জাপানে যে প্রক্রিয়ায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়

‘মেড ইন জাপান’ যেমন বিশ্বখ্যাত, তেমনি ‘জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ’ হিসেবেও বহুল পরিচিত।
জাপানের একটি সুপারশপ। ছবি: রয়টার্স

'মেড ইন জাপান' যেমন বিশ্বখ্যাত, তেমনি 'জাপান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশ' হিসেবেও বহুল পরিচিত।

প্রথমটির সঙ্গে দ্বিমত হওয়ার সুযোগ নেই, কিন্তু দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে অনেকাংশেই আমার দ্বিমত রয়েছে, বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে।

জাপান, বিশেষ করে টোকিওকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায়শই বিশ্বের ব্যয়বহুল শহর হিসেবে প্রথম স্থানটি দখল করে নেয় এই শহর।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে জাপান নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল। তবে, এখানকার শ্রম মজুরি নির্ধারণ করা হয় জীবনযাত্রার মান ও ব্যয়ের ওপর নির্ভর করে। এগুলো নির্ধারণ করা হয় মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন জরিপের নিরিখে এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে।

জাপানে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি করা হয় পূর্ব ঘোষণা দিয়ে এবং যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে। এ নিয়ে ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়ায় চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়।

জাপানে উৎপন্ন পণ্যের খরচ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই বিদেশ থেকে খাদ্য পণ্য আমদানিতে ঝুঁকে পড়েছে দেশটি। এতে একদিকে যেমন পূর্ব প্রস্তুতি থাকায় খাদ্য পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, অপর দিকে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখা যায় দাম।

করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিভিন্ন কাঁচামালের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বেড়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েনের (জাপানি মুদ্রা) দাম উঠা-নামা।

জাপানে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করতে হলে যথাযথ কারণ উল্লেখ করে পূর্ব ঘোষণা দিতে হয়। এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয় মিডিয়ার পক্ষ থেকে। জাপানে হঠাৎ কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যায় না।

টেইকোকু ডেটা ব্যাংক লিমিটেডের জরিপ অনুসারে, গত বছর জাপানে ১০ হাজারের বেশি খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশ।

এর মধ্যে ১০৫টি প্রধান খাদ্য নির্মাতা গত জুনের মধ্যে ৬ হাজার ২৮৫টি পণ্যের দাম বাড়ায় এবং জুলাই থেকে বাকি ৪ হাজার ৫০৪টি পণ্যের দাম বাড়ায়। এসব পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে জুনের শুরুতেই।

গত ৬ জানুয়ারি বিশ্বখ্যাত ফাস্ট ফুড চেইন ম্যাকডোনাল্ডস জাপানে তাদের ৮০ ভাগ পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এই দাম কার্যকর হবে আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকে।

মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে তারা ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ, ক্রমবর্ধমান শ্রম মূল্য বৃদ্ধি, পণ্য সরবরাহ ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধি এবং জাপানি মুদ্রা বিনিময়ের দ্রুত অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছে।

এর আগে ম্যাকডোনাল্ডস জাপান সর্বশেষ ২০২২ সালের মার্চে প্রায় ২০ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে প্রায় ৬০ শতাংশ মূল্য বাড়িয়েছিল।

ম্যাকডোনাল্ডসের মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা শিক্ষার্থীদের ওপর যে প্রভাব ফেলবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা, শিক্ষার্থীরাই ম্যাকডোনাল্ডসের সবচেয়ে বড় বাজার এবং তাদের হাত খরচে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

Comments