রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্পেনের সমর্থন চায় বাংলাদেশ

স্পেনের পররাষ্ট্র সচিব পিলার ক্যানসেলা রড্রিগেজের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সক্রিয় সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় গাম্বিয়াকে সমর্থন দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানির সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য স্পেনের কাছে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।

স্পেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক সেক্রেটারি অব স্টেট পিলার ক্যানসেলা রড্রিগেজের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ অনুরোধ জানান দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানী মাদ্রিদে স্পেনের পররাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কো-অপারেশন মন্ত্রণালয়ে সেক্রেটারি অব স্টেটের দপ্তরে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ (এইচআরসি) ও আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইসিএও) আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রার্থিতার জন্যও স্পেনকে সমর্থনেরও অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের জাতীয় অবস্থানের প্রশংসা করে সেক্রেটারি অব স্টেট রড্রিগেজ বলেন, 'ইস্যুটি সম্মিলিত আন্তর্জাতিক প্রয়াস জরুরি।'

'আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গাম্বিয়াকে সমর্থন করার জন্য স্পেন বিস্তারিতভাবে তথ্য পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান রড্রিগেজ।

আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির প্রস্তাব এবং এইচআরসি ও আইসিএওর নির্বাচনে প্রার্থিতায় সমর্থনের বিষয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ স্পেন সরকারের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দেন সেক্রেটারি অব স্টেট রড্রিগেজ।

রড্রিগেজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা সম্পর্কে অবহিত করে রাষ্ট্রদূত সারওয়ার মাহমুদ বলেন, 'বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হতে চলেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এ বছর স্পেন ও বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। বাণিজ্য ছাড়াও সহযোগিতার অভিনব ক্ষেত্রগুলোতে সম্পর্ক সম্প্রসারণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।'

দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে  বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে প্রক্রিয়াধীন যুব ও ক্রীড়া উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক বিনিময়, কূটনৈতিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা, কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার পারস্পরিক অব্যাহতি, সামুদ্রিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং স্পেনের কৃষি খাতে বাংলাদেশি মৌসুমি কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও  চুক্তি দ্রুত সই করার জন্য রড্রিগেজের সহযোগিতা কামনা করেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ।

এ ছাড়াও সেক্রেটারির কাছে বাংলাদেশ ও স্প্যানিশ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততার প্রস্তাব করা হয় এবং স্প্যানিশ ভাষা শেখার জন্য বাংলাদেশের তরুণ কূটনীতিকদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য স্পেনকে অনুরোধ জানানো হয়।

বাংলাদেশ ও স্পেনের মধ্যে প্রক্রিয়াধীন সমঝোতা স্মারক ও চুক্তিগুলো দ্রুত সই এবং উত্থাপিত প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সম্ভাব্য সব সহায়তার আশ্বাস দেন পিলার ক্যানসেলা রড্রিগেজ।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ও স্পেন উভয়ই সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ। সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করা ছাড়াও, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ আছে এবং এক্ষেত্রে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।'

সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন উন্নয়ন নীতির জন্য স্প্যানিশ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য দায়বদ্ধ। সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি স্প্যানিশ এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশনের প্রেসিডেন্টও।

লেখক: স্পেনপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

9h ago