বৃষ্টি-বন্যা-গরম, ৩ সম্ভাবনা নিয়ে বর্ষার শুরু

কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভবনা নিয়ে শুরু হয়েছে বর্ষা মৌসুম। অতিভারী বর্ষণের ফলে দেশের কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিতে পারে। বৃষ্টির পাশাপাশি তাপপ্রবাহ থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
rain-in-dhaka_ds.jpg
বৃষ্টিতে ভিজছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ২৫ মে ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ।

কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভবনা নিয়ে শুরু হয়েছে বর্ষা মৌসুম। অতিভারী বর্ষণের ফলে দেশের কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির দেখা দিতে পারে। বৃষ্টির পাশাপাশি তাপপ্রবাহ থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আজ শনিবার বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সারা দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু (বর্ষাকাল) বিস্তার লাভ করেছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারী অবস্থায় রয়েছে।

ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টিপাত। তবে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের সম্ভবনা রয়েছে।

এ ছাড়া, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর পাশে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চারণশীল মেঘমালার সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। যে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ২৫ মে ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ।

সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জুন মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি মৌসুমী নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দেশে বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারী (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বর্ষা মৌসুম শুরুর সময় বাতাস তেমন না থাকলেও সাগরে ঢেউ থাকে। যে কারণে সতর্ক করা হয়। এ ছাড়া স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

বৃষ্টির পাশাপাশি থাকবে তাপপ্রবাহ জানিয়ে তিনি বলেন, যেহেতু বাতাসে পর্যাপ্ত জলীয় বাষ্প থাকবে তাই বৃষ্টি না হলে কোথাও কোথাও গরম অনেক বেড়ে যাবে। তীব্র তাপপ্রবাহ হয়তো হবে না, তবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

ময়মনসিংহ-রংপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত আছে। আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, আরও কিছু দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। বাংলাদেশের পাশাপাশি আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে এবং আগামী আরও কয়েকদিন মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার সম্ভবনা রয়েছে।

rain-in-dhaka2_ds.jpg
বৃষ্টিতে ভিজছে শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত ২৫ মে ছবিটি তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী প্রবীর দাশ।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, এখন মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কোথাও কম হবে, কোথাও বেশি হবে। আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গাতেও বৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে গঙ্গা-পদ্মা ছাড়া দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল বাড়ছে। এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে চলতি সপ্তাহে সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, লালমনিহাট, নীলফামারীতে বন্যা হতে পারে। সে রকম সম্ভবনা রয়েছে।

আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মে মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেট, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। অন্যান্য বিভাগে বৃষ্টিপাত ছিল স্বাভাবিক। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বায়ুপ্রবাহের সংযোগ ঘটায় ১, ৩, ১২, ১৬, ১৯ ও ২০ মে সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে প্রবল বজ্রপাত হয় ও অস্থায়ী দমকা হাওয়া বয়ে যায়। ১২ মে বগুড়ায় এ মাসের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৩ কিলোমিটার।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর পাশে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় ৭ ও ৮ এবং ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেট বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ২০ ও ২৪ মে যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

মে মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

Comments