‘ঘরে খাবার নাই, কীসের আবার ঈদ’

হাকালুকি হাওর পাড়ের বাসিন্দা হারিছ মিয়া। ছবি: স্টার

'ঘর-দুয়ার ভাইঙ্গা গেছে। সবের কাপড়-চোপড় সবতা ভাসাইয়া লইয়া গেছে। এখন থাকার ওই জায়গা নাই। এক আত্মীয়র ভাঙ্গাছাঙ্গা বাড়িতে কোনোমতে ছিলাম। বাচ্চারার কাপড়ই কিনে দিতাম পাররাম না। মা অসুস্থ, ওষুধ কিনার ট্যাখাও নাই। এই অবস্থা আমরার কী আর ঈদ আছে?'

এভাবেই দুঃখের কথা জানান মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর পাড়ের বানভাসি হারিছ মিয়া। তিনি বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের বটতলা এলাকার বাসিন্দা।

হারিছ জানান, এক ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। বর্ষায় মাছ শিকার করে বিক্রি করেন, আর শুকনো মৌসুমে যা পান তা দিয়েই চলে সংসার। 

তবু খেয়ে না খেয়ে কোনো রকম চলছিল তাদের সংসার। গত ১৭ জুন ঘরে পানি ওঠার পর যার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তার ঘরটির অবস্থাও যায় যায়। পরে আবার পরিবার নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরে গেছেন। গিয়ে দেখেন গরু-ছাগল কিছুই নেই, সব শেষ। মাথা গোঁজার ঠাঁই ঘরটিও দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে। এক রুমের ঘরে চাল ঠিক করে কোনোমতে সেখানেই বসবাস করছেন। এখনো ঘরের ভেতর কাদা-পানি, বসবাস করতে হয় খাটের ওপর। সাপের উপদ্রব বেড়ে যাওয়া রাত কাটে বাচ্চাদের পাহারা দিয়ে। 

হারিছের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। যেখানে মাথা গোঁজার ঠাঁই নড়বড়ে, কাপড়-চোপড়, খাবারসহ কিছুই নাই, সেখানে ঈদের আনন্দ আসবে কোথা থেকে।

তিনি বলেন, 'শুধু আমি না, আশপাশের গ্রামবাসীর একই অবস্থা। এসব এলাকায় এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দি।'

আজ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। সারা দেশে বিরাজ করছে ঈদের আমেজ। কিন্তু এ আমেজের কোনো ছিটেফোঁটাও লাগেনি বন্যাকবলিত হাকালুকি হাওর পাড়ের বানভাসি মানুষের মনে।

আজ সরেজমিনে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, বন্যায় রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা একবারে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক রাস্তাঘাট এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। এলাকার মানুষের যোগাযোগের ভরসা নৌকা। বেশির ভাগ জনপদে এখনো থইথই করছে বন্যার পানি। ফলে ঈদের আমেজ অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে তাদের কাছে। আনন্দের বদলে ভোগান্তির ঘোলা জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন হাওর এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ।

হারিছকে দেখা যায় আগরের কাঠ কাটছেন। তিনি বলেন, '২০০৪ সালে বড় পানি অইছিল। তখন উঠান পর্যন্ত পানি উঠছিল। ঘর ছাড়া লাগছিল না। জীবনের পয়লা পানির লাগি এবার ঘর ছাড়লাম। এ রকম পানি আমার বোঝও অইছে না। মুরব্বিরা কইছইন আরও একবার ৩৬ বাংলায় এ রকম পানি অইছিল।'

তিনি জানান, উপায় না পেয়ে আজকেও কাজ করছেন। ত্রাণের ১০ কেজি চাল ছাড়া কিছুই পায়নি। সেটাও শেষ হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিন ধার করে দিন পার করছেন। ঈদ নিয়ে বাড়তি কোনো চিন্তা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'পারলে কিছু চাউল-ডাইল দেইন যে।' 

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের রোববারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাকালুকি হাওরের অধিনে কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলায় মোট পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৭৪৫টি।

Comments

The Daily Star  | English

What if India and China stop buying Russian oil?

Donald Trump is tightening sanctions loopholes that fund Moscow's war machine. What does a crackdown on Russia's oil trade mean for global markets — and economic heavyweights like China and India?

3h ago