প্রবাসে

টরন্টো বাংলা বইমেলার রূপকার শেখ সাদী আহমেদ

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মূলস্রোতকে কানাডার পরিমণ্ডলে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি কানাডিয়ান শেখ সাদী আহমেদ। ২০০৩ সালে কানাডার টরেন্টো শহরে প্রথম বাংলা বইয়ের ঐতিহ্যবাহী দোকান 'অন্যমেলা' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় তার সফল নেতৃত্ব ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কানাডায় 'টরন্টো বাংলা বইমেলার' যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে।
শেখ সাদী আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মূলস্রোতকে কানাডার পরিমণ্ডলে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি কানাডিয়ান শেখ সাদী আহমেদ। ২০০৩ সালে কানাডার টরেন্টো শহরে প্রথম বাংলা বইয়ের ঐতিহ্যবাহী দোকান 'অন্যমেলা' প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় তার সফল নেতৃত্ব ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কানাডায় 'টরন্টো বাংলা বইমেলার' যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সাল থেকে।

এ বছরও ৬ ও ৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টরেন্টো বাংলা বইমেলা। এ মেলা শুধু কানাডার বাংলাদেশি লেখক ও বাংলাদেশের প্রকাশক-লেখকদের জন্যই নয় বরং একইসঙ্গে কানাডার অভিবাসী, লেখকসহ সাধারণ মানুষের ভাব ও সংস্কৃতি আদান-প্রদানের মিলনমেলায় উৎসবে পরিণত হয়েছে।

মেলার পেছনের চিন্তা সম্পর্কে শেখ সাদী আহমেদ বলেন, 'আমার মনে হয়েছে পৃথিবীর যে অঞ্চলেই আমরা বসবাস করি না কেন বাঙালির যে আবহমান কৃষ্টি ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতি আছে তা অন্যদের মধ্যে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য প্রয়োজন ভালো বই। আর এ কারনেই বাংলা বইয়ের প্রাধান্য।'

টরন্টোর বাংলা বইমেলার আয়োজনের পেছনে প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে তিনি বলেন, 'যে কোনো বড় কাজ করতে গেলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসে। বাংলা বইমেলার মতো এমন আয়োজন করতে বিশেষত অভিবাসী জীবনের প্রতিকূল পরিবেশ, আর্থিক সংকটের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী মেলা করা হয়ে ওঠে না। এ ছাড়া অনেকের নির্লিপ্ততা একটি প্রতিবন্ধকতা।'

'তবে মেলায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় প্রকাশক যেমন সময়, কথাপ্রকাশ, অনন্যা, অংকুরসহ অন্যান্যদের অংশগ্রহণ অভিবাসী ও নতুন প্রজন্মের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আগ্রহ তৈরি করেছে। এ ছাড়াও বাংলা একাডেমিসহ বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বরেণ্য ব্যক্তিদের টরন্টো বাংলা বইমেলায় অংশ নিয়ে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে স্থানীয় অভিবাসী লেখক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের পৃষ্ঠপোষকতা মেলাকে আরও বেগবান করেছেন,' বলেন তিনি।

এবার ১৬তম বইমেলা আয়োজিত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, '১৫তম টরন্টো বাংলা বইমেলা উদ্বোধনকালে বাংলাদেশের বরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী এই মেলাকে টরন্টোর একটি বিশেষ উৎসব, এক অর্থে কানাডার এক বড় উৎসব বলে অভিহিত করেছেন।'

শেখ সাদী আহমেদ আরও বলেন, 'কানাডা বহু সাংস্কৃতিক দেশ হিসেবে পরিচিত এবং এখানে অভিবাসীরা সব জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি চর্চাকে সন্মান ও উৎসাহ দেয় ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হয় রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাংলাদেশি তথা বাঙালি হিসেবে আমার মনে হয়েছে, বইমেলা যেমন আমাদের জাতীয় অনুষ্ঠান যার সঙ্গে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বত্বা জড়িত, কানাডায় সে রকম একটি আয়োজনের সঙ্গে নিজেকে জড়িত করতে পেরে আমি স্বস্তি অনুভব করি।'

'কানাডা আমার মাতৃভূমি নয় বাসভূমি। জীবনের অধের্ক সময় এখানে কাটালেও আমার চেতনার উন্মেষ আমার জন্মভূমি বাংলাদেশে। এর জন্য আমাকে অবশ্যই মাতৃভৃমির সেবা ও পরিচর্যা করে যেতে হবে, তা যে কোনো উপায়ে হোক না কেন,' বলেন তিনি।

শেখ সাদী আহমেদ জানান, তিনি ও তার স্ত্রী বাংলাদেশ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তাদের এক মেয়ে কানাডায় লেখাপড়া শেষে সেখানকার প্রাদেশিক সরকারের অধীনে চাকরি করেন।

প্রতিবছর টরেন্টো বাংলা বইমেলার পাশাপাশি শেখ সাদী আহমেদ স্থানীয় ও কানাডার বাঙালি লেখক, চিন্তাবিদদের নিয়ে টরেন্টোর বাংলা টাউন রূপে জনপ্রিয় ২৯৮৬  ডানফোর্থ সড়কে অবস্থিত 'অন্যমেলায়' নিয়মিতভাবে আলোচনা, বাংলা সাহিত্য সভা, বই পরিচিতি, কবিতা পাঠ, জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী পালন, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস স্মরণিকা প্রকাশসহ বিভিন্ন আয়োজন করে থাকেন।

Comments