রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত হচ্ছে বেলারুশ?

ভ্লাদিমির পুতিন ও আলেক্সান্ডার লুকাশেনকো (বামে)। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত প্রজাতন্ত্রগুলো যখন এক এক করে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছিল, তখন সে পথেই পা বাড়ায় বেলারুশ।

অন্য সব প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠলেও সেসময় ভূবেষ্টিত বেলারুশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

সেসময়ের সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক ও জাতিগত দিক থেকে রুশ ও বেলারুশদের এক করে দেখেছিলেন বিশ্লেষকরা। শব্দগত দিক থেকে বেলারুশ অর্থ 'হোয়াইট রাশিয়ান'। ভাষা, সংস্কৃতি ভৌগলিক নৈকট্য, ঐতিহাসিক সম্পর্ক—তথা সবদিক থেকেই রুশ ও বেলারুশদের এক জাতি ভেবেছেন তারা।

বহু ক্ষেত্রে মিল থাকায় স্বাধীন হওয়ার পর রাশিয়া সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে বেলারুশের সঙ্গে। ২টি পৃথক দেশ একটি কনফেডারেশনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছে গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে। দেশ ২টির একত্রীকরণ নিয়ে ১৯৯৭ সালে চুক্তিও হয়েছিল।

এই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আবার রাশিয়া-বেলারুশ প্রসঙ্গটি সামনে এলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের 'একত্রীকরণ' মন্তব্যের মধ্য দিয়ে।

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, গত শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, পশ্চিমের চলমান নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া ও বেলারুশের 'একত্রীকরণ'কে ত্বরান্বিত করছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, এক ফোরামে পুতিন বলেন, পশ্চিমের দেশগুলোর 'অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ' এবং তাদের ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা বেলারুশকে দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে মিশে যেতে 'উদ্বুদ্ধ' করেছে।

তার মতে, পরিবর্তিত বাস্তবতায় বেলারুশ-রাশিয়া একত্রীকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট মনে করেন, রাশিয়ার সঙ্গে বেলারুশ 'মিশে' গেলে পশ্চিমের দেশগুলোর 'অবৈধ' নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। তারা এক হয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে। নতুন কর্মদক্ষতার সুযোগ তৈরি হবে।

১৯৯৭ সালে মিনস্ক-মস্কোর 'ইউনিয়ন ট্রিটি'-তে বলা হয়েছিল দেশ ২টি স্বাধীন থাকবে। তবে তাদের নাগরিকরা যেকোনো দেশে বসবাসের পাশাপাশি সে দেশের নাগরিকত্ব নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার ক্ষত কিছুটা হলেও পূরণ করা যাবে।

১৯৯০ সালের জুলাইয়ে স্বাধীন হয় বেলারুশ। এর প্রায় ৫ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৫ সালে দেশটিতে ক্ষমতায় আসেন সোভিয়েত বাহিনীর সাবেক রাজনৈতিক প্রশিক্ষক আলেক্সান্ডার লুকাশেনকো। বেলারুশে তিনি প্রায় ২৭ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন।

২০২০ সালে নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসেন লুকাশেনকো। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে তার সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হলে তিনি তা কঠোর হাতে দমন করেন। তার বিতর্কিত ভূমিকাকে সমর্থন দেয় ক্রেমলিন। সেই অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পুতিনের আরও ঘনিষ্ঠ হন লুকাশেনকো।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউরোপ তথা বৈশ্বিক রাজনীতিতে আসে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। সেদিন রাশিয়া প্রতিবেশী ইউক্রেনে 'বিশেষ সামরিক অভিযানের' নামে আগ্রাসন চালালে শুরু হয় নতুন মেরুকরণ।

যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা একাট্টা হয়ে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও মস্কোর ওপর ক্রমাগত নিষেধাজ্ঞা দিতে শুরু করলে পুতিন-লুকাশেনকো সম্পর্ক আরও জোরালো হয়।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সামরিক জোটে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের যোগ দেওয়ার বিষয়ে তুরস্কের 'অনাপত্তি' রাশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন উত্তেজনা ছড়ায়। ন্যাটোর সম্প্রসারণকে মস্কো 'সরাসরি হুমকি' হিসেবে আখ্যা দেয়। পাশাপাশি ঘোষণা দেয় 'বেলারুশের সঙ্গে সামরিক একত্রীকরণের' কৌশলগত প্রক্রিয়ার।

গত ২৫ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রেসিডেন্ট পুতিন বেলারুশীয় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে মিনস্ককে পরমাণু বোমা বহনযোগ্য 'ইসকান্দার' ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়া হবে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাস জানায়, বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, 'আমরা একমত হয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেলারুশে ইসকান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা সরবরাহ করব।'

এর আগে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তথা ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর মাত্র ৪ দিন পর আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশে স্থায়ীভাবে রুশ সেনা ও পরমাণু বোমা রাখার পক্ষে ভোট দিয়েছেন দেশটির ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ ও বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ১০ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ।

ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর দিন কিয়েভের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছিল, প্রতিবেশী বেলারুশের সেনারা রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন হামলায় যোগ দিচ্ছে।

গত ১ মার্চ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেনকোর বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বেল্টা জানায়, ইউক্রেন সীমান্তে আরও সেনা মোতায়েন করছে মিনস্ক।

আগ্রাসনের শুরুতে রুশ সেনারা বেলারুশ থেকে ইউক্রেনে ঢুকছে বলেও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে রাশিয়া ও বেলারুশের ঘনিষ্ঠতার চিত্র দেখা যায়। তবে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের 'একত্রীকরণ' মন্তব্য দেশ ২টির সম্পর্কের গভীরতাকেই যেন জানান দিচ্ছে।

রুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্টিনের ভাষায়, 'সব কিছু বাদ দিলেও, আমরা মনে করি, একটি ইউনিয়ন রাষ্ট্র গড়তে একত্রীকরণ প্রক্রিয়া জোরদার করা জরুরি।'

তাই অদূর ভবিষ্যতে বেলারুশ যদি রাশিয়ার সঙ্গে 'একীভূত' হয়েই যায়, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে তা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Comments

The Daily Star  | English

Response to J&K Terror Attack: India gives forces ‘operational freedom’

Indian Prime Minister Narendra Modi has given the country's military "operational freedom" to respond to a deadly attack in Kashmir last week, a senior government source told AFP yesterday, after New Delhi blamed it on arch-rival Pakistan.

5h ago