খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটলে সব দায় সরকারকে নিতে হবে: মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্টার ফাইল ফটো

খালেদা জিয়ার কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, 'আমি বলতে চাই, সরকারকেই দায় নিতে হবে। আজকে খালেদা জিয়ার আল্লাহ না করুক যদি কোনো অঘটন ঘটে তাহলে এদেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। টেনেহিঁচড়ে আপনাদের ক্ষমতা থেকে নামাবে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের শেষ কথা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। অন্যথায় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।'

খালেদা জিয়া হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল তার হৃৎপিন্ডে একটি ব্লক অপসারণ করে স্টেন্ট বসানো হয়েছে।

মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিতসার দ্রুত বিদেশে পাঠানো ও তার মুক্তির দাবিতে এই  সমাবেশ হয়। এতে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী আসেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'কেন তাকে আটকে রাখা হয়েছে, কেন তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। যখন তাদের (সরকার) সলিম উদ্দিন-কলিম উদ্দিন সব বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়, সাজাপ্রাপ্ত লোকরা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেয়, কেউ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যায়। তখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করতে দেয়া হয় না কেন?'

ফখরুল বলেন, 'কারণ খালেদা জিয়া হচ্ছেন এই ফ্যাসিবাদী সরকারের, এই আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ভয়। খালেদা জিয়া যদি বেরিয়ে আসেন, তিনি যদি রাস্তায় নামেন, তিনি যদি মানুষকে ডাক দেন, সেই ডাকে হ্যামিলনের সেই বংশীবাদকের মতো সব বেরিয়ে আসে রাস্তার মধ্যে….। সেজন্য তারা তাকে আটকে রেখেছে।'

মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার খালেদা জিয়াকে আটকিয়ে রেখেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'মূল কারণ হচ্ছে তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া। এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তার অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে, প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে, দুদককে নিয়ন্ত্রণ করে খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছেন।'

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের চিকিৎসকদের অত্যন্ত সময়োচিত পদক্ষেপ এবং চিকিৎসার কারণে অতিদ্রুত স্টেন্টিং করে তার আজকে লাইফ সেইভ করা হয়েছে। এটাই শেষ না। তার অনেক অসুখ আছে। লিভার সিরোসিস আছে, আর্থ্রাইটিস আছে, হার্ট ডিজিস আছে, কিডনি ডিজিস। এর জন্য দরকার উন্নত চিকিৎসা।'

'ডাক্তারা বলেছেন, তাকে উন্নত মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া দরকার যেটা বিদেশে আছে। সেজন্য আজকের এই প্রতিবাদ সভা। আমরা বার বার সরকারকে অনুরোধ করেছি, আন্দোলন করেছি, কর্মসূচি দিয়েছি। এখন সোজা কথায় বলতে চাই, কালকে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, সরকার কোনো দায় নেবে না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, সরকারকেই দায় নিতে হবে।'

'কারো কাছে আমি মাথা নত করিনি'-প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য খণ্ডন করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এরশাদ সাহেব ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ যখন ক্ষমতা দখল করেন তখন উনি (শেখ হাসিনা) বলেছিলেন, উই আর নট আনহ্যাপি, আমরা অখুশি নই। আবার ১/১১ যখন অবৈধ সেনা সমর্থিত সরকার হলো তখন আপনি এয়ারপোর্টে ঘোষণা দিয়েছিলেন এই অবৈধ সরকারের সব অবৈধ কাজকে বৈধ করে দেবেন।'

'আপনারা বরাবরই আতাঁত করে ক্ষমতায় এসেছেন, আপনারা বরাবরই ওই শক্তির সঙ্গে আতাঁত করেছেন যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে, যারা বরাবরই গণতন্ত্রকে ধবংস করে, বলেন ফখরুল।

বর্তমান সরকারকে অবশ্যই পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে উল্লেখ করে আন্দোলনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান তিনি।

মহানগর উত্তরের আহবায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।

Comments