কে হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী?

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বরিস জনসন। এরপর থেকেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে, কে হতে যাচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।
এপি ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন বরিস জনসন। এরপর থেকেই জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে, কে হতে যাচ্ছেন দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

কনজারভেটিভ পার্টির বেশির ভাগ আইনপ্রণেতা ছাড়াও মন্ত্রিসভায় ৫০ জনের বেশি সদস্যের পদত্যাগের পর আজ বৃহস্পতিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন বরিস।

গত মঙ্গলবার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন জনসন সরকারের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। 

তাদের পদত্যাগের ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জনসনের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে একের পর এক মন্ত্রী পদত্যাগ করতে শুরু করেন। তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কিছু কেলেঙ্কারির ঘটনায় বরিস জনসনের প্রশাসন কলঙ্কিত হয়েছে এবং এ পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সরকারের সঙ্গে থাকা সম্ভব হবে না।

গত কয়েক মাসে বরিসের নেতৃত্বে বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্ত ও কেলেঙ্কারির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে। ফলে দল ও দেশের নেতা হিসেবে তার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ সময় পুলিশ তাকে করোনাভাইরাসের বিধিনিষেধ না মানার জন্য জরিমানা করে এবং ডাউনিং স্ট্রিটের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) কর্মকর্তাদের নীতিমালা বহির্ভূত আচরণ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

সংবাদমাধ্যম এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বরিসের উত্তরাধিকারী হিসেবে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম আলোচনায় এসেছে। তবে এখনো পর্যন্ত পরিষ্কার না, কে হতে চলেছেন পরবর্তী বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্যদের তালিকায় যাদের নাম আছে, তারা হলেন-

ঋষি সুনক

যুক্তরাজ্যের প্রথম হিন্দু চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার ঋষি সুনক। যিনি গত মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনিই পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন। 

তবে, তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং পরিবারের ট্যাক্স সম্পর্কিত বিতর্কের কারণে সুনকের সম্ভাবনা বেশ খানিকটা নষ্ট হয়েছে। কিন্তু বরিসের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের কারণে ব্রিটিশ সরকারের শীর্ষ পদটির জন্য তাকে এগিয়ে রাখছেন বাকিরা। 

৪২ বছর বয়সী সুনক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ পরিচিত। এ ছাড়া মহামারির সময়ে দেশটির অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে তার ভূমিকার জন্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। 

কিন্তু জীবনযাপনে ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারি সহায়তার বিষয় অনাগ্রহ দেখানোর কারণে তার জনসমর্থনে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

জেরেমি হান্ট

৫৫ বছর বয়সী সাবেক পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে জনসনের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিজেকে 'গুরুত্বপূর্ণ' বিকল্প হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন।

হান্ট গত মাসে নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে এক প্রচ্ছন্ন বার্তা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জনসনের অধীনে 'আমরা আর জনগণের কাছে আস্থাশীল নই' এবং 'আমরা পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে হারতে যাচ্ছি।'

তবে, বরিসের মতো তার রাজনৈতিক ক্যারিশমা নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে তার প্রাক-মহামারিকালীন অর্জন সম্প্রতি ধ্বংস করে দিয়েছেন জনসন মিত্ররা। 

লিজ ট্রাস

৪৬ বছর বয়সী ফরেন সেক্রেটারি লিজ ট্রাস কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। তার স্পষ্টভাষী স্বভাব ও পলিটিক্যাল অ্যাটাকের কারণে নিজ দলের সদস্যদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

তবে, তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি ব্রিটিশদের ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে উৎসাহিত করেছিলেন। সমালোচকরা বলেন, তার নেতৃত্ব দেওয়ার ভঙ্গি খুবই খোলামেলা। 

যখন তিনি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের প্রধান ছিলেন, সে সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক উপস্থিতির কারণে কয়েকজন সংসদ সদস্য তার বিভাগকে 'ডিপার্টমেন্ট ফর ইনস্টাগ্রামিং ট্রাস' বলে অভিহিত করেছিলেন।

সাজিদ জাভিদ

জাভিদ, যিনি গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর আগে ২০২০ সালে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকেও পদত্যাগ করেছিলেন সাজিদ।

৫২ বছর বয়সী পাকিস্তানি অভিবাসী বাস ড্রাইভারের ছেলে জাভিদ। যিনি একজন সফল ব্যাংকার ছিলেন।

তবে, সুনকের মতো জাভিদও তার ব্যক্তিগত সম্পদ এবং কর সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন।

বেন ওয়ালেস

৫২ বছর বয়সী প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। ইউক্রেন সংকটে তার ভূমিকার কারণে পরবর্তী নেতা হিসেবে টোরি পার্টির তৃণমূলের পছন্দের তালিকায় রয়েছেন। 

সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং জনসনের এই মিত্র দলের নেতৃত্ব দিতে না চাইলেও তাকে স্পষ্টভাষী এবং পদটির যোগ্য হিসেবে মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া তালিকায় আছেন, নবনিযুক্ত অর্থমন্ত্রী নাদিম জাহাবী, টম টুগেনধাত, পেনি মর্ডান্ট ও ডমিনিক রাবের নাম।

Comments