ঝাড়গ্রাম থেকে ২ বছর পর রাজিয়া যেভাবে দেশে ফিরলেন

মা-বাবার সঙ্গে রাজিয়া বেগম (মাঝখানে)। ছবি: স্টার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রাম থেকে ২ বছর পর রাজিয়া বেগম (৩৫) দেশে ফিরেছেন। তবে তিনি খুবই অসুস্থ। প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসার। কিন্তু, সঙ্গতি নেই তার দরিদ্র পরিবারের।

রাজিয়া চাচাতো ভাই তারিকুলের মাধ্যমে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ভারত থেকে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লোহালিয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে পৌঁছান। মা-বাবাকে কাছে পেয়ে ভীষণ খুশি তিনি।

ওই গ্রামের আব্দুল লতিফ হাওলাদার ও হাসিনা বেগমের ২ সন্তানের মধ্যে রাজিয়া ছোট। তার একমাত্র ছেলে রাহাত হাওলাদার (২০) ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করেন।

তার চাচাতো ভাই তরিকুল ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন রাজিয়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলগ্রামের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি ২ জুন ভারতে যান এবং সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে শনিবার রাজিয়াকে নিয়ে বাড়িতে ফেরেন।

রাজিয়া স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। কথাবার্তাও অসংলগ্ন। কীভাবে ভারতে গেলেন জিজ্ঞেস করলে প্রথমে বলেন, 'জানি না'। পরে বলেন. 'কই, আমি তো কোথাও যাইনি।'

তরিকুল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ২০২০ সালের এপ্রিলে রাজিয়া হঠাৎ নিখোঁজ হন। পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন।

গত নভেম্বরে 'লোহালিয়া গ্রামবাসী' নামের ফেসবুক গ্রুপে হাম রেডিও ওয়েস্ট বেঙ্গল সংগঠনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ডা. আদনান একটি পোস্ট দেন। ছবিসহ সেই পোস্টে রাজিয়া ভারতে চিকিৎসাধীন এবং বাংলাদেশে তার পরিবারের সন্ধান কামনা করেন। পোস্টটি তারিকুলের নজরে এলে তিনি যোগাযোগ করেন এবং 'হ্যাম রেডিও'র সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাসের মাধ্যমে ভিডিও কলে রাজিয়ার সঙ্গে কথা বলেন।

রাজিয়ার মা-বাবাও তাদের মেয়ের সঙ্গে কথা বলেন।

কলকাতা উপ-হাইকমিশন ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পুলিশি প্রহরায় রাজিয়াকে ১০ জুন সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছে দেওয়া হয়।

ভারতের স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তরিকুল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বছরখানেক আগে রাস্তায় পড়ে থাকা রাজিয়া বেগমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুলিশের সহযোগিতায় তাকে ঝাড়গামের পৌর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তাকে ঝাড়গ্রামের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।'

'তখন রাজিয়াকে সহায়তার জন্য পশ্চিমবঙ্গের হাম রেডিও এগিয়ে আসে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'রেডিওটির ঝাড়গ্রামের ২ সদস্য শিক্ষক নির্মলেন্দু মাহাত ও সুজাতা চট্টোপাধ্যায় হাসপাতালে রাজিয়ার পাশে থেকে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা চালান। তার কাছ থেকে বাংলাদেশে রাজিয়ার নাম–ঠিকানা জেনে হাম রেডিও'র বাংলাদেশের প্রতিনিধি ডা. আদনানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফেসবুকে ওই পোস্টটি দেন।'

'সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রাজিয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তার আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু, তার পরিবারের সঙ্গতি নেই,' যোগ করেন তরিকুল।

রাজিয়ার মা হাসিনা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া তাকে ফিরে পেয়েছি।'

বাবা লতিফ হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিয়ের পর থেকেই মাঝে-মধ্যে রাজিয়ার স্মৃতিভ্রম হয়। এর আগেও সে নিখোঁজ হয়েছিল। তবে বেশি দূরে যেত না। কিন্তু, ২ বছর আগে নিখোঁজ হলে তাকে আর খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আল্লাহর রহমতে মেয়েকে পেয়েছি।'

'তার চিকিৎসায় প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এখন তার চিকিৎসা করাবো সে সঙ্গতি আমার নেই।'

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কবির হোসেন তালুকদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়ের চিকিৎসা করানোর সঙ্গতি লতিফ হাওলাদারের নেই। সেজন্য সরকার ও সমাজের হৃদয়বান মানুষের সহায়তা কামনা করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Step up diplomacy as US tariff clock ticks away

Bangladesh must intensify trade diplomacy to protect garment exports from steep US tariffs as the clock runs down on a three-month reprieve, business leaders warned yesterday.

10h ago