ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাসের বিকল্প আফ্রিকায়?

এ মুহূর্তে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ আসে বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া থেকে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোয় মস্কোর ওপর নেমে আসে শিল্পোন্নত দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা। মূলত, রুশ জ্বালানির বিকল্প খোঁজা শুরু হয় তখন থেকেই।
আলজেরিয়ার একটি অন্যতম প্রধান গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র।
আলজেরিয়ার একটি অন্যতম প্রধান গ্যাস উৎপাদন কেন্দ্র। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এ মুহূর্তে ইউরোপে গ্যাসের চাহিদার প্রায় ৪০ শতাংশ আসে বিশ্বের শীর্ষ গ্যাস রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া থেকে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেশী ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোয় মস্কোর ওপর নেমে আসে শিল্পোন্নত দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা। মূলত, রুশ জ্বালানির বিকল্প খোঁজা শুরু হয় তখন থেকেই।

গতকাল সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) গ্যাস রপ্তানি বাড়ানোর আশা করা হচ্ছে।

এতে আরও বলা হয়, রুশ মুদ্রা রুবলে মূল্য পরিশোধে রাজি না হওয়ায় পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। এটি ইউরোজোনের অন্যান্য দেশগুলোর জন্য বড় হুমকি।

ইইউ চাচ্ছে চলতি বছরের শেষ নাগাদ রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা দুই-তৃতীয়াংশ কমাতে এবং আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে তা পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ক্যারল নাখলে গণমাধ্যমকে জানান, আফ্রিকার প্রধান জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশ আলজেরিয়া, মিশর ও নাইজেরিয়া থেকে ইউরোপে যে পরিমাণ জ্বালানি রপ্তানি হয়, তা মোট রুশ জ্বালানির অর্ধেকেরও কম।

তার মতে, 'এই মুহূর্তে আফ্রিকার জ্বালানি রুশ জ্বালানির বিকল্প হতে পারছে না।'

'সুসংবাদ হলো: রুশ জ্বালানির বিকল্প আছে। জ্বালানি সমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে আফ্রিকার অবস্থান ভালো। এখন সেখানে আরও বিনিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।

তবে সব কিছু প্রস্তুত করতে আরও সময় লাগবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন মতে, ইউরোপে গ্যাস রপ্তানির ক্ষেত্রে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া বেশ ভালো অবস্থানে আছে। বর্তমানে সেখানকার অবকাঠামোও উন্নত।

গ্যাস আমদানি প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়াতে গত মাসে ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি আলজেরিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর এটিই ইতালির প্রথম বড় আকারের জ্বালানি চুক্তি।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিম আফ্রিকার শীর্ষ গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ নাইজেরিয়ার কাছে ইউরোপের দেশগুলো থেকে আসা অনুরোধের বন্যা বয়ে যাচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, নাইজেরিয়ার গ্যাসের প্রধান ক্রেতা স্পেন, পর্তুগাল ও ফ্রান্স। আফ্রিকার দেশটির গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর এটি একটি বড় সুযোগ। তবে এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে।

সূত্র মতে, আগামী ৬ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে নাইজেরিয়ার গ্যাস উৎপাদন পরিস্থিতির বেশ খানিকটা উন্নতি হতে পারে।

'নাইজেরিয়া এলএনজি' প্রতিষ্ঠানের এক্সটারনাল রিলেশসন অ্যান্ড সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আন্দি ওদেহ গণমাধ্যমকে জানান, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে আলোচনা চলছে। চলতি বছরের শেষের দিকে উৎপাদন বাড়বে বলেও আশা করেন তিনি।

পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি থেমে যাওয়া 'ট্রান্স সাহারান পাইপ লাইন' প্রকল্পের অন্যতম প্রধান অংশীদার। প্রকল্পের কাজ শেষে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য নির্মিত প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপ লাইনটি নাইজেরিয়া থেকে নাইজার হয়ে আলজেরিয়া পর্যন্ত যাওয়ার কথা আছে। এর মাধ্যমে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ সংযোগ সৃষ্টি হবে।

তবে ১৯৭০ এর দশকে আলোচনায় আসা এই পাইপ লাইন প্রকল্পের কাজ নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংক্রান্ত অভিযোগের কারণে বন্ধ আছে। এটি শুরুর বিষয়ে সম্প্রতি আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে।

পাশাপাশি, নাইজেরিয়া থেকে মরক্কো পর্যন্ত পাইপ লাইন চালুর আলোচনাও শুরু হয়েছে। বেল ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস'র প্রধান কায়োদি টমাস গণমাধ্যমকে বলেন, 'নতুন প্রকল্পটি ট্রান্স সাহারান পাইপ লাইনের সঙ্গে যুক্ত হবে কিনা তা নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি।'

প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে আফ্রিকার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের ১৩ দেশকে যুক্ত করা হবে। এর নির্মাণ কাজ শেষ করতে ২৫ বছরের বেশি লেগে যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রুশ জ্বালানির ওপর ইউরোপের নির্ভরতা কমানোর সিদ্ধান্ত আফ্রিকার জন্য বিশাল সুযোগ তৈরি করে দিলেও এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিস্তর সময় প্রয়োজন।

তাই বাস্তবতার নিরিখে বলা যেতে পারে, আফ্রিকার গ্যাসকে রুশ জ্বালানির বিকল্প হিসেবে চিন্তা করা হলেও এখনই হয়তো তা সম্ভব হচ্ছে না।

 

Comments