর্তা?

তিল্লির কি শুধু ভর্তা হয়? না। তিল্লি বা কলিজা এগুলো ছোট ছোট করে কেটে হলুদ, লবণ ও পানি দিয়ে জ্বাল দিয়ে পানি ফেলে দিতে হবে। চাইলে আলাদাভাবেও তিল্লি ভুনা করা যায়। আবার কলিজার সঙ্গেও মিশিয়ে ভুনা করা যায়। প্রথমে তেলের ওপর অল্প লবণ, হলুদ দিয়ে ভেজে নিতে হবে। এরপর আদা, রসুন, জিরা দিয়ে ভুনতে হবে। তেলের ওপর উঠে এলে কোয়া খুলে অনেক রসুন দিতে হবে। অল্প আঁচে রান্না করতে হবে যেন রসুন সিদ্ধ হয়ে যায়। সরিষার তেলে রান্না করলে স্বাদ আরও বেড়ে যাবে বহুগুণ। নামানোর আগে কাঁচা পেয়াজ কুচি দিয়ে নামিয়ে নিতে পারেন।

বট কিন্তু বটগাছ নয়

গরুর ভুঁড়ি বা বট অনেকেই খান না। কিন্তু যারা খান, তারা জানেন কী এর স্বাদ। এখনতো ঢাকাসহ বিভিন্ন হোটেলে বট রান্না করা হচ্ছে। যত জ্বাল হবে, তত মজা হবে খেতে। সবচেয়ে উপাদেয় ভুঁড়ি রান্না খেলাম রাজশাহীতে কালাই রুটি দিয়ে। রাস্তার ধারে লম্বা বেঞ্চি পেতে গরম গরম কালাই রুটি আর অনেক ঝাল দিয়ে গরুর ভুঁড়ি একবার খেলে আর ভোলা সম্ভব নয়। বাসায় বট রান্না করে পরোটা, রুটি বা ভাত দিয়ে খেতে খুব ভালো লাগবে।

কিছুই নেই বাকি

মানুষ এমনই খেতে পছন্দ করে যে গরুর খিরি বা ওলানও খাদ্য তালিকা থেকে বাদ যায় না। কাবাবের অধিকাংশ দোকানেই খিরি কাবাব বিক্রি হয়। কিন্তু রংপুর, দিনাজপুর এলাকায় খিরি ছোট ছোট করে কেটে অনেক ঝাল ও মশলা দিয়ে ভুনা করা হয়। কাবাবের চাইতে ওই এলাকায় খিরি ভুনা বেশি পছন্দের।

মগজের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দোকানগুলোতে মগজের কাটলেট বা কাবাব বেশি চলে। তবে বাসায় হঠাৎ হঠাৎ রান্না হয় মগজ ভুনা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নাজিরা বাজারের নীরব হোটেলের মগজ ভুনা সেই সময়কার অর্থাৎ আশির দশকের শিক্ষার্থীদের মুখে লেগে আছে। হয়তো এখনো শিক্ষার্থীরা ভিড় করে সেই মগজ ভুনা খাচ্ছে। অল্প টাকায় এত উপাদেয় মগজ ভুনা আর কোথাও পাইনি। তবে এই কথা বলে রাখি, গরুর পার্টস বা এসব হাবিজাবি মজাদার অংশ শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। তাই কালেভদ্রে এগুলো স্বাদ গ্রহণ করাই ভালো।

মিষ্টি কুমড়া দিয়ে গরুর মাংস

বাসায় যখন অল্প পরিমাণে মাংস থাকত এবং আমরা ৫ থেকে ৬ জন মানুষ রাতের খাবার খাব বলে বসে আছি, তখন আম্মাকে দেখতাম ছোট ছোট টুকরা করে মাংসটা কষিয়ে রান্না করে ফেলত। তারপর সেই মাংসের সঙ্গে পাকা মিষ্টি কুমড়া ছোট টুকরা করে মিশিয়ে দিত। এরপর অল্প অল্প চামচে করে পানি দিয়ে কষাতো। তেলের ওপরে উঠে এলে জিরা গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে নিত। সেই স্বাদ ভোলার নয়। ওই ছোট ছোট ৩ থেকে ৪ টুকরা আর মিষ্টি কুমড়া দিয়ে এক প্লেট ভাত অনায়াসে খেয়ে ফেলা যায়। এখনো আমি শখ করে এই রান্নাটা করে খাই। এটা রংপুর অঞ্চলের রান্না।

একইভাবে কচি লাউ আর টমেটো দিয়ে গরুর মাংস রান্না করলেও খুব ভালো লাগে। এতে একদিকে যেমন মাংসের তেল কেটে যায়, অন্যদিকে তেমনি খেতেও খুব মজা হয়। গরুর মাংস ভুনে লাউ ডুমো ডুমো করে কেটে, মাংসে দিয়ে কষাতে হবে খানিকক্ষণ। এইসময় টমেটো দিলে ভালো হবে। পরে হালকা গরম পানি দিয়ে ঝোল করে অল্প আঁচে খানিকক্ষণ বসিয়ে নামাতে হবে।

হাতিরপুলের গরুর মাংস

আমি যখন ছোট ছিলাম, অর্থাৎ সত্তরের দশকের শুরুতে, তখন আব্বার সঙ্গে হাতিরপুল বাজারে যেতাম গরুর মাংস কিনতে। হাতিরপুল ও কাঁঠালবাগানের মাংসের খুব কদর ছিল সেইসময়। ঠাঁটারিবাজার ও আমিনবাজারের পরই ছিল এই দুই বাজারের গরুর গোশতের জনপ্রিয়তা। সেসময় আজকের মতো পাড়ায় পাড়ায় মাংসের দোকান ও সুপারশপ ছিল না। সম্ভবত তখন মাংসের সের ছিল আট টাকা।

আমার এখনো মনে আছে আব্বা শিনা ও সামনের পায়ের মাংস একসঙ্গে দুই থেকে তিন কেজি এনে আম্মাকে দিয়ে বলতেন, লাল ঝোল করে তেলের ওপর রান্না করো। সঙ্গে গোটা রসুন দিও কিন্তু। এই রান্নার মাজেজাটা হলো খেতে বসলে থামা যায় না। গোটা রসুনগুলোও মাংসের রূপ পেত। অনেকসময় নতুন আলু আস্ত দিয়ে দেওয়া হতো, আলাদা করে ভেজে। একবার রান্না হলে দুম করে সেই ২ থেকে ৩ কেজি ভুনা মাংস নাই হয়ে যেত। সঙ্গে আলু ভর্তাও থাকত। রেড মিট নিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে সতর্ক থাকতে হয় বলে, সেই আয়েশি খাওয়া আর হয়ে ওঠে না। এরপরেও একবার রান্না করে চেখে দেখতেই পারেন।

ছবি: সাজ্জাদ ইবনে সাঈদ/স্টার

লেজ কি বাদ যাবে?

সাহেবরা গরুর লেজের স্টু খুব পছন্দ করে। কিন্তু আমরা বাঙালিরা লেজের ভুনা খেতে ভালোবাসি। গরুর লেজ অল্প আঁচে অনেকটা সময় নিয়ে রান্না করার পর খুব নরম হয়ে যায়। মাংস থেকে হাড্ডি, সবটাই খেয়ে ফেলা যায়। মাংস রান্না করার মতোই এটা রান্না করতে হবে। নামানোর আগে একটু পেঁয়াজ ভেজে দিলে স্বাদ বেড়ে যাবে। অনেকেই অবশ্য এটা খেয়ে দেখেননি। বাজারে লেজ আলাদা বিক্রি হয়, একবার টেস্ট করে দেখা যেতেই পারে।

পালং শাক ও গরুর মাংস

খাদ্য রসিকদের কাছে গরুর মাংস হচ্ছে সেরা খাদ্যের মধ্যে একটি। মশলা দিয়ে আধা সিদ্ধ করে দিলেও খাওয়া যায়। যারা গরুর মাংসের একটু স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চান, তারা পালং শাক দিয়ে গরুর মাংসের ঘন ঝোল বা কষা করতে পারেন। গরুর মাংস ছোট করে কেটে ভুনা করতে হবে। ভুনা করার সময় ৬ থেকে ৭টা মাঝারি সাইজের আলু ছোট করে ডুমো সাইজ করে মাংসের সঙ্গে কষিয়ে নিতে হবে। নামানোর আগে পালং শাক ছিঁড়ে দিয়ে সামান্য আঁচে দমে দিতে হবে। এর ৩ থেকে ৪ মিনিট পরে নামিয়ে ফেলতে হবে। নিজের পছন্দমতো ঝোল দেওয়া যাবে।

মাংসের শুঁটকি

কোরবানি ঈদে প্রায় প্রতিটি বাসায় কোরবানির মাংস অতিরিক্ত পরিমাণে হয়ে যায়। তখন অনেকেই সেই মাংস দড়িতে ঝুলিয়ে শুটকি করে ফেলেন। আম্মাকে দেখতাম রান্না ঘরে দড়িতে মাংস মালার মতো ঝুলিয়ে শুকাতে দিত। মহররমের দিন সেটা দিয়ে খিচুরি রান্না করা হতো। জানিনা এই মাংসের সঙ্গে মহররমের দিনে খিচুরি রান্নার কী সম্পর্ক। কিন্তু মোটামুটি অনেক বাসাতেই এটা রান্না হতো এবং এখনো হয়। তবে সেই গরুর শুঁটকি অনেক ঝাল ও রসুন দিয়ে মাছের শুঁটকির মতো রান্না করলেও কিন্তু অসাধারণ স্বাদ হয়।

সবজি মাংস

যারা সবজি মিশালি দিয়ে গরুর মাংস খেতে চান, তারা মুলা, শালগম, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, কচুর মুখি, পটল-আলু দিয়েও গরুর মাংস রান্না করতে পারেন। মুলা, শালগম ও কচুর মুখি দিয়ে মাংস রান্না করতে চাইলে আগে কিছুটা ভাপিয়ে নিয়ে তেলে বাদামি করে ভেজে নিতে হবে। পরে সময় নিয়ে ভুনা করতে হবে। মাখা মাখা ঝোল বা কষানো করেও রাঁধতে পারেন। নামানোর আগে সামান্য জিরার ফাকি বা পেঁয়াজ ভেজে দেওয়া যেতে পারে, স্বাদ বাড়ানোর জন্য। কাঁঠালের বিচি ও শিমের বিচিও ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে হালকা সিদ্ধ করে নিতে হবে। গরুর মাংস দিয়ে বুটের ডালও হতে পারে দারুণ একটা খাবার।

অন্যরকম স্টু

গরুর মাংসের স্টু খুব ভালো হয়। তবে আমরা এবার একটু অন্য ধরনের স্টু করতে পারি। হাড়সহ ২ কেজি মাংস নিয়ে প্রেশার কুকারে রাখি। এবার পেঁয়াজ মোটা করে কাটা, রসুন মোটা কুচি, আস্ত গোল মরিচ, সামান্য সিরকা বা লেবুর রস, লবণ, গোটা লাল বা সবুজ কাঁচা মরিচ, সামান্য আদা কুচি ও অল্প গুড় দিয়ে মেখে নিয়ে একটু বেশি পানি দিয়ে প্রেসার কুকারে চড়িয়ে দিন। ভালো মাংস হলে দুই বা তিন শিটি লাগবে। শক্ত মাংস হলে ৫টা শিটিও লেগে যেতে পারে। চাইলে সামান্য তেল দিতে পারেন। তবে না দিলেও চলে।

প্রেশার কুকার খুলে দেখে নিন মাংসের কী অবস্থা। প্রায় সিদ্ধ হয়ে গেলে তাতে আলু, গাজর, মুলা, ফুলকপি, বরবটি, ক্যাপসিকাম মোটা করে কেটে অল্প আঁচে বসিয়ে রাখতে হবে। সবকিছু ভালো মতো সিদ্ধ হয়ে গেলে গোলমরিচের গুড়া ও পেঁয়াজ-রসুন হালকা ভেজে দিয়ে নামিয়ে নিন। বেশ স্যুপ স্যুপ ভাব হবে। হাতে বানানো রুটি, পাউরুটি বা ভাত দিয়েও খেতে পারেন। এমনকি এমনিও খেতে পারেন।

ঝুরা মাংসের কদর

আমাদের বাড়িসহ অনেক বাড়িতেই কোরবানি ঈদের অন্যতম বড় আকর্ষণ হচ্ছে ঝুরি বা ঝুরা মাংস। অনেক মাংস একসঙ্গে সামান্য কিছু মশলা দিয়ে হাড়িতে বসিয়ে দেওয়া হয়। পানি প্রায় লাগেই না। অল্প আঁচে প্রায় প্রতিদিন জ্বাল হতে হতে মাংসটা একদম ভাজা ভাজা হয়ে যায়। এটাকেই ঝুরি মাংস বলে। তবে খুব অল্প আঁচে প্রতিদিন জ্বাল দিতে হয়, যাতে একদম পোড়া বা খটখটে না হয়। ২ থেকে ১ দিনের মধ্যে হাড্ডি খেয়ে ফেলতে হয়। তাহলে আর গন্ধ হওয়ার ভয় থাকে না। এই ঝুরি মাংস ফ্রিজে রাখা হয় না, জ্বাল দেওয়ার পরে হাড়িতেই থাকে। আর সারা ঘরে সেই ঝুরা মাংসের মনমাতানো গন্ধ থাকে।

ঝুরা মাংস খেতে পারেন পরোটা বা রুটি দিয়ে। গরুর ঝুরি, ঘন ডাল, আলু ভর্তা সহযোগে গরম ভাত যেন স্বর্গীয় কোনো খাবার। তবে সবকিছুই চুলা থেকে নামানো গরম হতে হবে। আর এই গরম গরম ঝুরি মাংস মুড়ি, চানাচুর, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও সরিষার তেল দিয়ে মেখে খাওয়ার মজাই অন্যরকম।

আম্মার বিশেষ কাবাব

ঈদ মানেই আম্মার হাতের বিশেষ কাবাব। আম্মা কী দেখে শিখেছিল, তা বলতে পারে নাই। কোনো কিছুর মাপও চামচ হিসেবে বলে নাই। শুধু বলতো আন্দাজ মতো। কারণ তারা রান্না করতো সব হাতের আন্দাজের ওপরে, চামচ দিয়ে মেপে নয়। দুইবছর আগে আম্মা মারা যাওয়ার আমরা তার রেসিপি অনুযায়ী সেই কাবাব তৈরির চেষ্টা করেই যাচ্ছি। কিন্তু আম্মার মতো হচ্ছে না। এরপরেও রেসিপিটি শেয়ার করছি। কারণ এত মজাদার কাবাব আমরা খুব কমই খেয়েছি।

পেছনের রানের হাড্ডি ছাড়া ১ কেজি মাংস খুব ছোট ছোট টুকরা করে নিতে হবে। এর সঙ্গে এক কাপ কাচা বুটের ডাল ভিজিয়ে রেখে বেটে দিতে হবে। ২ থেকে ৩ টুকরা কাঁচা পেঁপে খোসাসহ বেটে দিতে হবে। এ ছাড়া, সামান্য জয়তি, জায়ফল, ১টা কালো এলাচ, খুব সামান্য মেথি মৌরি, তেলসহ পেঁয়াজ বেরেশতা, কাঁচামরিচ বাটা, লবণ ও পরিমাণ মতো টক দই দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখতে হবে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা। এরপর তেলে পেঁয়াজ দিয়ে বাদামি করে ভেজে নিয়ে সামান্য মেথি ফোড়ন দিয়ে ম্যারিনেট করা মাংসটা দিয়ে দিতে হবে। অল্প আঁচে হতে থাকবে। কোনো পানি লাগবে না। এভাবে নাড়াচাড়া করতে করতে মাংসটা একদম গলে যাবে। ব্যস আম্মার কাবাব প্রস্তুত। তেলের ওপরে উঠলে নামিয়ে নিন। কাঁচা পেঁয়াজ, মরিচ, ধনিয়াপাতা ও শসা কুচি ছিটিয়ে পরোটা দিয়ে খেতে অসাধারণ লাগে।

দাদির বিফ স্পেশাল

এ ছাড়া আরেকটি বিফ স্পেশাল রান্না হয় আমাদের পরিবারে। মূলত দাদির কাছ থেকে সবাই শিখেছে। পেঁয়াজসহ সব ধরনের মশলা মেখে হাত ধোয়া পানি দিয়ে মাংস চুলায় চড়িয়ে দিতে হবে। এরপর অল্প আঁচে মাংস কষানো হতে থাকবে। পানি শুকিয়ে গেলে আবার কিছুটা হালকা গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এইভাবে মাংস সিদ্ধ হয়ে তেলের ওপরে উঠে এলে আঁচ একদম কমিয়ে দিয়ে দিতে হবে সেই স্পেশাল মশলা গুঁড়া। অল্প মেথি, মৌরি, জিরা, ধনিয়া, শুকনা মরিচ, খুব সামান্য জোয়ান, একটা এলাচ, অল্প লং, অল্প গোলমরিচ টেলে নিয়ে গুঁড়া করে দিতে হবে নামানোর আগে। সঙ্গে কিছুটা বেরেশতা।

Comments