বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৭

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সিটি মেয়র সমর্থিত ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আহত একজন। ছবি: স্টার

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল সিটি মেয়র সমর্থিত ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৬ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ বুধবার ভোররাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মূল গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এবং বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সমর্থিত ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। ইতোপূর্বে এই ২ গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক এসব ঘটনার জেরেই এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংঘর্ষে আহত ৬ শিক্ষার্থী  মইদুর রহমান বাকি, আহম্মেদ সিফাত, সৈয়দ রুম্মান ইসলাম, শান্ত, সাব্বির ও তমালকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের ৩ জনের মাথায় আঘাত রয়েছে।'

প্রতিমন্ত্রী গ্রুপের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতা পরিচয়দানকারী অমিত হাসান রক্তিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল আমাদের গ্রুপের সদস্য নীরবকে মারধরের কারণে গতকাল বিকেল থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছিল। এ ঘটনার প্রতিবাদে আমরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ করলে প্রক্টর খোরশেদ আলম পুলিশ নিয়ে এসে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করেন এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু রাত ১০টা থেকে মেয়র গ্রুপের আহম্মেদ সিফাত ও শান্ত বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের ক্যাম্পাসে ডাকতে থাকে। পরে ১২টার দিকে আমাদের গ্রুপের সদস্যরা ক্যাম্পাসের বাইরের গেটে গেলে তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে মেয়র গ্রুপ। এতে আমাদের ২ সদস্য মইদুর রহমান বাকি ও সাব্বির আহত হয়।'

ছবি: স্টার

প্রতিপক্ষ মেয়র গ্রুপের আহত সদস্য সৈয়দ রুম্মান ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল দুপুরে এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় আমিই প্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। পরে রাতে আমিসহ আমাদের গ্রুপের ৬ জন রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে ভর্তি আমার অসুস্থ বন্ধু সুরঞ্জিতকে দেখে ক্যাম্পাসে ফিরছিলাম, সেসময় প্রতিমন্ত্রী গ্রুপের মইদুর রহমান বাকি, সাইদুল ইসলাম মেহেদী হাসানসহ অন্যরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের গ্রুপের ৫ জন আহত হয়। তারা বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিমন্ত্রী গ্রুপের সদস্যরা গত ৪-৫ বছর ধরে ছাত্রলীগের কোনো সাংগঠনিক কর্মসূচিতে নেই। তারা সাংগঠনিক কাজে না এগুতে পেরে আমাদের ওপর হামলা করে।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি রাতেই হাসপাতালে গিয়েছি। আহত ৬ শিক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছি। ক্যাম্পাসেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।'

'শুনেছি ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী শিক্ষার্থীদের ২টি গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের মধ্যে আগে থেকেই ছোট ছোট মারামারির ঘটনা ঘটে আসলেও এবারের মতো অবস্থা ছিল না। তবে এ মুহূর্তে ক্যাম্পাসের অবস্থা শান্ত রয়েছে, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।'

বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার প্রলয় চিসিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পূর্ব থেকে হামলা, পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে। আমরা এগুলো সমাধান করেছি। কিন্তু রাতে পুনরায় এক জোট হয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ সক্রিয় না হলে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারতো। আমরা ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।'

Comments