দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্য চেয়েছে দুদক

দুদক

চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়েছেন এমন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিচারক-কর্মচারী এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সশস্ত্র বাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সম্পর্কেও একই তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি দুদক এক চিঠিতে সব মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের কাছে অন্য দেশের নাগরিকত্ব আছে এমন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিস্তারিত তথ্য দিতে বলে।

দুদকের মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের তথ্যও চাওয়া হয়েছে।

সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪০(১) ধারা অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী অন্য দেশের নাগরিক হতে পারবেন না। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে সরকার এ কাজের ব্যাখ্যার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে পারবে। এসব ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন হয় না।

বলা হচ্ছে, কিছু সরকারি কর্মচারী অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও দ্বৈত নাগরিকত্ব নেওয়ার অভিযোগ উঠতে শুরু করে।

গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, এমন অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে।

ওই দুদক কর্মকর্তার কাছ থেকে আরও জানা যায়, 'অনেক ক্ষেত্রে গাড়িচালক, অফিস সহকারীর মতো পদে থাকা কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে কোনো খাতই যাতে ছাড় না পায় তা নিশ্চিত করতে দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়া সব সরকারি কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, বিচারক ও সশস্ত্র বাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তথ্য চেয়ে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে।'

জানতে চাইলে দুদকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের যে কোনো বিভাগের বিচারপতিরাও এর আওতায় আছেন।

চিঠিতে দুদক বলেছে, কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী 'তথ্য গোপন করে বিদেশ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করছেন।'

নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ও শাস্তি এড়াতে এসব কর্মকর্তা ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে অবস্থান করছেন বলেও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।

চিঠিতে বলা হয়, 'একাধিক পাসপোর্ট দিয়ে এসব কর্মকর্তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বিদেশে পাচার করছেন এবং সেখানকার সম্পদ ভোগ করছেন। দুদকের তদন্তে এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে।'

কমিশন বলেছে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুধু দেশে দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে না, অর্থনীতিরও ক্ষতি করে।

বিদেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

দুদক বলছে, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ২ ধারা, ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইন এর ১১০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ২১ ধারায় ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে এই চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আদালতের কর্মচারী ও বিচারক, রাষ্ট্রীয় রাজস্ব থেকে বেতন পাওয়া সরকারি কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সরকারি কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত।

চাকরিতে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রেও দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়টি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দুদক।

মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীরা স্বেচ্ছায় তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টি প্রকাশ করবেন কিনা জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, এ জাতীয় তথ্য খুব কম সময়ই স্বেচ্ছায় সরবরাহ করা হয়।

তবে মন্ত্রণালয় সব কর্মচারীর কাছ থেকে তথ্য নেবে এবং সংগৃহীত তথ্য দুদকে পাঠাবে বলে জানান তিনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান বদিউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, দ্বৈত নাগরিকত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া একটি ভালো পদক্ষেপ।

কিন্তু সরকারের এই পদক্ষেপ সন্দেহের উদ্রেক করে মন্তব্য করে সাবেক এই সচিব বলেন, 'দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা অন্যায় স্বীকার করবে না। সরকারের উচিত তথ্য সংগ্রহ করে এসব দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা। এভাবে চিঠি পাঠানো মানে তাদের সতর্ক করে দেওয়া।'

সরকারি কর্মচারীদের পরিসংখ্যান-২০২৩ অনুযায়ী রাজস্ব খাতে পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৫১৯টি। বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

Comments

The Daily Star  | English

Thousands march to Suhrawardy Udyan amid traffic diversions across Dhaka

The party’s first-ever political rally at the historic venue is scheduled to begin at 2:00pm

1h ago