ব্যয়বহুল ঢাকায় শিক্ষার্থীদের দিনাতিপাত

ঢাকার মতো অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে অস্থির একটি শহরে বসবাস কখনই সহজ ছিল না।
ছবি: অর্কিড চাকমা

ঢাকার মতো অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে অস্থির একটি শহরে বসবাস কখনই সহজ ছিল না।

এই শহরে মধ্যবিত্তরাও সুন্দরভাবে পরিবারের সব খরচ চালাতে হিমশিম খায়। সেখানে সীমিত অর্থ নিয়ে একজন শিক্ষার্থীর জীবনযাপন বেশ চ্যালেঞ্জের। আর সেই চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নিত্যপণ্যসহ জীবনযাপনের সবকিছুর সাম্প্রতিক মূল্য বৃদ্ধি।

যারা অন্য শহর থেকে ঢাকায় এসে পড়াশুনা করছেন তাদের অধিকাংশেরই অন্যান্য সব খরচের পাশাপাশি বাসা ভাড়া বেড়েছে। আর যাদের এই শহরে নিজেদের বাসা আছে, তাদেরও আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ করতে হচ্ছে।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের একাদশ শিক্ষার্থী রুই আহমেদ ক্যাম্পাস হোস্টেলে থাকেন। তিনি বলেন, 'আমাদের হোস্টেল ভাড়া এ মাসে হঠাৎ করে ৮ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা করেছে। অথচ, খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার মান আগের মতোই রয়েছে।'

শিক্ষার্থীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় পরিবহন খরচ ও খাবারের দাম বৃদ্ধি হলে। যাদের অল্প টাকার মধ্যে মাস পার করতে হয় তাদের জন্য এই ২ খাতে খরচ বেড়ে যাওয়া বেশি ভয়াবহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এই শহরে বাস ভাড়া বেড়েই চলেছে। কিন্তু শহরের ফুটপাত পথচারীবান্ধব না হওয়ায় হেঁটে চলা দায়। ফলে, সেই বাড়তে থাকা বাস ভাড়া দিয়েই চলাচল করতে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা।

সময় যত যাচ্ছে, শহরের যানজট বাড়ছে। যানজটের কারণে বাড়তি সময় লেগে যায়— এই যুক্তিতে বাড়তি ভাড়া নেন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও রিকশা চালকরা। যদিও তাদের এই যুক্তি মেনে না নেওয়ার কোনো যুক্তিই নেই। তবে, বাড়তি ভাড়ার কারণে এই উপায়ে যাতায়াত করাও শিক্ষার্থীদের পক্ষে সম্ভবপর হয় না। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা অতি জরুরি না হলে বাইরে বের হন না খরচ বাঁচাতে।

খাদ্যদ্রব্যের বর্তমান দাম ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে অনেকেই বাধ্য হয়েছেন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে। অনেকে বাধ্য হয়ে খাবারের পরিমাণ কমিয়েছেন, খাবারের মেন্যুতে পরিবর্তন এনেছেন। অনেক শিক্ষার্থী একটু কম খরচের হোটেলে খাবার খেতে যাচ্ছেন, যদিও সেখানে খাবারের মান অত্যধিক খারাপ। প্রতিটি পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাজার করে নিজেরা রান্না করে খাওয়াও অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পরছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ'র একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'আমাদের জন্য যিনি রান্না করেন তাকে বলেছি কম তেল দিয়ে রান্না করতে। তেলের এখন যে দাম, তেল ছাড়া সবকিছু রান্না করা গেলে মনে হয় ভালো হতো। একসঙ্গে আমরা যারা থাকি তাদের সবাই খরচ কমাতে খাবারও কমিয়ে দিয়েছি।'

এতেও কাজ হচ্ছে না। বাজেটে টান পড়ছেই। খরচ বাঁচাতে শিক্ষার্থীরা তাদের বিনোদনের জন্যও খরচ করতে পারছেন না। অথচ, মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার জন্য বিনোদন অত্যাবশ্যক।

'অতি জরুরি' নয় এমন সব খরচও বাদ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নিজের উদাহরণ দিয়ে বলতে পারি, গত ২ মাসে নতুন কোনো বই কিনতে পারিনি। অথচ, বই পড়তে আমি খুবই পছন্দ করি। এর বাইরেও অনেক ছোট ছোট বিষয়ে খরচ না করে নিজেদের বাজেট মেলাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দিন শেষে যা প্রভাব ফেলছে মনের উপর।

শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা খুবই জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু, বর্তমানে যে বাড়তি খরচের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হচ্ছে, তাতে তারা যেটুকু টাকা পরিবার থেকে পাচ্ছেন তা দিয়ে আবশ্যিক সব খরচ মেটানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। সেখানে সঞ্চয় করার চিন্তা যেন বাতুলতা।

এই শহরে একা একজন শিক্ষার্থীর বসবাস করা আগেও কঠিন ছিল, কিন্তু এখন যেন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অসহনীয় গরম, ভয়ংকর যানজট ও দূষণ এবং প্রতি জিনিসের দাম বৃদ্ধি শিক্ষার্থীদের জীবনযাত্রা ও মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করছে।

ফাতিন হামামা [email protected]

শিমিন মুশশারাত [email protected]

Comments