বিদেশি তহবিলের চেয়ে ব্যাংক ঋণের ওপর বেশি নির্ভর করবে সরকার
সরকার আগামী অর্থবছরে বিদেশি অর্থায়নের চেয়ে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীল হবে, যা অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়াবে।
ঋণ পরিশোধ ব্যয় বৃদ্ধি ও বিদেশি তহবিলের কম ব্যবহারের কারণে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে নিট বৈদেশিক অর্থায়ন ২৫ শতাংশ হ্রাস করা হচ্ছে।
ঋণ পরিশোধের ব্যয় বাদ দিয়ে নিট বৈদেশিক অর্থায়ন গণনা করা হয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট বিদেশি অর্থায়ন ১২ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চলতি অর্থবছরে নিট বিদেশি অর্থায়ন হিসেবে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১ লাখ ২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা, যা এখন কমিয়ে ৭৬ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা করা হবে।
আগামী অর্থবছরে এর পরিমাণ হবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
সংশোধিত বাজেটে ঋণ পরিশোধে বরাদ্দ ২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার করা হচ্ছে। যার মধ্যে আসল ও সুদ পরিশোধ ধরা হয়েছে। অবমূল্যায়নের কারণে টাকায় এই ব্যয় ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে ৪২ হাজার ২০০ কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে।
গত বছর যখন বাজেট পেশ করা হয় তখন প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৯ টাকা ৪৬ পয়সা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
যদিও গত ৮ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের বিনিময় হার নির্ধারণে ১১৭ টাকা দর বেঁধে দিয়েছে।
তবে বাংলাদেশকে আসলে বিদেশি মুদ্রায় কত পরিশোধ করতে হবে তা শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে পরিশোধের সময় বিনিময় হারের ওপর।
আজ যে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করা হবে, তাতে ঋণ পরিশোধে ব্যয় ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার বা ৫৭ হাজার কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি।
ঋণ পরিসেবা ব্যয় বাড়ছে এবং বিদেশি তহবিল পুরোপুরি ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে নিট বিদেশি অর্থায়ন কমেছে।
চলতি বছরের বাজেটে সরকার বৈদেশিক অর্থায়ন হিসেবে ১৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখলেও পরে তা সংশোধন করে ৯ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার মূল বাজেটে বাজেট সহায়তা হিসাবে রাখা হয়েছিল এবং এটি এখন সংশোধন করে ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার করা হতে পারে।
নতুন বাজেটে বৈদেশিক অর্থায়ন হিসেবে ১২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার এবং এর মধ্যে ৩ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে রাখা হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সরকার বেশিরভাগ বছরেই বরাদ্দকৃত বিদেশি তহবিলের সর্ম্পূণ অর্থ ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়। নিট বৈদেশিক অর্থায়ন কমে যাওয়ার পেছনে কম ব্যয়ের সক্ষমতা আরেকটি কারণ বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
গত এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ৪৬ বিলিয়ন ডলারের অব্যবহৃত বৈদেশিক অর্থায়ন পাইপলাইনে ছিল।
গত মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বিদেশি অর্থায়নে প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেন।
তবে বৈদেশিক তহবিলের ব্যবহার কমলেও ব্যাংক ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আগামী অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি অর্থায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হবে ব্যাংক থেকে যা ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এমনকি সংশোধিত বাজেটেও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল সেটি ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকায় দাঁড়াদে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার ব্যাংক ঋণ বাড়ালে বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমে যায়।
'এটি মূল্যস্ফীতিকে প্রভাবিত করে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি করে।'
Comments