রৌমারীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৪ ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি

কির্তিমারী-বড়াইবাড়ী সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে চরম কষ্টে পড়েছেন স্থানীয়রা। ছবি: সংগৃহীত

উজানে ভারতের আসাম থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে আরো নতুন কিছু এলাকা।

উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ৪৯টি গ্রামের প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ৫৯২ হেক্টর জমির আমন ধানের বীজতলা, পাট ও নানা জাতের সবজি।

রৌমারী উপজেলা প্রশাসন সূত্র সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

এছাড়া, প্রায় ৫৫ কিলোমিটার কাচা-পাকা রাস্তা তলিয়ে গেছে পানির নিচে।

পানিবন্দি এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাদের বসতভিটায় ২-৫ ফুট পর্যন্ত বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। শনিবার বিকেল থেকে ভারতের আসাম থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসতে শুরু করে। এখনো পাহাড়ি ঢলের পানি আসছে।

কাশিয়াবাড়ী এলাকায় অনেব বাড়ি-ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

এছাড়া বন্যার পানিতে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন তারা। কলাগাছের তৈরি ভেলা এবং নৌকায় চড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। দুদিন ধরে বন্যার পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সোমবার যাদুরচর ইউনিয়নের কাশিয়াবাড়ী গ্রামের পানিবন্দি কৃষক দেলোয়ার হোসেন (৬০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২ দিনে আমার ৬ বিঘা জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কর্তিমারী- বড়াইবাড়ী পাকা সড়কটি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াত করতে পারছি না।'

এভাবে পানি বাড়তে থাকলে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে হবে বলে তিনি জানান।

চর শৌলমারী গ্রামের পানিবন্দি কৃষক আফতাব উদ্দিন (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বসতভিটার চারদিকে বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। বসতভিটায় ২-৩ ফুট বন্যার পানি উঠেছে। রান্না করে খেতে পারছি না।'

জানতে চাইলে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী সোমবার বিকেলে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউনিয়নের বেশিরভাগ বসতভিটায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কয়েকটি নৌকা ও কলাগাছের তৈরি ভেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে পানিবন্দীদের যাতায়াতের জন্য।'

কিছু পানিবন্দি পরিবার নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা (পিআইও) আজিজুর রহমান বলেন, 'নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় পানিবন্দির সংখ্যা বাড়ছে। আপাতত শুকনো খাবার চিড়া, মুড়ি, গুড়, পাউরুটি পানিবন্দিদের মধ্যে বিতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।'

'পানিবন্দিদের তালিকা করে সরকারি ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে,' বলেন তিনি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উজানে ভারতের আসাম থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে রৌমারী উপজেলার ৩টি নদী কালুর, জিনজিরাম ও ধরনীতে ওভারফ্লো হয়েছে। এ কারণে এ উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।'

যোগাযোগ করা হলে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশারাফুল আলম রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানিবন্দিদের শুকনো খাবার বিতরণের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে আসার জন্য বলা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন অব্যাহত রেখেছে এবং বন্যা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।'

Comments

The Daily Star  | English
Domestic violence killing women in Bangladesh

Domestic violence in Bangladesh: When numbers speak of the silence

When we are informed that 133 women have been killed by their husbands in seven months, it is no longer just a number.

8h ago