রানির মৃত্যু: শোক দিবসে অস্ট্রেলিয়ায় পতাকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ

অস্ট্রেলিয়ান পতাকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ। ছবি: সংগৃহীত

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গতকাল অস্ট্রেলিয়ায় ছিল জাতীয় শোক দিবস। অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্ট হাউসে এ উপলক্ষে একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। 

এ সময় উপনিবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সারা দেশে হাজার হাজার অস্ট্রেলিয়ান রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় তারা ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বিলুপ্তি দাবি করেন। 

'বর্ণবাদী ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদ'র বিরোধিতা করে বিক্ষোভকারীরা সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন এবং ক্যানবেরার রাস্তায় মিছিল করেছেন।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় রানি  এলিজাবেথের জন্য অস্ট্রেলিয়ানদের ১ মিনিটের নীরবতায় অংশ নিতে অনুরোধ করেন। ঠিক তখনই শোক দিবসের প্রতিবাদে আদিবাসীসহ বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় নেমে আসে রাস্তায়। 

মেলবোর্ন শহরে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ আদিবাসী পতাকা ও ব্যানার নিয়ে বিররারুং মার থেকে পার্লামেন্ট হাউস পর্যন্ত মিছিল করেছে।

বিক্ষোভকারীরা স্লোগান ছিল, 'রাজার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করুন।'

মেলবোর্ন সমাবেশের সংগঠক তারিন ওনাস উইলিয়ামস বলেন, 'এই দেশটি এমন একজন রানির জন্য শোক প্রকাশ করছে যিনি আমাদের ভূমি ও আমাদের জনগণের ধ্বংসের প্রতিনিধিত্ব করেন।'

এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ব্রিটিশ কনস্যুলেটের অফিসের দেওয়ালে লাল রঙ ঢেলে দেন। ব্রিসবেনে বিক্ষোভকারীরা ব্রিটিশ কনস্যুলেটের বাইরে একটি অস্ট্রেলিয়ান পতাকা পোড়ানোর সময় উল্লাস করে। 

সিডনির টাউন হলের বাইরে জড়ো হয়েছিল শত শত মানুষ। ফার্স্ট নেশনস উইমেন সারাবি গ্রিস্টউড সিডনিতে নাইন নিউজকে বলেন, 'আমরা গত ২০০ বছর ধরে ২৬ জানুয়ারি তথাকথিত অস্ট্রেলিয়া দিবসকে শোক দিবস হিসেবে ঘোষণার অনুরোধ করছি, অথচ তারা শুনছেন না। আর রানির মৃত্যুর ৮ ঘণ্টা পর তারা এই দিনটিকে শোকের দিন করতে পারে।'

অ্যাডিলেড এবং ক্যানবেরায় একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। অ্যাডিলেডের গভর্নমেন্ট হাউস থেকে একজন 'রাজতন্ত্র বাতিল করুন' বলে চিৎকার করে বের হয়েছিলেন। তিনি ভেতরে একটি শোক বইতে একই বাক্যাংশে স্বাক্ষর করেছেন। 

ক্যানবেরার সংসদ ভবনে রাজনীতিবিদ এবং রাষ্ট্রদূতদের পছন্দের মানুষ রানি  এলিজাবেথকে স্মরণ করার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় সেই শোকের বিরুদ্ধে বাইরে বিক্ষোভ করছিলেন।

একজন বিক্ষোভকারী এনআইটিভি নিউজকে বলেন, 'নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে কেন আমাদের রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের দেশ থেকে আসেন না এবং কীভাবে রাষ্ট্রপ্রধান এই দেশে এসেছেন? তিনি এসেছেন হত্যার মাধ্যমে, লুটপাটের মাধ্যমে, ফার্স্ট নেশনস জনগণের জমি দখলের মাধ্যমে এবং এটি একটি অব্যাহত চলমান প্রকল্প।'

সংগঠক রনি গোরি বলেন, 'আমরা শোক করছি না। তিনি আমাদের রানি ছিলেন না। আমাদের মনে রাখা দরকার যে সহিংসতা তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন এবং সেই সহিংসতা ছিল গণহত্যা ও উপনিবেশবাদ এবং এটিই সেই উত্তরাধিকার যা তিনি রেখে গেছেন।'

'উপনিবেশের পর থেকে আমরা নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছি এবং এখনো এই দেশে আমাদের জনগণের সঙ্গে সেই নৃশংসতা ঘটছে,' যোগ করেন তিনি। 

জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা লিডিয়া থর্পও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবং নকল রক্তে তার হাত ঢেকে দেন। তিনি বলেন, 'আজকে এটাই হচ্ছে বাস্তবতা, রাজার হাতে রক্ত লেগে আছে। আমাদের লোকেরা এখনো এই দেশে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে।'

অ্যাক্টিভিস্ট লিন্ডা জুন বিক্ষোভে উপস্থিত থেকে বলেন, 'আদিবাসীরা রানির জন্য শোক করবে বলে আশা করা অসম্মানজনক। অস্ট্রেলিয়ার উপনিবেশ স্থাপনে রাজতন্ত্রের ভূমিকা এবং ফলস্বরূপ আদিবাসীদের সঙ্গে আচরণের প্রতি নতুন করে মনোযোগ দেওয়া দরকার।'

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Next nat’l polls: BNP urges CA, CEC to disclose what they discussed

The BNP will feel reassured if both the chief adviser and the chief election commissioner disclose to the nation what they discussed about the upcoming national polls during Thursday’s meeting, the party’s Standing Committee member Salahuddin Ahmed said yesterday.

47m ago