পাঞ্জাব উপনির্বাচন: জয়ের দ্বারপ্রান্তে ইমরানের দল পিটিআই

পাকিস্তানের পাঞ্জাব গণপরিষদের ২০টি প্রাদেশিক আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে রোববার। গণনা চলতে থাকলেও, সর্বশেষ বেসরকারি ও প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই প্রদেশের আসন দখলে এগিয়ে আছে।
নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে এগিয়ে থাকার খবর পেয়ে বিজয় চিহ্ন দেখাচ্ছেন পিটিআই কর্মীরা। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের পাঞ্জাব গণপরিষদের ২০টি প্রাদেশিক আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে রোববার। গণনা চলতে থাকলেও, সর্বশেষ বেসরকারি ও প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআই প্রদেশের আসন দখলে এগিয়ে আছে।

রোববার রাতে পাকিস্তানি গণমাধ্যম জিও নিউজ ও ডন এ তথ্য জানিয়েছে।

ডন জানিয়েছে, রোববার দিবাগত রাত দেড়টা পর্যন্ত পিটিআই ২০টির মধ্যে ১২টি আসনে জয়ী হয়েছে এবং অন্যান্য বেশ কিছু আসনের ভোট গণনায় এগিয়ে আছে।

লাহোরের রাস্তায় পিটিআই সমর্থকদের মিছিল। ছবি: সংগৃহীত

শেষ পর্যন্ত ফলাফল এ রকম থাকলে দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের ছেলে পিএমএল-এন প্রার্থী হামজা শেহবাজ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হবেন ইমরানের দল পিটিআই সমর্থিত পিএমএল-কিউ এর প্রার্থী চৌধুরী পারভেজ এলাহী।

পাঞ্জাবের উপনির্বাচন এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?

পাঞ্জাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ বা পিটিআই এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ বা পিএমএল-এন এর মধ্যে কার অবস্থান কতো শক্তিশালী তার পরিচয় পাওয়া যাবে এই উপনির্বাচনে।

এর শুরুটা হয়েছিল পার্লামেন্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব থেকে। সে সময় শুধু ইমরানই নয়, বিরোধীরা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারের বিরুদ্ধেও আস্থা রাখতে পারেনি।

অনাস্থা আনায় বুজদার পদত্যাগ করলে, পিটিআই মিত্র দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদে আজম বা পিএমএল-কিউ এর চৌধুরী পারভেজ এলাহীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে এবং দলের অনুগত ওমর সরফরাজ চিমাকে নতুন গভর্নর হিসেব নিয়োগ দেয়।

কিন্তু পিটিআইয়ের এ পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়ান পাঞ্জাব গণপরিষদের দলের ২৫ সদস্য। তারা দলের নির্দেশ অমান্য করে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ বা পিএমএল-এন দলের হামজা শেহবাজকে ভোট দিলে পিটিআই মারাত্মক ধাক্কা খায়। তাদের মধ্যে ২০ জন ছিলেন নির্বাচিত এবং ৫ জন সংরক্ষিত আসনের সদস্য।

দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের সংবিধানের ৬৩ (এ) ধারা অনুযায়ী গণপরিষদ সদস্য হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করতে পিটিআই তখন নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) কাছে যায়।

১০ এপ্রিল ইমরান খানের পতন হয় ও ১১ এপ্রিল শেহবাজ শরিফ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

এদিকে, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও হামজার শপথ গ্রহণে দেরি করে গণপরিষদ। পরে ৩০ এপ্রিল লাহোর হাইকোর্টের আদেশের পরে, হামজা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। 

এর কয়েকদিন পরে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দেয় যে ওই ২৫ পিটিআই গণপরিষদ সদস্য দলের বিরুদ্ধে যাওয়ার তাদের আসন শূন্য হয়েছে।

এ ঘোষণার ফলে হামজা শেহবাজ ওই ২৫ জনের ভোট হারান, আর এর সঙ্গে হারিয়ে ফেলেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা। 

পরে নির্বাচন কমিশন সংরক্ষিত ৫ আসনে পিটিআই থেকে নতুন ৫ জনকে গণপরিষদ সদস্য হিসেবে ঘোষণা দেয় এবং ২০টি সাধারণ আসনের উপনির্বাচনের তারিখ ১৭ জুলাই নির্ধারণ করে।

এ উপনির্বাচনে ১২টি আসনে পিটিআই প্রার্থীরা জিতলে এ দলের সমর্থিত পারভেজ এলাহীর পাঞ্জাবের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আগামী ২২ জুলাই পাঞ্জাব গণপরিষদে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

আজকের নির্বাচনে পিটিআই ২০টি আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১২টি আসনে জিততে পারলে পার্লামেন্টে পারভেজ এলাহীর ভোট হবে ১৮৪টি এবং বাকি ৮টিতে পিএমএল-এন জিতলে হামজা শেহবাজ পাবেন ১৮২ জন পার্লামেন্ট মেম্বারের সমর্থন।

Comments