‘হামরা এলা মুক্ত-স্বাধীন’

ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা ১ মিনিট। দেখতে দেখতে ৭ বছরে পড়ছে ছিটমহল বিনিময়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২ ছিটমহলে বসবাসকারী অধিবাসীর ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি মেলে।
ছিটমহল
রমিচা বেওয়া। ছবি: স্টার

ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা ১ মিনিট। দেখতে দেখতে ৭ বছরে পড়ছে ছিটমহল বিনিময়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২ ছিটমহলে বসবাসকারী অধিবাসীর ৬৮ বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি মেলে।

সেই ঐতিহাসিক ঘটনার স্মরণে আজ সোমবার ভোররাত থেকেই চলছে সাবেক ছিটমহলবাসীদের উদযাপন অনুষ্ঠান।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা রমিচা বেওয়া (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামরা যখন ছিটের বাসিন্দা আছলোং তখন হামরাগুলা কিছুই পাঙ নাই। এ্যালা হামরাগুলা সোগে পাবার নাইকছি।'

'হামরাগুলা সরকারি ভাতা ইলিপ সাহায্য সোগে পাই এ্যালা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না থাইকলে হামকগুলাক আগের মতোন থাতা নাগিল হয়। প্রধানমন্ত্রী হামাকগুলাক বাঁচাইছে হামাকগুলাক নতুন জীবন দিছে। হামরা এলা মুক্ত স্বাধীন।'

সদর উপজেলায় সাবেক ছিটমহল ভিতরকুটি বাঁশপচাই গ্রামের বাসিন্দা আজিজার রহমান (৮০) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাবেক ছিটমহলে আমাদের দাবির চেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। আমরা খুব খুশি, শান্তিতে বাস করছি।'

ছিটমহল
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়ায় ছিটমহল বিনিময় উদযাপন। ১ আগস্ট ২০২২। ছবি: স্টার

তিনি আরও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ না নিলে আমরা মুক্তির স্বাদ পেতাম না। এখনো আমাদেরকে বন্দিদশায় জীবনযাপন করতে হতো। এখন গর্ব করে বলতে পারি আমি বাংলাদেশের নাগরিক।'

সবচেয়ে বড় সাবেক ছিটমহল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দাসিয়ারছড়া এলাকার বাসিন্দা হোসেন আলী (৮২) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছিটমহল বিনিময় হওয়ার আগে জীবনযাপন ছিল বন্দিদশা। না পেতাম বাংলাদেশের সুবিধা, না পেতাম ভারতের সুবিধা।'

তিনি জানান, তাদের সন্তানরা পড়াশুনা করেছিল মিথ্যা পরিচয়ে। তারা স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছিলেন মিথ্যা পরিচয়ে।

'আমরা এখন স্বাধীন, মুক্ত। নাগরিক হিসেবে সব ধরনের সুবিধা ভোগ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে আমরা মুক্ত জীবন পেয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় কমিটির বাংলাদেশ অংশে দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা এখন মাথা উঁচু করে বসবাস করছেন। ছিটমহল বিনিময় করার জন্য আমরা আন্দোলন করেছিলাম। সুফল এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।'

তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের বন্দিদশা জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। দিয়েছেন স্বাধীনতা।'

আজ ভোররাত ১২টা ১ মিনিটে মোমবাতি জ্বালিয়ে ও কেক কেটে ছিটমহল বিনিময়ের ৭ বছর পূর্তি উদযাপন করেছেন সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। সেসময় তারা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। ছিটমহল বিনিময় ৭ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

দাসিয়ারছড়ায় আয়োজন করা হয়েছে নানান অনুষ্ঠান।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই দিবাগত মধ্যরাতে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় হয়। তারা সেই দিনটিকে 'মুক্তি দিবস' হিসেবে উদযাপন করছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

১৬২ সাবেক ছিটমহলের মধ্যে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের সাবেক ছিটমহল ৫১, জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের সাবেক ছিটমহল ১১১, জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ১৬০ একর।

১১১ সাবেক ছিটমহলের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯, কুড়িগ্রামে ১২, নীলফামারীতে ৪ ও পঞ্চগড়ে ৩৬টি। ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ছিটমহলের মালিক হয় ভারত এবং বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ছিটমহলের মালিক হয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ছিটমহলে বসবাসকারী ৩৭ হাজার ৫৩৫ জন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পান।

সাবেক ছিটমহলবাসী ও জেলা প্রশাসন সূত্র ডেইলি স্টারকে জানায়, ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই বঞ্চিত মানুষগুলোকে মূলধারায় যুক্ত করতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। গত ৬ বছরে সরকার সাবেক ছিটমহলগুলোয় যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্মীয় উপাসনালয়, সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিকের সব মৌলিক অধিকার পূরণ করেছে।

সরকার ২০০ কোটি টাকা খরচে সাবেক ছিটমহলগুলোয় উন্নয়নমূলক কাজ করেছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

Comments