অর্থ ঘাটতি, তবুও দামি এয়ারবাস কিনতে রাজি বিমান
৮ হাজার কোটি টাকায় এয়ারবাসের দুটি উড়োজাহাজ কিনতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু, এই অর্থ জোগানের বিষয়ে কোনো পূর্ব পরিকল্পনা না থাকায়, এয়ারবাস কিনতে বিমান এখন ৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি পূরণের উপায় খুঁজছে।
কূটনৈতিক চাপে এয়ারবাস ও বিমানের মধ্যে সমঝোতা স্মারকের খসড়া তৈরি হওয়ার সময়, উড়োজাহাজগুলোকে কীভাবে লাভজনক করা যায়, সংস্থাটিকে তা নির্ধারণ করতে বলে বিমান বোর্ড।
অথচ, আরও কম খরচে বোয়িং কেনার প্রস্তাব থাকলেও, সেটি মূল্যায়ন পর্যন্ত করা হয়নি।
গত ১৫ নভেম্বর বিমানের বোর্ড সভায় এয়ারবাস নিয়ে আলোচনা হয়।
সভায় বোর্ড সদস্য রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, 'প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে ৪ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। তবে আমরা কীভাবে পুনর্মূল্যায়ন করব, তার ওপর পরিমাণ পরিবর্তন হতে পারে।'
সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, 'কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং বিমানের বাণিজ্যিক স্বার্থ, এ দুটি বিষয় সামলানোর নীতিতে বিমান এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কিনতে রাজি হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরের সময় এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করার আশা করেছিলেন। আবার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন সফর করেন, তখনও তারা এ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য বলেছিলেন। ইইউর অন্যান্য দেশগুলোও এটি দেখতে আগ্রহী। রুশনারা আলীও (ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ান) সফর করেছেন।'
এয়ারবাসের বিক্রয় সংক্রান্ত প্রস্তাবনাটি পর্যালোচনা করেছে দ্য ডেইলি স্টার। এতে দেখা গেছে, সমঝোতা স্মারকে দুটি উড়োজাহাজের জন্য অ-ফেরতযোগ্য এক কোটি ডলারের বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি ফি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমরা এয়ারবাস কিনতে রাজি হয়েছি, কারণ কোনো এয়ারলাইনসের কোনো একটি এয়ারক্র্যাফট নির্মাতার ওপর নির্ভরশীল থাকা উচিত নয়। টরন্টো ও নারিতায় যাত্রী চাহিদা আছে এবং এজন্য আমাদের বহর বড় করতে হবে। তবে আমরা তা সঠিকভাবে করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং এটি করতে সময় লাগবে।'
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফর করেন। প্রতিমন্ত্রী মাহবুব বলেন, সে সময় বাংলাদেশ এয়ারবাসের ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ৫ মে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী লর্ড ডমিনিক জনসন এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান লন্ডনে আটটি এয়ারবাস এ৩৫০ এবং দুটি মালবাহী উড়োজাহাজ কেনার বিষয়ে একটি যৌথ ইশতেহারে সই করেন।
কিন্তু এ সবই হয়েছে উড়োজাহাজ কিনতে বিমানের কোনো যথাযথ সমীক্ষার আগেই। এয়ারবাস কেনার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর একটি কারিগরি-আর্থিক কমিটি গঠন করা হয়।
বিমান বোর্ড ৩ মে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের পরই উড়োজাহাজ কেনা যাবে। বোর্ড কোনো নির্দিষ্ট উড়োজাহাজ নির্মাতার ওপর জোর দেয়নি। তবে 'আটটি রোলস-রয়েসের এ৩৫০-৯০০/১০০ উড়োজাহাজ (এ৩৫০ প্যাক্স এয়ারক্র্যাফট) বা বিমানের প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য কোনো উপযুক্ত বিমান (প্রশস্ত বা সরু)' উল্লেখ করেছে।
এর দুই দিন পরই যৌথ ইশতেহার সই হয়।
এয়ারবাসের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রথমে দুটি এ৩৫০-৯০০ কেনা হবে, যেগুলো ২০২৬ ও ২০২৭ সালে সরবরাহ করা হবে। প্রথম দুটি এয়ারক্র্যাফটের জন্য প্রি-ডেলিভারি পেমেন্ট হিসেবে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। চুক্তি সইয়ের সময় ৩০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে এবং বাকিটা ৩০ মাসে পরিশোধ করতে হবে।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, যদি বিমান এ দুটি উড়োজাহাজ কেনে এবং আরও আটটি কেনার প্রতিশ্রুতি দেয়, তাহলে এয়ারবাসের অন্য পণ্য ও সেবার জন্য ৪৩৪ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাকিতে কেনার সুবিধা পাবে।
এদিকে, এয়ারবাসের উড়োজাহাজ কেনার তহবিল কীভাবে সংগ্রহ করা যায়, তা নিয়ে এখনো চিন্তায় আছে বিমানের কারিগরি-আর্থিক কমিটি। একইসঙ্গে তারা এর জ্বালানি খরচ, রক্ষণাবেক্ষণ খরচের বিপরীতে রুট পরিকল্পনা এবং তা থেকে আয় দিয়ে নতুন উড়োজাহাজের কিস্তি শোধ করা যাবে কি না, তাও নির্ধারণ করবে।
কিন্তু, এই কমিটি এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের প্রস্তাবনার মধ্যে কোনো ধরনের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করছে না।
বিমানের বকেয়া ঋণ
বিমান যখন এয়ারবাস কেনার পরিকল্পনা করছে, তখন বহরের অধিকাংশ উড়োজাহাজ কেনার ঋণের বোঝা বিমানের কাঁধে।
বহরের ২১টি উড়োজাহাজের মধ্যে বিমানের পূর্ণ মালিকানা চারটির। এর দুটি শর্ট-হৌল ডি হ্যাভিল্যান্ড কানাডা ড্যাশ ৮-৪০০ এবং দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০। ২০১১ সালে আনা দুটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর এর ঋণ পরিশোধ প্রায় শেষের দিকে।
২০১১-২০২১ সালের মধ্যে কেনা উড়োজাহাজের পাওনার প্রায় অর্ধেক শোধ হয়েছে।
বিমানের নথি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির মোট বকেয়া ঋণ প্রায় ৮ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি ঋণ উড়োজাহাজ কেনার, যা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।
এদিকে, এয়ারবাসের দুটো উড়োজাহাজের জন্য বিমানকে খরচ করতে হবে ৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া, এর জন্য হ্যাঙ্গার, পাইলট, কেবিন ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী এবং গ্রাউন্ড সার্ভিস প্রোভাইডারসহ সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থাপনা স্থাপনে আরও অনেক ব্যয় আছে।
নতুন ব্যবস্থাপনার খরচ বিমান এখনো হিসাব করতে পারেনি। তবে, অক্টোবরে এয়ারবাসের প্রতিদ্বন্দ্বী বোয়িং দাবি করেছিল যে, এই খরচ ১৪৬ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বিমানের বর্তমান বহরকে বোয়িং ও এয়ারবাসের মিশ্র বহরে রূপান্তর করতে নতুন সরঞ্জামাদি, খুচরা যন্ত্রাংশ ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হবে। শুধু খুচরা ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি কিনতে বিমানকে আরও ৬১ দশমিক ৭৭ মিলিয়ন ডলার গুনতে হবে।
এয়ারবাসের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, উড়োজাহাজ কেনার ৮০ শতাংশ অর্থায়নের ব্যবস্থা করবে এয়ারবাস সংশ্লিষ্ট রপ্তানি ঋণ সংস্থাগুলো। বাকি ২০ শতাংশ ব্যাংকঋণ নিতে হবে বিমানকে।
২০১৯-২১ সালের মধ্যে বিমানের কেনা তিনটি ড্যাশ-৮ এবং দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯, এই পাঁচ ঊড়োজাহাজের অর্থায়ন করা হয়েছিল দেশের রিজার্ভ থেকে। বিমান এখনো সেই টাকা ফেরত দিতে পারেনি।
আবার, বহরের উড়োজাহাজগুলো যখন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না বিমান, তখন আবার নতুন উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা চলছে।
বিমানের ঊর্ধ্বতন সূত্র জানায়, দূরপাল্লার বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ উড়োজাহাজকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ব্যবহার করতে দিনে কমপক্ষে ১৫ ঘণ্টা চলাচল করতে হয়।
চলতি বছরের জুন-অক্টোবরের মধ্যে বিমানের উড়োজাহাজ চলাচলের তথ্য হাতে পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার। এতে দেখা যায়, দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ উড়োজাহাজকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৪৩ ঘণ্টা ব্যবহার করা হয়েছে।
ছয়টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ দিনে ১০ ঘণ্টারও কম সময় উড়েছে, বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ দিনে উড়েছে গড়ে ১১ ঘণ্টার কিছু বেশি।
পাঁচটি স্বল্প দূরত্বের ড্যাশ-৮ সবচেয়ে কম দিনে মাত্র ৬ দশমিক ২৭ ঘণ্টা উড়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২১টির বেশি উড়োজাহাজ চলাচল সংস্থার ব্যবসায়িক কৌশল তৈরি করেছে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শ সংস্থা ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানি। ২০২২ সালে একটি লেখায় প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যে এয়ারলাইনস নতুন ও দামি উড়োজাহাজ কিনবে, এয়ারক্র্যাফট বড় বা ছোট হোক, সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করেই পরিচালনার খরচ মেটাতে হবে। সাধারণত, ন্যারো-বডির নতুন উড়োজাহাজ দিনে ১০-১২ ঘণ্টা এবং ওয়াইড-বডির উড়োজাহাজ দিনে ১৪-১৫ ঘণ্টা চলাচল করা উচিত।
বোয়িং ৭৭৭ ও ৭৮৭ ওয়াইড-বডি এবং বোয়িং ৭৩৭ ন্যারো-বডি হিসেবে পরিচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ককপিট ক্রু ঘাটতি থাকায় উড়োজাহাজ ব্যবহার কম হচ্ছে।
ক্রুদের ব্যবহার সম্পর্কে জানেন, বিমান সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ডেইলি স্টারকে জানান, বিমানের বহর মিশ্র হলে, ককপিট ক্রু সংকট আরও তীব্র হতো। যদি বিমান এ৩৫০ এয়ারবাসের জন্য দুজন পাইলটকে আলাদা করে রাখে, তাহলে তারা ২০২৭ সালের শেষদিকে সেটি পরিচালনার সক্ষমতা অর্জন করবেন। কিন্তু প্রথম এয়ারবাসটি আসবে ২০২৬ সালে।
কারণ এয়ারবাসের বিক্রয় প্রস্তাবনায় আছে, প্রতিটি উড়োজাহাজের জন্য তারা ৬ সেট ককপিট এবং ৬ সেট কেবিন ক্রুকে প্রশিক্ষণ দেবে। প্রশিক্ষণ শুরু হবে উড়োজাহাজ সরবরাহের এক বছর আগে এবং শেষ হবে এক বছর পর।
যোগাযোগ করা হলে এয়ারবাসের বিপণন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও দা কস্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি (এয়ারবাস কেনা) দীর্ঘমেয়াদে একটি বিনিয়োগ।' তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ যখন এ৩৫০ কিনবে, তখন পাইলটদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরে যদি এ৩২০ বা এয়ারবাসের অন্য কোনো উড়োজাহাজ কেনে, তাহলে একই পাইলটরা ১০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে সেগুলো পরিচালনা করতে পারবে।'
এয়ারবাসের সব উড়োজাহাজের ককপিটের ইন্টারফেস একই বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'একজন পাইলটের বোয়িং ৭৮৭ পরিচালনার প্রশিক্ষণ থাকার পরও তাকে বোয়িং ৭৭৭ পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিতে চাইলে, একটা বড় ভর্তুকি দিতে হয়।'
গত সেপ্টেম্বরে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিমানের ৬০ জন প্রকৌশলীর মধ্যে মাত্র চারজনের এ৩৫০'র কাজ করার আংশিক প্রশিক্ষণ আছে।
বিমানের প্রকৌশলীরা বলেন, প্রকৌশলীদের সবাইকে প্রশিক্ষণ দিতে গেলে প্রায় পাঁচ বছর সময় লাগবে।
এয়ারবাসের বিক্রয় প্রস্তাবে অবশ্য দুই বছরের রক্ষণাবেক্ষণ প্রশিক্ষণের উল্লেখ আছে।
আবার এয়ারবাসের উড়োজাহাজগুলোর ইঞ্জিন হবে রোলস রয়েসের। অথচ, বিমানের বর্তমান বহরে কোনো রোলস রয়েস ইঞ্জিন নেই। সবগুলো বোয়িংয়ের ইঞ্জিন জেনারেল ইলেকট্রিক ও সিএফএম ইন্টারন্যাশনালের। আর ড্যাশ-৮ এর ইঞ্জিন প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনির।
ভবিষ্যতে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট পুনরায় চালুর ওপর এয়ারবাসের প্রস্তাবনা মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
১৯৯৩-২০০৬ পর্যন্ত নিউইয়র্কে ফ্লাইট পরিচালনা করেছিল বিমান। ২০০৬ সালে মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি একটি তদন্তে এই ফ্লাইটের কার্যক্রমে অনিয়ম খুঁজে পাওয়ার পর বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটিকে (বেবিচক) তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেয়। তারা জানায়, বেবিচক আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার মানদণ্ড মেনে চলে না।
বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মোমেন গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম বোয়িং উড়োজাহাজ চালু করেন। কীভাবে বাংলাদেশ বোয়িং-নির্ভর হয়ে ওঠে তা জানান তিনি।
তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি যখন ২০০৬ সালে বিমানে যোগ দেই, তখন বিমানের বিশাল ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়েই কোনোভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করি। তখন আমাদের ছিল চারটি ডিসি১০ যেগুলোতে প্রচুর জ্বালানি লাগত এবং প্রায়ই বসে থাকত, তিনটি ৩১০-৩০০ এয়ারবাস ছিল যার মধ্যে দুটি ছিল ড্রাই-লিজ (ক্রু ছাড়া লিজ), এবং একটি ভালো এফ২৮। বহরটি দায় হয়ে উঠেছিল।'
তিনি বলেন, 'তখন বোয়িং ও এয়ারবাস উভয়ই তাদের উড়োজাহাজ বিক্রির পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। বেশ কিছু প্রেজেন্টেশন ও আলোচনার পর বিমানের বোর্ড বোয়িং কেনার অনুমোদন দেয়। কিন্তু চুক্তি চূড়ান্ত করার আগে বাণিজ্যিক দিকগুলো আর্থিক খাতে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএকে দিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করা হয়।'
'ককপিট ক্রুদের বারবার প্রশিক্ষণ দিতে হবে জেনেও বিমান বোয়িং বেছে নেয়,' বলেন এম এ মোমেন।
বিমান এখন লাভজনক সংস্থা। গত অর্থবছরে ৪৩৯ কোটি টাকা লাভ করেছে, তার আগের বছর লাভ ছিল ১৫৮ কোটি টাকা।
সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোমেন বলেন, 'এটা ১৮ বছরের ফসল। কিন্তু ব্যবসার মূল নিয়ম একই। মিশ্র বহরের সুপারিশ সাধারণত তখনই করা হয়, যখন এয়ারলাইনসের আকার বড় হয়। আর তা না হলে, এটি সাশ্রয়ী নয়। বিমানকে একটি বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, দাতব্য সংস্থা নয়। কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস করতে হবে। যদি ফলাফল স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক হয়, তবে মিশ্র বহরে যাওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই। আর যদি তা না হয়, তাহলে দয়া করে এয়ারলাইনসের ক্ষতি করবেন না।'
Comments