ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান ছিল একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৭৭তম বার্ষিকীতে মস্কোর বিখ্যাত রেড স্কয়ারে বড় ধরনের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রেড স্কয়ারের মঞ্চ থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও অন্যান্য অতিথিরা মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন। ছবি: রয়টার্স

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৭৭তম বার্ষিকীতে মস্কোর বিখ্যাত রেড স্কয়ারে বড় ধরনের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রতি বছর ৯ মে দিনটিকে রাশিয়ায় বিজয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।

রেড স্কয়ারের মঞ্চ থেকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী অবসরপ্রাপ্ত সেনা ও অন্যান্য অতিথিরা মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন।

এবারের মহড়ায় ১১ হাজার সেনা ও সামরিক বাহিনীর ১৩১টি বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়েছে।

রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহড়া চলাকালে প্রথাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট পুতিন।

বক্তৃতায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে একটি সম্ভাব্য আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে পূর্ব-আক্রমণ হিসেবে অভিহিত করেন পুতিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত জনগোষ্ঠীর সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং একইসঙ্গে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে চলমান সংঘর্ষের পেছনের কারণগুলোও ব্যাখ্যা করেন।

তিনি জানান, রাশিয়াকে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়েছে, কারণ পূর্বের দনবাস অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এলাকাগুলোয় (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) বড় আকারের হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।

'আমরা দেখেছি সেখানে (ইউক্রেনে) সামরিক অবকাঠামোর উন্মোচন, শত শত বিদেশি উপদেষ্টা তাদের কাজ শুরু করেছিল। ন্যাটো সদস্য দেশগুলো থেকে সেখানে নিয়মিত অত্যাধুনিক অস্ত্রের চালান আসছিল। প্রতিদিনই বিপদের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছিল', যোগ করেন পুতিন।

বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পুতিন বলেন, 'রাশিয়া এই আসন্ন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি পূর্ব-আক্রমণ করেছে। আমাদেরকে বাধ্য হয়ে, সঠিক সময়ে এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, যেটি একটি সার্বভৌম, শক্তিশালী ও স্বাধীন দেশের জন্য একমাত্র সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল।'

রুশ নেতা আরও বলেন, 'আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সব ধরনের দ্বিমতে থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া সবসময়ই এমন একটি প্রক্রিয়ার পক্ষে ছিল, যা সবার জন্য সমান ও অবিভাজ্য নিরাপত্তা দেবে।'

মহড়া চলাকালে প্রথাগত বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। ছবি: সংগৃহীত

পুতিন বলেন, 'ন্যাটো রাষ্ট্রগুলো আমাদের কথা শুনতে চায়নি, যার অর্থ হচ্ছে- তাদের সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিকল্পনা ছিল এবং আমরা তা আগে থেকে দেখতে পেয়েছি। দনবাসে তারা শাস্তিমূলক উদ্যোগ নেওয়ার জন্য খোলামেলাভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল এবং তারা ক্রিমিয়াসহ আমাদের অন্যান্য অঞ্চলে আগ্রাসন চালাতে চেয়েছিল।'

পুতিন আরও জানান, কিয়েভ তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা ফিরিয়ে আনারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছিল।

তিনি পশ্চিমের দেশগুলোর বিরুদ্ধে 'রুশোফোবিয়া' (রাশিয়া নিয়ে আতঙ্ক) উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনেন।

তিনি বলেন, 'দনবাসের নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাহিনী রুশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে নিজেদের ভূমির জন্য লড়ছে। তারা নিজেদের মাতৃভূমি ও তার ভবিষ্যতের জন্য লড়ছে, যাতে কেউ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে পাওয়া শিক্ষা ভুলতে না পারে এবং যাতে এই পৃথিবীতে কসাই, শাস্তিদাতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদীদের কোনো স্থান না থাকে।'

'দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ যে ভুলগুলো করেছিল, এবারের সামরিক অভিযানে সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করার কোনো অধিকার তার নেই। সে ভুলের জন্য জাতিকে অনেক বড় মূল্য দিতে হয়েছে', যোগ করেন পুতিন।

মহড়ায় ৩৩টি কলামে সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এদের মধ্যে পদাতিক বাহিনী, নৌবাহিনী, সামরিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাডেট ও অন্যান্য সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

ঐতিহ্যগতভাবে একটি টি-৩৪ মডেলের ট্যাঙ্ক সামনে থেকে 'যান্ত্রিক' কলামের নেতৃত্ব দেয়। এই যান্ত্রিক কলামের অংশ হিসেবে টাইফুন অব-রোড সাঁজোয়া যান, বিএমপি ২, বিএমপি ৩ ও কুরগানেট ২৫ সেনা বিধ্বংসী যান, টি-৭২বি৩এম, টি-৯০ এম 'প্রোরিভ' এবং টি-১৪ আরমাতা যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ছিল।

এ ছাড়াও, ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্র পরিবহনকারী যান, এমএসটিএ-এস হাউইটজার কামান ও টর্নেডো-জি মাল্টিপল রকেট লঞ্চ সিস্টেম, টর-এম২, বুক-এম৩, এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী যান, ইয়ারস আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ও উড়ান-৯ রোবট যুদ্ধযান এই মহড়ায় অংশ নেয়।

মহড়া শেষে পুরনো ঐতিহ্য অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পুতিন আলেকজান্ডার বাগানে গিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত অজানা যোদ্ধাদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond Dollar: Bangladesh to seek over 36b yuan in Chinese loans

Bangladesh is going to seek more than 36 billion yuan, equivalent to $5 billion, as soft loans from China to reduce pressure on its dollar reserves.

2h ago