চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের উৎপাদন কম, দাম দ্বিগুণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর তুলনামূলকভাবে আমের উৎপাদন কম। ভরা মৌসুমেও বাজারে পর্যাপ্ত আম নেই বলে দাবি করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
গুটি জাতের আম।
গুটি জাতের আম। ছবি: দ্য ডেইলি স্টার

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর তুলনামূলকভাবে আমের উৎপাদন কম। ভরা মৌসুমেও বাজারে পর্যাপ্ত আম নেই বলে দাবি করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

টানা ২ বছর করোনা মহামারির কারণে আমের ভালো দাম পাওয়া যায়নি। তবে বছর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

কানসাটে দেশের বৃহত্তম আম বাজারে অন্যান্য বছরের তুলনায় সরবরাহ প্রায় অর্ধেক বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।

একই চিত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুরের রহনপুর আম বাজারেও।

কানসাট আম বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছর জেলায় আমের উৎপাদন ও সরবরাহ তুলনামূলকভাবে কম। গত ২ বছর করোনার কারণে বিধিনিষেধ মেনে বাজার বসলেও সে সময় সরবরাহ বেশি ছিল।

আস্তারুল ইসলাম বলেন, 'অন্যান্য বছর এখানে আমবাহী ভ্যান বা সাইকেলের কারণে পা ফেলার জায়গা থাকেনা। আম চাষি, ব্যবসায়ী, পাইকারসহ খুচরা ক্রেতাদের ভিড়ে সরগরম থাকে বাজার। কিন্তু এবার সে অবস্থা নেই।'

কানসাট বাজার
কানসাট বাজার। ছবি: দ্য ডেইলি স্টার

চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি, আবহাওয়াগত কারণে এ বছর আমের উৎপাদন কম। জেলায় গোপালভোগ আমের উৎপাদন হয়নি বললেই চলে। এখন খিরসাপাত ও ল্যাংড়া আম পাওয়া যাচ্ছে। খিরসাপাত বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে। আর প্রতি মণ ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায়। কয়েকদিনের মধ্যেই বাজারে আসবে ফজলি ও আম্রপালি।

জহুরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, 'দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম সবচেয়ে জনপ্রিয়। খিরসাপাত আমের সময়ই ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা বেশি থাকে বাজারে। এখন যে অবস্থা, তাতে ফজলি বা আম্রপালির সময় বাজারে অন্যান্য জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি আরো কমে যেতে পারে।'

উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে আম সরবরাহে ঘাটতি থাকলেও দাম নিয়ে সন্তুষ্ট চাষিরা।

তারা বলছেন, টানা  ২ বছর আমের দাম নিয়ে তারা হতাশ ছিলেন। এবার আমের পর্যাপ্ত দাম পেয়ে তারা খুশি। শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর-চামা এলাকার আমচাষি আজিজুর রহমান জানান, গত বছর খিরসাপাত আম বিক্রি শুরু হয়েছিলো ১ হাজার ২০০ টাকা মণ করে। কিন্তু এবার শুরুতেই ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ দাম এবার গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। অন্যান্য জাতের আমও বিক্রি হচ্ছে গত বছরের চেয়ে প্রায় দিগুণ দামে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা মেসগার আলী আম বিক্রি করছেন শহরের পুরাতন বাজারে। তিনি জানান, এবার আমের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

পুরাতন বাজার। ছবি: দ্য ডেইলি স্টার
পুরাতন বাজার। ছবি: দ্য ডেইলি স্টার

কানসাট আম আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক জানান, এবার আমের উৎপাদন অন্যান্য বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। কানসাট বাজার থেকে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ আম বোঝাই ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। অথচ অন্যান্য বছর এ সময় এর দ্বিগুণ পরিমাণ ট্রাক দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছে।

তিনি বলেন ফজলি আম বাজারে আসলে গাড়ির পরিমাণ বাড়বে।

তবে তিনি দাম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে। তবে এবার প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মুকুল কম এসেছে, যার ফলে উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে। তবে চাষিরা সন্তোষজনক দাম পাচ্ছেন।

তিনি আরও জানান, এ বছর জেলায় ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

'সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় আম কিছুটা কম হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে এই মৌসুমে অপেক্ষাকৃত আম বেশী হয়েছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে', যোগ করেন তিনি।

 

Comments